বোরিয়া মজুমদার: লখনউ সুপার জায়ান্টসের এক নম্বর রিটেনশন তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিধ্বংসী ব্যাটার নিকোলাস পুরানকে বিশাল ২১ কোটি টাকা দিয়ে রিটেন করেছে লখনউ। সেই পুরান কলকাতার আরপিএসজি হাউসে বসে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন শাশ্বত গোয়েঙ্কাও। যিনি আবার নিলাম-নীতি নিয়েও বললেন।
প্রশ্ন: নিকোলাস, ২১ কোটি টাকা দিয়ে আপনাকে রিটেন করল লখনউ সুপার জায়ান্টস। অর্থের দিক থেকে দেখতে গেলে যা প্রচুর। দু’টো প্রশ্ন। লখনউয়ের পয়লা নম্বর রিটেনশন হয়ে লাগছে কেমন? দ্বিতীয়ত, এই অর্থের অঙ্ক চাপ বাড়াবে না?
পুরান: লখনউয়ের সবচেয়ে ভালো দিকটা কী জানেন? ফ্র্যাঞ্চাইজি আমার উপর কখনও চাপ দেয় না। দেখুন, আপনাকে যখন প্রচুর অর্থ দেওয়া হয়, তখন খুব স্বাভাবিকভাবে আপনার উপর চাপ থাকবে। বাইরের চাপ যত না থাকবে, তার চেয়ে ভেতরের চাপ থাকবে বেশি। কারণ, সেই অর্থ আপনাকে জাস্টিফাই করতে হবে। বোঝাতে হবে, সেই অঙ্কের আপনি যোগ্য। টিমের প্রয়োজনে পারফর্ম করতে হবে। তফাত গড়ে দিতে হবে। আর আপনার কাজ হল, সেটাকে উপভোগ করা। আমি সব সময় বিশ্বের সেরা টি-টোয়েন্টি ব্যাটার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছি। টিমের জন্য তফাত গড়তে চেয়েছি। আমার যা প্রতিভা, তার প্রতি বিচার করতে চেয়েছি। দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হওয়ার পর আমি বুঝেছি, জীবনে পিছিয়ে পড়ার অনুভূতি কেমন। তাই আমার সামনে যা সুযোগই আসে, সেটাকে কাজে লাগাতে চাই আমি। তাই কাজের সঙ্গে সঙ্গে যে চাপটা আসে, সেটাকে ম্যানেজ করতে আমি শিখে গিয়েছি।
প্রশ্ন: নিকোলাস, প্রথম বল থেকে বড় শট নেওয়া সহজ নয়। কিন্তু আপনি সে কাজটা বছরের পর বছর ধরে করে আসছেন। এই ধারাবাহিকতা আপনি রাখেন কী করে? আর অমন বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের সময় বোলারের মুখ আপনার মনে পড়ে?
পুরান: আমি যখন পরপর ছয় মারতে শুরু করি, বোলারের মুখে ভয়ের ছাপ দেখতে পাই। একজন ব্যাটার হিসেবে, সেই ভয়টা বোলারের মুখে আমি দেখতেও চাই! তবে হ্যাঁ, নেমেই প্রথম বলে ছয় মারা কিংবা দু’শো স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করে যাওয়া সহজ কাজ নয়। কিন্তু দেখতে গেলে, সে কাজের জন্যই তো আপনাকে রাখা হয়েছে। সেটাই ক্ষমতা আপনার। তাই নিজের সেই ক্ষমতাকে ক্রমশ নিখুঁত করতে হবে। নিজের উন্নত ভার্সনকে বিশ্বের সামনে পেশ করতে হবে। আমি জানি যে, সব সময় সব কিছু আমার পক্ষে যাবে না। কখনও কখনও সময় খারাপ যাবে। আর সেই কারণেই যে ক’টা সুযোগ পাওয়া যায়, তার যথাসম্ভব সদ্ব্যবহার করা দরকার। লখনউয়ের হয়ে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আইপিএল জিততে চাই আমি। আর সেটাই আমার লক্ষ্য।
প্রশ্ন: আপনি তো শুনেছি বলিউড গান আর হিন্দির খুব ভক্ত। দু’একটা লাইন গেয়ে শোনান না।
পুরান: আমার পরের ইন্টারভিউটা হিন্দিতে করবেন প্লিজ! আর গান? পাঁচ মিনিট রুক যাইয়ে (পরিষ্কার হিন্দিতে বলে একখানা গানও শুনিয়ে দিলেন, আর সে গান বেশ ভালো)! বলিউডকে আমি সত্যি ভালোবাসি। ভারতীয় খাবারদাবারও আমার প্রবল প্রিয়। রবি বিষ্ণোই আমাকে প্রচুর ভারতীয় খাবারদাবারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে।
প্রশ্ন: কলকাতার মিষ্টি কখনও খেয়ে দেখেছেন?
পুরান: প্রচণ্ড মিষ্টি যে! খেলে মেদ জমে যাবে।
প্রশ্ন: শেষ প্রশ্ন। তবে শাশ্বত, আপনাকে। পুরানকে বিশাল ২১ কোটি টাকা দিয়ে রিটেন করার কারণটা একটু বলবেন?
শাশ্বত: কারণ, এই মুহূর্তে পুরান বিশ্বের অন্যতম সেরা টি-টোয়েন্টি ব্যাটার। সবচেয়ে বিধ্বংসীও। ওর স্ট্রাইক রেট দেখলেই সেটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। যে প্লেয়ার ১৯০ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করতে পারে, সে তো স্পেশাল প্লেয়ার বটেই। গত বছর আরসিবি-র বিরুদ্ধে পুরান তিনশো স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করেছিল! কয়েক ওভারের মধ্যে খেলা সম্পূর্ণ বদলে দিতে পারে পুরান। নেমেই প্রথম বলে ছয় মারতে পারে। আধুনিক ক্রিকেটে ঠিক এটাই দরকার। আমাদের থিঙ্কট্যাঙ্ক, অর্থাৎ জাস্টিন ল্যাঙ্গার আর জাহির খান দু’জনেই এ কথাটা বলেছিল। তাই আমাদের পয়লা নম্বর রিটেনশন কে হবে, তা নিয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ ছিল না।