সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নরেন্দ্র মোদি সাংসদ হওয়ার পর বারাণসী শহরের খোলনলচে বদলে গিয়েছে। আমূল বদলে গিয়েছে কাশী বিশ্বনাথ ধামের জীবনযাত্রা। অথচ বারাণসী থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে ভাদোহী জেলার চেহারাটা সম্পূর্ণ উলটো। এখনও দেশের অন্যতম পিছিয়ে পড়া জেলা এই ভাদোহী। সেখান থেকেই লড়ছেন তৃণমূল প্রার্থী ললিতেশপতি ত্রিপাঠী (Laliteshpati Tripathi)।
উত্তরপ্রদেশের ৮০টি আসনের মধ্যে অখিলেশ যাদবের কাছে একটি আসন চেয়েছিলেন মমতা। ভাদোহী আসনটি তৃণমূলকে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন অখিলেশ। ওই কেন্দ্রেই তৃণমূল (TMC) নেত্রী প্রার্থী করেন দলের নেতা ললিতেশপতি ত্রিপাঠীকে। এই ললিতেশপতি ত্রিপাঠী বছর তিনেক আগে কংগ্রেস থেকে যোগ দেন তৃণমূলে। কংগ্রেসের প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি কমলাপতি ত্রিপাঠীর উত্তরসূরি ললিতেশপতি। তাঁর পরিবারের তিন প্রজন্ম কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত ছিল। অর্থাৎ ললিতেশপতিদের রাজনৈতিক ভিত্তি সেরাজ্যে আছে।
[আরও পড়ুন: গণতন্ত্রের উৎসবে শামিল বিদেশমন্ত্রী জয়শংকর, ভোট দিয়ে পেলেন বিশেষ সার্টিফিকেট, কেন?]
ললিতেশ গত তিন বছরে নীরবে সংগঠনের শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন। যদিও তাঁদের 'হোমটাউন' ভাদোহী নয়। ভাদোহীতে পুরোটাই নতুন করে করতে হয়েছে। আর এই লড়াইয়ে এ রাজ্যের শাসকদল যেমন সাহায্য করছে, তেমনি পাশে দাঁড়িয়েছেন অখিলেশ যাদব। তৃণমূল প্রার্থীকে জেতাতে জানপ্রাণ লড়িয়ে দিয়েছেন সপা সুপ্রিমো। এরাজ্যে থেকে বড় কোনও নেতা ললিতেশের হয়ে ভোট(Lok Sabha Vote 2024) চাইতে না গেলেও অখিলেশ নিজে তৃণমূল প্রার্থীর হয়ে প্রচার করেছেন। প্রচার করেছেন কংগ্রেসের প্রদেশ সভাপতি অজয় রাইও। শুধু অখিলেশ নন, কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টির (Samajwadi Party) স্থানীয় নেতারাও পূর্ণশক্তি দিয়ে লড়েছেন ললিতেশের হয়ে।
[আরও পড়ুন: ‘লোকে পাগল বলে বলুক’, ‘পরমাত্মা’ মন্তব্যে অনড় মোদি]
উত্তরপ্রদেশে 'দিদি'র এই সৈনিকের লড়াই বিজেপির বিনোদ কুমার বিন্দ এবং বিএসপির হরকিষণ সিং চৌহানের বিরুদ্ধে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে ভাদোহীর লড়াইয়ে জাতিগত সমীকরণ কাজ করছে তৃণমূল প্রার্থীর পক্ষেই। এমনিতে ভাদোহী ছোট্ট জেলা। বিধানসভা পাঁচটি। এই এলাকায় মুসলিম ভোটার আড়াই লক্ষ। ব্রাহ্মণ ভোটার ৩ লক্ষ ১৫ হাজার মতো। ললিতেশদের পরিবার বরাবর ব্রাহ্মণদের সমর্থন পেয়ে থাকে। সেই সঙ্গে রয়েছেন মুসলিমরা। আর একটা শ্রেণির সমর্থন পেতে পারেন তিনি। সেটা হল মাল্লা ভোটার। এই এলাকায় মাল্লা ভোট রয়েছে ২.৯০ লক্ষ। পাশের কেন্দ্র মির্জাপুরে সমাজবাদী পার্টির প্রার্থী রমেশ চাঁদ মাল্লা সমাজের। তিনি প্রচুর সভা করেছেন ললিতেশের হয়ে।
সেভাবে বলতে গেলে ললিতেশ তৃণমূলের (TMC) প্রার্থী হলেও তাঁর হয়ে লড়েছে সমাজবাদী পার্টি এবং কংগ্রেস। শনিবার ভোটের দিনও সমাজবাদী পার্টি এবং কংগ্রেসের (Congress) কর্মীরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বুথ ম্যানেজমেন্ট করেছেন। মুসলিম এলাকায় বেশ ভালো ভোট পড়েছে। ভালো ভোট পড়েছে মাল্লা এলাকাতেও। অনেকে বলছেন, জোড়াফুলের বদলে যদি সাইকেল বা হাত প্রতীকে তিনি লড়তেন, তাহলে হয়তো লড়াইটা সহজ হত। ললিতেশের মূল চ্যালেঞ্জই হল, এলাকার মানুষকে নিজের প্রতীক চেনানো। কিন্তু ললিতেশ নিজে বলছেন, "আমি মনে করি মমতা দিদি মুলায়ম সিং যাদবজির বোনের মতো। দিদি আমাকে প্রেরণা দেন।" প্রতীক চেনানো যে চ্যালেঞ্জের, সেটা জানেন অখিলেশও। সেকারণেই তিনি ভোটের আগে ভোটারদের বলে গিয়েছিলেন, "আপনারা ভোট দিতে যান সাইকেলে চেপে। কিন্তু ভোটটা যেন জোড়া ঘাসফুলে পড়ে। মনে রাখবেন আমাদের প্রার্থী তৃণমূলের।"