সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বাংলায় তৃণমূল এবং কংগ্রেসের জোট হচ্ছে না। ইতিমধ্যেই সেটা কমবেশি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, বাংলার সব আসনে একাই লড়বে তাঁর দল। কংগ্রেসের সঙ্গে জোট চেয়েছিল তৃণমূল, কিন্তু সিপিএমের প্ররোচনায় সেটা ভেস্তে গিয়েছে। এখন যা পরিস্থিতি তাতে মমতার আসন্ন দিল্লি সফরে কোনও ‘বিপ্লব’ না ঘটে গেলে তাতে রাজ্যে তৃণমূল এবং কংগ্রেসের জোট হবে না। সে তুলনায় বরং বাম-কংগ্রেস ‘নৈকট্যে’র সম্ভাবনা অনেক উজ্বল।
রাহুল গান্ধীর ‘ভারত ন্যায় যাত্রা’য় তৃণমূলের কেউ না গেলেও সিপিএমের দুই শীর্ষ নেতা সুজন চক্রবর্তী এবং মহম্মদ সেলিম গিয়েছিলেন। রীতিমতো মাখো মাখো হয়ে রাহুলের সঙ্গে ছবিও তুলেছেন তাঁরা। সূত্রের দাবি, প্রদেশ কংগ্রেস এবং সিপিএম দুই শিবিরই রাজ্যে জোট করতে আগ্রহী। কংগ্রেস হাইকম্যান্ড সবুজ সংকেত দিলেই আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা শুরু হবে। সেই ২০১৬ সাল থেকেই জোট নিয়ে লুকোচুরি খেলছে বাম ও কংগ্রেস। কখনও আসন সমঝোতা, কখনও জোট, কখনও ঘনিষ্ঠতা, কখনও বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই। সেই লুকোচুরির এই পর্বে এসে ফের জোট গঠনের চেষ্টায় দুই শিবির।
[আরও পড়ুন: ফের ‘বঞ্চিত’ বাংলা, রেল বাজেটে রাজ্যের প্রাপ্তি নামমাত্রই]
এখন প্রশ্ন হল, যদি সত্যিই বাম-কংগ্রেস জোট বেঁধে লড়াই করে, সেক্ষেত্রে বঙ্গ রাজনীতির গতিপ্রকৃতি কী হবে? রাজনীতির কারবারীদের প্রাথমিক ধারণা, বাম এবং কংগ্রেস শিবির আলাদা করে জোট হিসাবে লড়লে ধাক্কা খাবে শাসকদল তৃণমূল। যদিও শাসকদলের অন্দরের খবর, কংগ্রেস এবং বামেদের সম্ভাব্য জোট বা বিজেপির প্রতিরোধ, কোনও কিছু নিয়েই শাসক শিবির বিশেষ চিন্তিত নয়। তৃণমূলের একটা অংশ মনে করছে, বাম এবং কংগ্রেস জোট বেঁধে লড়লে আখেরে শাসক দলের লাভই হবে। আসলে নিচুতলার কংগ্রেস কর্মীদের মধ্যে তৃণমূলের প্রতি যে একটা বিদ্বেষ রয়েছে, সেটা অস্বীকার করার জায়গা নেই। কংগ্রেস এবং তৃণমূল জোট করে লড়লে কংগ্রেসের নিচুতলার কর্মী সমর্থকদের একটা বড় অংশের বিজেপিতে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। তাতে জোটের চেয়ে বেশি লাভবান হত বিজেপি। বাম-কংগ্রেস জোট হলে দুই শিবিরের ভোটাররা অন্তত বিজেপিতে চলে যাবেন না, সেটুকু বলা যায়। উলটে জোট হলে বিজেপিতে চলে যাওয়া বাম ভোটের কিছুটা ওই জোটকে সমর্থন করতে পারেন। সেক্ষেত্রে ধাক্কা খাবে বিজেপি।
রাজ্যে কংগ্রেসের অস্তিত্ব শুধু কয়েকটি বিচ্ছিন্ন পকেটে। ওই এলাকাগুলির বাইরে ভোটের ফলকে প্রভাবিত করার মতো ক্ষমতা হাত শিবিরের নেই। তাছাড়া কংগ্রেস (Congress) এবং সিপিএম (CPIM) সেই ২০১৬ সাল থেকে জোট জোট খেলছে। সেই জোট এ পর্যন্ত শাসক শিবিরের ভোটব্যাঙ্কে প্রভাব ফেলতে পারেনি। বরং গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে দেখা গিয়েছে, বাম-কংগ্রেস জোট শিবির আসলে ভাগ বসিয়েছে বিজেপির ভোটব্যাঙ্কে। বস্তুত ২০২৩ পঞ্চায়েত নির্বাচনে বাম-কংগ্রেস এবং আইএসএফ (ISF) মিলিয়ে ২০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছে। বলতে গেলে রাজ্যের তৃণমূল বিরোধী ভোটব্যাঙ্ককে আড়াআড়ি ভেঙে দিয়েছিল এই বাম-কংগ্রেস জোট। ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে যদি সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়, তাহলে আখেরে বিরোধী ভোট ভাগে লাভ হবে তৃণমূলেরই। সেক্ষেত্রেও ধাক্কা খাবে বিজেপি।
[আরও পড়ুন: টানাপোড়েনে ইতি, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ চম্পাই সোরেনের]
বাম-কংগ্রেস জোট হলে তৃণমূলের যেটা সবচেয়ে বড় আশঙ্কার জায়গা, সেটা হল সংখ্যালঘু ভোট ভাগ হওয়ার আশঙ্কা। কিন্তু শাসকদলের ধারণা, রাজ্যের সংখ্যালঘু ভোটাররা ভালোমতোই জানেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই একমাত্র পারেন বিজেপিকে রুখে দিতে। তাই লোকসভার মতো গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে সংখ্যালঘুরা বিজেপির সেরা বিকল্প হিসাবে তৃণমূলকেই বেছে নেবেন। পঞ্চায়েত নির্বাচনে সংখ্যালঘু ভোটারদের একটা অংশ কংগ্রেস এবং বামেদের সমর্থন করলেও, লোকসভায় সেটার পুনরাবৃত্তি হবে না। তাছাড়া ইন্ডিয়া জোট ভাঙার দায় কৌশলে কংগ্রেসের উপর চাপাতে পারলেই শাসকদল একচেটিয়া সংখ্যালঘুদের সমর্থন পেয়ে যাবে, আশা তৃণমূলের। সব মিলিয়ে শাসকদলের অঙ্ক, বাম-কংগ্রেস জোট হলে তৃণমূলের থেকেও বেশি ধাক্কা খাবে বিজেপি। যেমনটা হয়েছিল ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে।