রমেন দাস: যাদবপুর কেন্দ্রে লোকসভায় তৃণমূল প্রার্থী যুবনেত্রী সায়নী ঘোষ (Saayoni Ghosh)। একুশের বিধানসভা ভোটে আসানসোলে মাটি কামড়ে পড়ে ছিলেন সায়নী ঘোষ। প্রচারের ময়দানে অভিনেত্রীর ‘স্ট্রিট স্মার্ট’ কেতাদুরস্ত নেত্রীসুলভ আচরণ কারও নজর এড়ায়নি। বিধানসভায় পরাস্ত হলেও দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচিতে অভিনেত্রী কিন্তু রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ছুটে বেরিয়েছেন। আর সেই প্রেক্ষিতেই যুবনেত্রীর মতো গুরুদায়িত্ব তাঁর হাতে সঁপে দিয়েছিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। এবার যাদবপুরের (Jadavpur) মতো ‘হেভিওয়েট’ কেন্দ্রে তৃণমূলের তুরুপের তাস সায়নী। কী বলছেন আসন্ন নির্বাচনী লড়াই নিয়ে?
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সায়নী ঘোষের মন্তব্য, “যাদবপুর কঠিন আসন নয়। সম্মানের আসন।” সংশ্লিষ্ট কেন্দ্র থেকেই গত লোকসভা নির্বাচনে রেকর্ড মার্জিনে জিতে তৃণমূল সাংসদ হয়েছিলেন মিমি চক্রবর্তী (Mimi Chakraborty)। তবে এবার রাজনীতিতে বাণপ্রস্থ ঘোষণা করায় তৃণমূলের তরফে প্রার্থী হয়েছেন সায়নী ঘোষ। যাদবপুর আসন জিততে আবারও তারকামুখেই ভরসা রেখেছে তৃণমূল। তবে গ্ল্যামার ইন্ডাস্ট্রির থেকেও সায়নী যে এখন অনেক বেশি মা-মাটি-মানুষের, সেটা রাজনৈতিক ময়দানে তাঁর দাপুটে বিচরণই বলে দেয়।
ইন্ডাস্ট্রির সহকর্মী তথা যাদবপুরের বিদায়ী সাংসদ মিমিকে নিয়ে কী বলছেন সায়নী? তাঁর মন্তব্য, “মিমি বলেছে, ও আর রাজনীতিতে কাজ করতে চায় না। মন দিয়ে অভিনয় করতে চায়। প্রার্থী ঘোষণা হওয়ার পর মিমি আমাকে মেসেজ করেছে। শুভেচ্ছাও জানিয়েছে। মিমি আমাকে বলেছে- আমি জানি তুমি অনেক বেশি সময় দেবে। ভালো কাজ করবে। আমিও ওঁকে জিজ্ঞেস করেছি- তুমি কী কাজ করেছ, আর কী কী বাকি রয়েছে, সেটা আমাকে জানিও।” অতঃপর দুই অভিনেত্রী যে যৌথভাবে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের আরও উন্নয়নের পথে হাঁটবেন, সেই ইঙ্গিত মিলল সায়নীর কথায়।
[আরও পড়ুন: লোকসভার প্রার্থী হচ্ছেন রুদ্রনীল ঘোষ! দ্বিতীয় লিস্ট বেরনোর আগেই মুখ খুললেন অভিনেতা]
মাস দুয়েক আগে মাকে হারিয়েছেন সায়নী ঘোষ। গত বিধানসভা ভোটের সময়ে অভিনেত্রী জানিয়েছিলেন, মা তাঁর বড় সাপোর্ট সিস্টেম। কিন্তু এবার লোকসভার প্রার্থী তিনি। আরও বড় পরিসরে তাঁর লড়াই। ময়দানে আদা-জল খেয়ে নামার আগেও মাকেই স্মরণ করলেন সায়নী ঘোষ। তাঁর কথায়, “মা বলেছিলেন মানুষের সেবা করতে। মা আইসিডিএস-এর সুপার ভাইজার ছিলেন। সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে গিয়ে কাজ করতেন। মা বলেছিলেন, মমতাদিকে ছাড়বে না কোনওদিন! আমি চাই না, লোকে বলুক, মা চলে যাওয়ার পর সায়নী শেষ হয়ে গেল! আমি চাই লোকে বলুক, সায়নীর শুরু হল। তিন বছর আমার ব্যক্তিগত জীবন বলে কিছু নেই।” মাকে হারানোর পর ‘একাকীত্ব’ কাটাতে আরও বেশি করে রাজনীতিতে সময় বেশি দিচ্ছেন সায়নী। যুবনেত্রী তথা তারকা প্রার্থী বললেন, ”মা-ই এটা চাইতেন। মায়ের থেকেই এগুলো শেখা। আমি খুব ফোকাসড ওয়েতে কাজ করতে চাই।”
রাজনৈতিক ময়দানে পা রেখে বিরোধী শিবির বিজেপির তরফে ‘হেনস্তা’ হওয়ার কথাও বললেন সায়নী। তিনি বলেন, ”ত্রিপুরায় বিজেপির গুন্ডারা এসে বলেছিল সায়নীকে বের করো, ওর মুখে অ্যাসিড মারব। খেলা হবে স্লোগান বলে জেল খেটেছি। আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। সায়নী বাংলার মেয়ে বলে ভয় পায় না। আমরা অসুরকে ভয় পাই না। এটা মা দুর্গার মাটি। মা কালীর মাটি। আমি এমন কিছু করি না, যে ভয় পাব,” সাফ কথা নেত্রী-অভিনেত্রীর মুখে।
[আরও পড়ুন: লোকসভা ভোটের প্রার্থী হতেই ‘দিদি নম্বর ১’ ছাড়ছেন? মুখ খুললেন রচনা]
লোকসভা ভোটের প্রার্থীপদ পেতেই আবারও ভাইরাল সায়নী ঘোষের পুরনো বিতর্কিত টুইট। সেই প্রেক্ষিতে কথা বলতে গিয়ে বিজেপির উদ্দেশে খানিক বিদ্রুপের সুরেই সায়নী ঘোষ বললেন, “২০১৫ সালের টুইট। বিজেপির এমন অবস্থা ৯ বছর ধরে আমার বিরুদ্ধে কিছু নতুন বের করতে পারে না। মোদি ক্ষমতায় আসার পর যা করেছেন, বইয়ে লেখা হয়ে গিয়েছে। সায়নীর টুইটের জন্য কতজন মারা গিয়েছেন? কয়টা দাঙ্গা বেঁধেছে? দেশের প্রধানমন্ত্রীর জন্য বেঁধেছে! সায়নী এমন কী বলেছে, যে মানুষ মরেছে!”