shono
Advertisement

নতুন প্রজন্মের স্পেন নিয়ে কাতারে সন্তানহারা এনরিকে

২০১৯ সালে মারণ কর্কট রোগের সঙ্গে যুদ্ধে হেরে গিয়েছিল এনরিকের একরত্তি মেয়ে হানা।
Posted: 12:57 PM Nov 15, 2022Updated: 01:16 PM Nov 15, 2022

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: লুই এনরিকেকে (Luis Enrique ) বাইরে থেকে দেখলে বোঝা যায় না, জীবনে এতটা ঝড়-ঝাপটা তাঁকে সামলাতে হয়েছে। স্পেন (Spain) কোচকে এক ঝলক দেখলে, কঠোর পেশাদার মনে হয় প্রবল। যিনি হাসি-ঠাট্টা করেন কম, কাজ করেন বেশি। এনরিকেকে দোষ দেওয়াও যায় না। যে অন্ধকার সময় তাঁকে দেখতে হয়েছে, তা কত জন এই পৃথিবীতে সামলাতে পারে সন্দেহ।

Advertisement

সন্তানের মৃত‌্যুশোক। ২০১৯ সালে মারণ কর্কট রোগের সঙ্গে যুদ্ধে হেরে গিয়েছিল এনরিকের একরত্তি মেয়ে হানা। মাত্র ন’বছর বয়সে ইহলোক ছেড়ে পরলোকের বাসিন্দা হয়ে গিয়েছিল। এনরিকে তখন একদমই প্রায় সময় দিতে পারতেন না ‘লা রোহা’-কে, মেয়ের কাছে শেষের দিনগুলোয় থাকবেন বলে। স্পেন ফুটবল ফেডারেশন মেনে নিয়েছিল। তবে মেয়ের কাছে বেশি দিন থাকতে পারেননি এনরিকে। বাবা কাছে আসার পর মাত্র দু’মাস মতো বেঁচেছিল হানা। আর ২০১৯ সালের আগস্টে হানার মৃত‌্যুর পর সোশ‌্যাল মিডিয়ায় এক মর্মস্পর্শী বার্তা লিখেছিলেন এনরিকে। লিখেছিলেন, ‘পাঁচ মাস লড়ার পর হানা আজ আমাদের ছেড়ে চলে গেল। হানা, তোমাকে মিস করব প্রতিদিন। তোমাকে মনেও পড়বে প্রতিদিন। তুমিই আমাদের আগামীর আলোকবর্তিকা হয়ে থেকে যাবে।’ 

[আরও পড়ুন: ‘এবারের মেসি আরও পরিণত’, প্রতিপক্ষকে সতর্ক করে বলছেন মারিয়া]

 

এনরিকে এরপর সব ছেড়েছুড়ে বাড়ি বসে গুমরোতে পারতেন। একরাশ হাহাকারে নিজেকে ডুবিয়ে রাখতে পারতেন দিনের পর দিন। কিন্তু বদলে আশ্চর্য মানসিক কাঠি‌ন‌্য দেখিয়ে, স্পেন টিমের রাশ ফের হাতে তুলে নেন এনরিকে। কাজ যে অনেক বাকি ছিল।

২০০৮ থেকে ২০১২– এই চার বছরে যে স্পেনকে বিশ্ব শাসন করতে দেখেছিল সবাই, সেই স্পেন তত দিনে অস্তমিত। ২০১৪ আর ২০১৮ বিশ্বকাপে স্পেনের যা হাল হয়েছিল যা, তা দেখে শিউরে উঠেছিলেন সে দেশেরই অনেকে। শঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন, দেশজ ফুটবলের ভবিষ‌্যৎ নিয়ে। অনেক নামীদামি ফুটবলারের বয়স বাড়ছিল, কালের নিয়মে ক্রমে ধার হারাচ্ছিলেন। এনরিকেকে অতীত গরিমা ভুলে এক নতুন স্পেন গড়তে হত। যেখানে প্রাধান‌্য পাবে তারুণ‌্য।

আর সেই লক্ষ্যে যে সফল হয়েছিলেন এনরিকে, তার প্রামাণ‌্য নথি গত ইউরো কাপ। আনকোরা, তরুণ একটা টিম নিয়ে ইউরো সেমিফাইনালে উঠেছিল স্পেন। পেদ্রি, দানি অলমো, ফেরান তোরেস, পাও তোরেসের মতো প্রতিভার নতুন হীরকখণ্ড ফুটবল পৃথিবীকে উপহার দিয়ে। যাঁদের নিয়ে এবার কাতার জয় করতে চাইছেন এনরিকে। আর হ‌্যাঁ, সেটা কিন্তু অলীক স্বপ্ন নয়।

কোচ এনরিকের একটা বড় গুণ হল– তিনি সব সময় প্লেয়ারকে প্রাধান‌্য দেন। নিজেকে ব‌্যাকসিটে পাঠিয়ে। যে কারণে প্লেয়াররাও তাঁকে বিশ্বাস করেন, ভরসা করেন। আর একটা স্বভাবও আছে এনরিকের। তিনি দেশের স্বার্থের সঙ্গে কোনও আপসের রাস্তায় হাঁটেন না। ফুটবলার যত বড়ই হোক, যতই তাঁর নামডাক হোক, প্রয়োজন না দেখলে সেই সংশ্লিষ্ট প্লেয়ারকে বাদ দিতে দু’বার ভাবেন না। তাতে সমালোচনার মুখেও পড়তে হয় যথেষ্ট। এবারই যেমন কাতার বিশ্বকাপের দল থেকে দাভিদ দে হিয়া, সের্জিও র‌্যামোসকে বাদ দিয়ে দিয়েছেন এনরিকে। র‌্যামোস এ দিন গজগজও করেছেন সোশ‌্যাল মিডিয়ায়। লিখেছেন, ‘ভাবতেই পারছি না যে, আমাকে বাড়ি বসে বিশ্বকাপ দেখতে হবে।’ শুধু তাই নয়, কাতার বিশ্বকাপের যে স্কোয়াড বেছেছেন এনরিকে তাতে বার্সেলোনা-রিয়াল মাদ্রিদ বিভাজন বড় স্পষ্ট। অতীতে এক সময় বার্সেলোনা কোচ ছিলেন এনরিকে। বিশ্বকাপ স্কোয়াডে মাদ্রিদের মাত্র দু’জন প্লেয়ারকে দেখতে পেয়ে স্পেন জনতাই বলতে শুরু করেছে– এনরিকে এটা করতই। ও তো বার্সেলোনার লোক!

কিন্তু লুই এনরিকের তাতে কিছু যায় আসে না। তিনি জানেন, বিশ্বকাপ জিতলে এই সব সমালোচনার উৎসমুখ আপনাআপনি বন্ধ হয়ে যাবে। আর সমালোচনা তাঁর করবেও বা কী? সন্তানশোক সঙ্গী যাঁর, মনুষ‌্য বিষোদগার তাঁকে প্রভাবিত করতে পারে কতটুকু? অন্ধকারের যাত্রীর তো আর রাত্রি হয় না। 

[আরও পড়ুন: ‘ভারতের মাটিতেই বিশ্বকাপ জিতব’, পাক ক্রিকেটারদের উৎসাহ দিতে বার্তা মেন্টর হেডেনের]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement