সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শিয়রে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। সম্মিলিত বিরোধীদের প্রার্থীও ঠিক হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এই মুহূর্তের মহারাষ্ট্রের মহা বিকাশ আগাড়ির (MVA) সরকার বাঁচানোটা শরদ পওয়ার তথা গোটা বিরোধী শিবিরের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হতে চলেছে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের থেকেও বড়। কারণ যত সময় যাচ্ছে মহারাষ্ট্রের উদ্ধব ঠাকরের সরকার বাঁচানোটা ততটা চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে।
এখনও পর্যন্ত যা যা ঘটেছে:
শিব সেনার বিদ্রোহী নেতা একনাথ শিণ্ডে নিজের অনুগামী বেশ কিছু বিধায়ককে সঙ্গে নিয়ে সুরাটের একটি হোটেলে উঠেছেন। শিণ্ডে শিব সেনার সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতাদের মধ্যে একজন। সূত্রের খবর, দলে তাঁর গুরুত্ব কমে যাওয়া নিয়ে বহুদিন ধরে অসন্তুষ্ট ছিলেন থানের ‘স্ট্রংম্যান।’ সঞ্জয় রাউতের (Sanjay Raut) গুরুত্ব বাড়াটাও তাঁর গোঁসা করার অন্যতম কারণ। শিণ্ডের শিবিরের দাবি, তাঁর সঙ্গে অন্তত ২২ জন শিব সেনা বিধায়ক আছেন। আরও জনা পাঁচেক কংগ্রেস বিধায়ক তাঁর শিবিরে যোগ দেবেন।
[আরও পড়ুন: বাজপেয়ীর ঘনিষ্ঠ থেকে বিরোধীদের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী! কেমন ছিল যশবন্ত সিনহার রাজনৈতিক যাত্রাপথ?]
শিণ্ডের বিদ্রোহের কথা মেনে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে এদিন দুপুরেই দলের বিধায়কদের নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন। তাতে শিব সেনার বিধায়কদের একটা বড় অংশই অনুপস্থিত ছিল। ফলে চিন্তার ভাঁজ আরও বাড়ে সেনা শিবিরের। যদিও তাতে আতঙ্কিত না হয়ে পালটা শিণ্ডের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেন মুখ্যমন্ত্রী ঠাকরে। বিদ্রোহী নেতাকে দলের পরিষদীয় দলনেতার পদ থেকে সরিয়ে তার জায়গায় অজয় চৌধুরীকে এনেছেন। শিণ্ডে (Ekanath Shinde) আবার পালটা প্রতিক্রিয়ায় টুইট করে নিজেকে বালাসাহেব ঠাকরের অনুগামী বলে দাবি করেছেন। তাঁর সাফ কথা,”আমরা শিব সৈনিক আর বাল ঠাকরের অনুগামী। উনি আমাদের হিন্দুত্ব শিখিয়েছেন। ঠাকরের আদর্শ আমাদের কখনও প্রতারণার মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে শেখায়নি।” নিজের টুইটার বায়ো থেকে শিব সেনার সঙ্গে সম্পর্কের কথাও মুছে দিয়েছেন তিনি। সমস্যা মেটাতে সুরাটে দু’জন নেতাকে পাঠিয়েছিল শিব সেনা। খোদ মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে শিণ্ডেকে ফোন করেন। সূত্রের দাবি, শিণ্ডে নাকি উদ্ধব ঠাকরেকে জানিয়ে দিয়েছেন দলের স্বার্থে বিজেপির সঙ্গে ফের জোট করা উচিত শিব সেনার। দলের বিধায়করা কংগ্রেস-এনসিপিকে চাইছে না। যদিও উদ্ধব তাঁকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর কোনও শর্ত দল শুনতে রাজি নয়। এভাবে শিব সেনা চলে না। তাঁকে মুম্বইয়ে গিয়ে কথা বলতে হবে।
[আরও পড়ুন: Presidential Elections: জল্পনায় সিলমোহর, মমতার প্রস্তাবিত যশবন্ত সিনহাকেই রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী করল বিরোধীরা]
কংগ্রেস (Congress) আবার সংকট মেটাতে দ্রুত মহারাষ্ট্রের দায়িত্ব দিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কমলনাথকে। হাত শিবিরের দাবি, দলের সব বিধায়ক তাঁদের সঙ্গেই আছে। এবং তাঁরা দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি বালাসাহেব থোরাট এবং বর্তমান রাজ্য সভাপতি নানা পাটোলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। এনসিপি (NCP) নেতৃত্ব জানিয়ে দিয়েছে, এই সংকটের সময় তাঁরা শিব সেনার সঙ্গে আছে।
বিজেপির বক্তব্য, সঞ্জয় রাউতের বাড়বাড়ন্তের জেরেই আজ শিব সেনা ভাঙনের মুখে। লুকোছাপা না করেই মহারাষ্ট্র বিজেপির (BJP) প্রদেশ সভাপতি জানিয়ে দিয়েছেন, মহা বিকাশ আগাড়ির সরকার পড়ে গেলে তাঁরা শিণ্ডেকে সঙ্গে নিয়ে সরকার গড়তে রাজি। তবে এখনই অনাস্থা প্রস্তাব আনা হবে না।
কী হতে পারে?
শিণ্ডে নিজের অনুগামীদের নিয়ে বিজেপি শাসিত গুজরাটে গিয়েছেন। সুতরাং, বিজেপির সঙ্গে তাঁর গোপনে কোনও রফা হয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে আগাড়ি সরকার বাঁচানো মুশকিল। কারণ মহারাষ্ট্রের ২৯ জন ছোট দল এবং নির্দল বিধায়কের একটা বড় অংশ বিজেপির সমর্থনে। যদিও সেনা শিবিরের দাবি, তাঁদের বেশ কয়েকজন বিধায়ক দলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তাঁদের জোর করে সুরাটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এবং তাঁরা সময়মতো ফিরে আসবে। তাছাড়া শিণ্ডে যদি সরাসরি অনুগামীদের নিয়ে বিজেপিতে যোগ দেন, তাহলে তাঁদের বিধায়ক পদ বাতিল হবে। সুতরাং খেলা এখনও অনেক বাকি। আগাড়ির নেতারা আপাতত দফায় দফায় বৈঠক করছেন রণকৌশল ঠিক করার লক্ষ্যে।