মণিশংকর চৌধুরি: নাম সুমনজি ঝা। পেশায় ট্যাক্সিচালক। ভাষা ভিন্ন হলেও, হাড়ে মজ্জায় বাঙালি। ‘খুশির শহরে’ যান্ত্রিক দৌড়েই জীবন ও জীবিকা খুঁজে নিয়েছেন ওই মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি। যাত্রীদের ডাকে সাড়া দিয়ে তাঁদের গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়াই কাজ। ভাড়ার গাড়ি চালালেও তা নিয়ে বিশেষ ভাবনা নেই। ‘রামজি কি কৃপা’ আছে সঙ্গে। এহেন মানুষটিই সাক্ষী থাকলেন এক বিভীষিকাময় অধ্যায়ের। বিপর্যয়ে দেখলেন ‘অমানবিক কলকাতা’র মানবিক মুখ।
[পোস্তার পর মাঝেরহাট, পরপর ব্রিজ বিপর্যয়ে দায়ের জনস্বার্থ মামলা]
মঙ্গলবার বিকেল। মুখ ভার আকাশের। ইতিমধ্যে একপ্রস্থ বৃষ্টি হয়ে গিয়েছে। ফের আকাশ ভেঙে পড়ল বলেই। বেহালা থেকে এক যাত্রী চেপেছেন তাঁর গাড়িতে। গন্তব্য চাঁদনি চকের হিন্দ সিনেমা। অভ্যস্ত হাতে জ্যাম কাটিয়ে চলেছেন সুমনজি। মাঝেরহাট ব্রিজ খানিকটা পেরিয়েছে গাড়ি। হঠাৎ দুলে উঠল চারিদিক। সঙ্গে বিকট শব্দ। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সুমনজি দেখতে পেলেন, যেন আকাশ থেকেই নেমে আসছে কংক্রিটের বিশাল বিশাল চাঙড়। প্রাথমিক ঝটকা কাটিয়ে উঠে তিনি বুঝতে পারলেন ভেঙে পড়েছে ব্রিজের একটি অংশ। সেই ভাঙা অংশের উপরই ছিল তাঁর গাড়িটি। ততক্ষণে পিছনের সিট থেকে বেরিয়ে এসেছেন তাঁর যাত্রীটিও। অলৌকিকভাবে গাড়ি, চালক ও যাত্রী কারওরই কোনও ক্ষতি হয়নি। তারপরই নজরে পড়ে ভয়াবহ দৃশ্য। ভেঙে পড়া কংক্রিটের স্ল্যাবের নিচে চাপা পড়েছে একটি মিনিবাস, বেশ কয়েকটি গাড়ি ও মোটরসাইকেল। আহতদের আর্তনাদে কান পাতা দায়। মুহূর্তে মনস্থির করে নিলেন সুমনজি। জঞ্জালের স্তূপের নিচ্ছে আটকে পড়া মানুষের উদ্ধারে ছুটে গেলেন তিনি। এগিয়ে এল তাঁর যাত্রীও।
ঘটনার পর কাঁপা গলায় সুমনজি বলেন, “ও বাঙালিবাবু বহুত আচ্ছা থা। বহুত আদমি কো বাহার নিকালা।” তাঁর কথায়, বিপদ কারও ধর্ম বা জাতপাত দেখে আসে না। বিপর্যয়ে মানুষের পাশে মানুষকেই দাঁড়াতে হবে। মাঝেমধ্যেই নানা খবরে শহরের অমানবিক মুখ ভেসে উঠে। দেখা যায় আহত ব্যক্তির পাশ কাটিয়ে নির্বিকারভাবে বয়ে যাচ্ছে জনস্রোত। কিন্তু মাঝেরহাটের ভাঙা ব্রিজ যেন অজান্তেই গড়ে দিয়ে গেল মানবতার সেতুবন্ধন।
[ব্রিজ ভাঙার জের, ঘুরপথে চলছে দক্ষিণ শাখার একাধিক লোকাল ট্রেন]
The post ‘ও বাঙালিবাবু বহুত আচ্ছা থা’, দুঃস্বপ্নের দিনেও মানবিক মুখ শহরের ট্যাক্সিচালকের appeared first on Sangbad Pratidin.