সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বারবার তিনবার। এবার আর অঙ্ক মেলাতে পারলেন না তিনি। লোকসভা নির্বাচনের (Lok Sabha Election Result 2024) শেষ দফা ভোট চলাকালীনই নিজস্ব ‘এক্সিট পোল’ ঘোষণা করেছিলেন ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর (Prashant Kishore)। দাবি করেন, "বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ এবারের লোকসভা ভোটেও ‘ক্লিন সুইপ’ করবে (নিরঙ্কুশ জয় পাবে)। ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপি ৩০৩টি আসনে জিতেছিল। এবারও তাদের প্রাপ্ত আসন তার আশপাশেই থাকবে। এমনকী ৩০৩ ছাড়িয়েও যেতে পারে।" জনতার রায়ে প্রশান্তের সেই দাবির অনেক আগেই থমকাল বিজেপি। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল না তারা। কোনও রকমে ৩০০-র গণ্ডি ছুঁল এনডিএ জোট। কোথায় ভুল হল ভোটকুশলীর?
লোকসভা ভোটের প্রচারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দাবি করেছিলেন- 'অব কি বার ৪০০ পার'। ভোটের মাঝে পিকে জানান, ৪০০ আসনের প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারলেও শ’তিনেক আসন বিজেপি ঠিকই পাবে।। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমার হিসাব অনুযায়ী বিজেপি আগের বারের সমান আসন পেয়েই ক্ষমতায় ফিরছে। হয়তো সামান্য বেশি কিছু আসন পেতে পারে। পশ্চিম বা উত্তর ভারতে বিজেপির আসন সংখ্যায় খুব বেশি হেরফের হবে বলে মনে হয় না। তাছাড়া পূর্ব এবং দক্ষিণ ভারতে এবার গেরুয়া শিবির বাড়তি সমর্থন পাচ্ছে।” পিকের দাবি ছিল, তেলেঙ্গানা, অন্ধ্র, কেরল এবং তামিলনাড়ুতে বিজেপি নিজেদের উপস্থিতি এবার প্রবলভাবে জানান দিচ্ছে গেরুয়া শিবির। এমন পূর্বাভাসের কারণ কী? পিকের জবাব ছিল, "মোদি সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের প্রচণ্ড ক্ষোভ রয়েছে, এমন কথা দেশের কোনও প্রান্ত থেকেই শুনিনি।"
[আরও পড়ুন: রামমন্দির বা পিওকে দখলের ‘গ্যারান্টি’, তবু কেন অস্তমিত মোদি-সূর্য?]
অথচ দিন কয়েক আগেই প্রশান্ত কিশোর বলেছিলেন, এক দশকে প্রথমবার বড়সড় চ্যালেঞ্জের মুখে ‘ব্র্যান্ড মোদি’। স্রেফ প্রধানমন্ত্রীর মুখ দেখে আর ভোট দিচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। বরং সরকারের বিরুদ্ধে চরম অসন্তোষ রয়েছে। বাস্তবে পিকের এই কথাই প্রমাণিত হল। মাঝখানে বিভ্রান্ত করেছিল ভোটপণ্ডিতদের 'এক্সিট পোল'। অধিকাংশ সংস্থার সমীক্ষা এনডিএকে তিনশোর বেশি আসনে জিতিয়েছিল। পিকে অবশ্য এর বিরোধিতা করেন। এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে পোস্ট করেন, "পরের বার যখন নির্বাচন সংক্রান্ত আলোচনা এবং রাজনীতির আলোচনা হবে, তখন অকার্যকর কথাবার্তা, ভুয়ো সাংবাদিক, নিজের ঢাক নিজে পেটানো রাজনীতিবিদ এবং সমাজমাধ্যমে স্বঘোষিত ভোটপণ্ডিতদের বিশ্লেষণে আপনাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করবেন না।"
[আরও পড়ুন: ভাঙল না মিথ, গণনার মাঝেই হার স্বীকার বিজেপি প্রার্থীর, রায়বরেলিতে জয় গান্ধীদের তৃতীয় প্রজন্মের]
অল্প সময়ের ব্যবধানে দুরকম মন্তব্য করা প্রশান্ত কিশোরের 'এক্সিট পোল' নিয়েও কী আর ভাববে জনতা? মনে হয় না। অন্যতম কারণ, রাজনীতি সচেতন আজকের ভারতের নাগরিক অনুভব করেছে, সব এক্সিট পোলেরই উদ্দেশ্য থাকে। অবশ্য গণনায় ভুল হতেই পারে। কেউ অন্তর্যামী নয়। হয়তো মেরুকরণের রাজনীতি আর 'বিক্রি' হচ্ছে না। পিকের তৈরি করা 'মোদি ব্র্যান্ড', তাও কি ফিকে হচ্ছে? কেবলমাত্র লার্জার দ্যান লাইফ ভাবমূর্তি তথা 'ব্র্যান্ড' হিসেবে রাজনৈতিক নেতাকে দেখতে চাইছে না আমজনতা। বেকারত্ব, শিক্ষা, স্বাস্থ্যের মতো প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে মানুষ। তাছাড়া প্রকৃত ফলাফল তো লুকিয়ে থাকে ইভিএমের অন্তরে। গণনার পরেই প্রকাশ্যে আসে। যেমন এবার, মাথার উপর রামলালার আশীর্বাদ থাকা সত্বেও একা ৩০০ পার করতে পারল না বিজেপি। অঙ্ক মেলাতে পারলেন না ভোটকুশলী।