সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সর্বক্ষণ হাতের কাছে আলো-পাখা, মোবাইলের চার্জার আর গরম জলের আরামে যদি অভ্যস্ত না থাকেন, তাহলে আপনি এক দারুণ সাম্রাজ্যের অধিকারী হতেই পারেন। আজগুবি কথা বলে মনে হচ্ছে? তাহলে হেঁয়ালি ছেড়ে বিস্তারিতই বলা যাক। আয়ারল্যান্ডের পশ্চিমাংশে ১১০০ একরের একটি দ্বীপ – গ্রেট ব্ল্যাসকেট। ছবির মতো সুন্দর, অথচ পরিত্যক্ত। ফিরে তাকানোরও কেউ নেই। এমন সুন্দর জায়গা স্রেফ বসতির অভাবে নষ্ট হয়ে যাবে, তা মানতে পারছে না আইরিশ প্রশাসন। রীতিমতো বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রশাসনিক কর্তারা এই দ্বীপের জন্য রক্ষী এবং স্থায়ী বাসিন্দা চাইলেন। আরও বিস্ময়ের বিষয়, বিজ্ঞপ্তিতে সাড়া দিয়ে ১০ দিনেই জমা পড়ে গিয়েছে ৭ হাজার আবেদনপত্র!
ইউরোপে আটলান্টিকের পাড় দিয়ে যেতে যেতে আয়ারল্যান্ডের পশ্চিমে চোখে পড়বে একটি দ্বীপ। ঘন আকাশি গগনগাত্রে সূর্যের হলদেটে আলোর ছটা আর আটলান্টিক সাগরের নীল জলের বুকে সবুজ দ্বীপের ছায়া মিলেমিশে সে এক অপূর্ব দৃশ্য! তবে এত সৌন্দর্য নিয়েও সে বড় একাকী। মানুষের হৃদস্পন্দন নেই, শব্দের প্রতিধ্বনি নেই, পদচারণা নেই। কেমন যেন নিঃসঙ্গ, নিঝুম পরিবেশ। এখন এই দ্বীপকে প্রাণবন্ত করে তুলতে প্রশাসনের চেষ্টার ত্রুটি নেই। গ্রীষ্মে দ্বীপটিকে দেখভালের জন্য তারা এক দম্পতিকে চাইছে। সেই মর্মে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। এপ্রিল থেকে অক্টোবর, গ্রীষ্মের এই ছ’মাস ওই কেয়ারটেকারদের থাকা এবং খাওয়ার ব্যবস্থা করবে প্রশাসন। কাজ শুধু গ্রেট ব্ল্যাসকেট দ্বীপে থেকে তার একটু যত্ন করা।
[আরও পড়ুন: আমেরিকায় জন্ম নিল সবুজ রঙের কুকুর, হতবাক নেটদুনিয়া]
১১০০ একরের মালিক যদি কেউ হতে চান, তাও হতে পারেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, প্রযুক্তি নির্ভর জীবনযাপন এখানে পাবেন না। বিদ্যুৎ নেই, স্নান বা কাজকর্মের জন্য সারাক্ষণ গরম জল পাবেন না, চটজলদি মোবাইলের চার্জ করার উপায়ও নেই। তবে এসব ছাড়াই থাকতে হবে, তেমনটাও নয়। প্রশাসন বলছে, আটলান্টিকের ফুরফুরে হাওয়া আর মাঝেমধ্যেই ঝিরঝিরে বৃষ্টির ধারাকে কাজে লাগিয়ে টারবাইনের সাহায্যে বিদ্যুৎ তৈরি করে নেওয়া খুব একটা কঠিন কাজ নয়। তাতেই আপনার বাসভবনে আলো পাবেন, মোবাইল চার্জও করতে পারবেন।
গ্রীষ্মে ইউরোপ ঘুরতে গেলে আটলান্টিকের বুকে নৌভ্রমণে আয়ারল্যান্ডের এই দ্বীপের কাছ পর্যন্ত পৌঁছনো যায়। অনেকে সেভাবেই দেখে আসেন গ্রেট ব্ল্যাসকেটের রূপ। ২০১৯ সালে অবশ্য এক বছরের জন্য দ্বীপে ছিলেন এক দম্পতি – লেসলি কেহো, গর্ডন বন্ড। ফিরে এসে তাঁরা নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন সোশ্যাল মিডিয়ার পাতায়। তাঁদের বক্তব্য, বাইরে থেকে দেখলে এই দ্বীপ সম্পর্কে কিছু ধারণাই করা যায় না। কত সুন্দর গ্রেট ব্ল্যাসকেট, তা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। প্রতিকূলতার কথাও জানিয়েছেন লেসলি। বলছেন, প্রথম দিকে গরম জল তৈরির জন্য বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল। বাধ্য হয়ে তখন ঠান্ডা জলেই সমস্ত কাজকর্ম করা অভ্যেস করতে হয়েছে।
[আরও পড়ুন: দীর্ঘ রাস্তা ভ্যানিলা-চকলেটে মাখা! দেখে আর চেখে তাজ্জব ত্রিশূরবাসী]
আর এই কারণেই প্রশাসনের কর্তারা সাফ জানিয়ে দিচ্ছেন, দ্বীপের সর্বক্ষণের রক্ষী হতে গেলে প্রতিযোগিতা কিন্তু বেশ কঠিন। সেখানকার সমস্ত প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে কে জিততে পারবে, তা বলা মুশকিল। তবে লেসলি-গর্ডনের পরামর্শ, দ্বীপটিকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে বিশ্বের দরবারে তাকে মুক্ত করে দিতে হবে। শিল্প গড়তে হবে। বাসস্থান গড়ে তুলতে হবে। তা নইলে একটা সময় দ্বীপটি চলে যাবে ইতিহাসের পাতায়।
The post আটলান্টিকের পাড়ে পরিত্যক্ত দ্বীপের মালিক হওয়ার দৌড়, জমা পড়ল ৭০০০ আবেদনপত্র! appeared first on Sangbad Pratidin.