দেব গোস্বামী, বোলপুর: 'পালকিতে বউ চলে যায়...।' পরিচিত এই গানের লাইনের বাস্তব ছবিটা তো কবেই উধাও হয়ে গিয়েছে। সেখানে আবার কিনা গরুর গাড়িতে নব দম্পতি! অবিশ্বাস্য হলেও সেই ছবি দেখা গেল বোলপুরের কাছে আলবাঁধা-সর্পলেহনা গ্রামে। ইতিমধ্যে সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে গরুর গাড়ি ও বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন।
জানা গিয়েছে, গ্রামবাংলার পুরাতন প্রথা ধরে রাখতেই এমনই সিদ্ধান্ত নেন নব দম্পতি। বোলপুরের আলবাঁধা-সর্পলেহনা গ্রাম পঞ্চায়েতের রতনপুর গ্রামের বাসিন্দা রাখি দাস ও গোবিন্দাবালা গ্রামের মঙ্গল ভাণ্ডারী বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। দুজনের বাড়ির দূরত্ব মাত্র দুকিলোমিটার। তবে বর্তমানে শহর সংলগ্ন গ্রাম আর গঞ্জ নেই। ফিরেছে শহুরে সংস্কৃতি। বিয়ের অনুষ্ঠানে কখনও কখনও দেখা যায় কেউ বিয়ে করতে যাচ্ছেন পুরনো দিনের পালকিতে চড়ে। কেউ আবার রাজাদের মতো ঘোড়ার গাড়ি চড়েন। এগুলো তখনই সম্ভব যখন শ্বশুরবাড়ির কাছাকাছি হয়ে থাকে। এছাড়াও বিয়ের সাজে, খাবারের মেনু-সহ আনুষাঙ্গিক আয়োজনে অভিনবত্ব থাকে।
তবে গরুর গাড়িতে করে বউ নিয়ে বাড়ি ফেরার দৃশ্য নতুনত্ব যোগ করেছে। গরুর গাড়ি, লাঙলের বদলে আজকাল ব্যবহার হয় ট্রাক্টর, ধান কাটা, ধান ঝড়ানোর অত্যাধুনিক সব যন্ত্রপাতি। বিয়ে বাড়ি মানেই বরযাত্রী হোক, কিংবা কনেযাত্রী। সবতেই ফুল দিয়ে সাজানো দামি চারচাকা গাড়িতেই যাতায়াত দেখে অভ্যস্ত সকলে। কিন্তু গ্রামবাংলার প্রাচীন রীতি রেওয়াজ ধরে রাখতে নববধূকে নিয়ে গরুর গাড়ি করেই বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নেন বর৷ বরের সিদ্ধান্তে আপ্লুত নববধূও। এনিয়ে মঙ্গল ভাণ্ডারী জানান, ‘‘অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল সুসজ্জিত গাড়ি নয়। গরুর গাড়ি করে বউ নিয়ে বাড়ি ফিরব। সেই মতো আমি বাড়ির সকলকে আমার মতামত জানাই। মেয়ের বাড়িরও সকলের সম্মতিতে রাজি হয়ে যায়৷ আমরা চাই গ্রাম বাংলা সেই রীতি বজায় থাকুক৷’’
নববধূ রাখি দাস জানান, ‘‘আমার জীবনে নতুন পাওনা৷ এইভাবে আমি বরের বাড়ি কোনওদিন যাব ভাবতেও পারিনি। আমরা আমাদের সংস্কৃতি ভুলে যাচ্ছি। সেগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে হারিয়ে যাওয়া মাধ্যমগুলো তুলে ধরতেই গরুর গাড়ি করে শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার অভিজ্ঞতা একেবারেই অভিনব।’’ গ্রাম বাংলার শিকড়ের এমন আয়োজন আর উৎসব দেখতে ভিড় করেন গ্রামের আট থেকে আশি সকলে। রাস্তায় এমন দৃশ্য দেখতে যেন ঢল নামে মানুষের। সবার চোখে মুখে ছিল উৎসবের আমেজ। এমন অভিনব বিয়ের অনুষ্ঠান ঘিরেই আনন্দিত সকলেই।