পুজো আসছে। এই সময় ত্বকের যত্ন নেওয়া খুব জরুরি। তবেই তো পুজোর সময় প্রাণ পাবে ত্বক। প্রাকৃতিক উপাদানে ত্বকের পরিচর্যার জন্য সবচেয়ে ভাল আয়ুর্বেদ, অ্যারোমাথেরাপি, অরগ্যানিক সামগ্রী। লিখছেন তিতাস।
অ্যারোমাথেরাপি
ফুল, ফল, কাণ্ড, গাছের ছাল, পাতা, শিকড়- গাছের প্রতিটা অংশের থেকে তেল নিঃসরণ করে তৈরি হয় অ্যারোম্যাটিক অয়েল, যাকে বলা হয় এসেনশিয়াল অয়েল। গোলাপ, ল্যাভেন্ডার, ভেটিভার, জায়ফল, কমলা, মৌরি, জাফরান, জুঁই- এরকম নানাবিধ উপকরণ থেকে খাঁটি তেলের নির্যাস ব্যবহৃত হয় অ্যারোমাথেরাপি প্রোডাক্টে। ত্বক ও চুলের সমস্যার পাশাপাশি মুড সুইং, স্ট্রেস, অ্যাংজাইটি, প্রিমেনস্ট্রুয়াল ক্র্যাম্প, সর্দি-কাশি, মাথাব্যথা, মাইগ্রেন, সাইনাসের মতো সমস্যাতেও কার্যকরী অ্যারোমাথেরাপি। অ্যারোমাথেরাপি মতে, এসেনশিয়াল অয়েল ব্রেন ফাংশন স্টিমুলেট করতে সাহায্য করে, একই সঙ্গে তেল ত্বকে শুষে গিয়ে তা রক্তে মিশে ছড়িয়ে পড়ে দেহের নানাদিকে। ফলে সমস্যা নিরাময় হয় দ্রুত। এসেনশিয়াল অয়েল সরাসরি ত্বকে ব্যবহার করা উচিত নয়, এর সঙ্গে মিশিয়ে নিতে হয় ক্যারিয়ার অয়েল বা জল। ক্যারিয়ার অয়েল বা বেস অয়েল হতে পারে অলিভ, আমন্ড, জোজোবা, সেসমি, গ্রেপসিড, অ্যাপ্রিকট, মারুলা, ক্যাস্টর, সানফ্লাওয়ার ও অন্যান্য। ক্যারিয়ার অয়েল কেনার সময় দেখে নিন তা কোল্ড প্রেসড কি না। এসেনশিয়াল অয়েল কনসেনট্রেটেড, তাই লাগে দু’-চার ফোঁটা এবং দীর্ঘক্ষণ খোলা হাওয়ায় থাকলে উবেও যায় সহজে। এসেনশিয়াল ও ক্যারিয়ার অয়েল সঠিক অনুপাতে মিশিয়েও তৈরি হচ্ছে মুড অয়েল, স্কিন অয়েল, হেয়ার অয়েল, বডি অয়েল, যা সহজেই আপনি কিনে নিতে পারেন। ব্রাইটেনিং, টাইটেনিং, নারেশিং, ব্লেমিশ কনট্রোল, অ্যান্টি এজিং- এরকম নানান ভেরিয়েন্ট পাওয়া যাচ্ছে অ্যারোমা অয়েলে। অ্যারোমাথেরাপিতে মাসাজ ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। যে কোনও অয়েল বা অয়েল মিশ্রিত ক্রিম বা লোশন ত্বক বা চুলে অ্যাপ্লাই করার পর দু’-পাঁচ মিনিট মাসাজ করুন যাতে সহজে মিশে যায়। অ্যারোমা অয়েল ক্যারিয়ার অয়েলের সঙ্গে ব্যবহার করতে স্বচ্ছন্দ না হলে অ্যারোমা অয়েল বেসড প্রোডাক্ট বেছে নিন ত্বক ও চুলের ধরন ও সমস্যা অনুযায়ী। ত্বকের ধরন ও সমস্যা জেনে নিয়ে তবে অ্যারোমা বেসড প্রোডাক্ট কিনুন। খাঁটি এসেনশিয়াল অয়েল মিশ্রিত প্রোডাক্ট বাজারচলতি অন্যান্য কসমেটিক ও সিন্থেটিক প্রোডাক্টের চেয়ে দামে চড়া।
[ কীভাবে সাজবেন রাখিতে? বোনেদের জন্য রইল স্পেশ্যাল লুক ]
আয়ুর্বেদ
সংস্কৃত ভাষায় আয়ুর্বেদ শব্দটি তৈরি হয়েছে দু’টি শব্দের সন্ধিতে। ‘আয়ু’ অর্থাৎ জীবন ও ‘বেদ’ অর্থাৎ জ্ঞান। ৩ হাজার বছরেরও আগে আয়ুর্বেদের জন্ম হয় ভারতবর্ষে। জড়িবুটি, প্রাকৃতিক তেল ও গাছগাছড়া নিয়ে তৈরি আয়ুর্বেদের ওপর ভরসাও করে এসেছে মানুষ যুগযুগান্তর থেকে। কোনও গাছের ফল, কোথাও বীজ, শিকড় অথবা তেল নানাবিধ প্রাকৃতিক উপকরণের সংমিশ্রণে তৈরি হয় আয়ুর্বেদিক ওষুধ ও সামগ্রী। গুণমানের জোরে প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্যেও পৌঁছেছে আয়ুর্বেদের প্রসার। গত কয়েক বছরে কসমেটিক ওয়ার্ল্ডে নবজাগরণ ঘটেছে আয়ুর্বেদের। সিন্থেটিক, রাসায়নিক যুক্ত স্কিন ও হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্ট ছেড়ে বহু মানুষ বেছে নিয়েছে আয়ুর্বেদকে। আয়ুর্বেদ মতে তৈরি প্রতিটা প্রোডাক্ট এক-একটি ওষুধ। খাঁটি আয়ুর্বেদিক জিনিস কিনলে লক্ষ করবেন বোতলের গায়ে লেখা রয়েছে আয়ুর্বেদিক ঔষধ কথাটি।
ত্বক ও চুলের যাবতীয় সমস্যা গোড়া থেকে নির্মূল করার জন্য বাজারে এসে গিয়েছে প্রচুর সামগ্রী- যেমন, ক্লেনজার, টোনার, প্যাক, ময়েশ্চারাইজার, বডি বাটার, লিপ বাম, রোজ-ল্যাভেন্ডার ওয়াটার, থেরাপিউটিক বডি অয়েল, মাসাজ অয়েল, স্ক্রাব, শ্যাম্পু, সাবান ও অন্যান্য। ত্বক ও চুলের সমস্যা দূর করার জন্য নামজাদা আয়ুর্বেদিক প্রোডাক্ট সংস্থার স্টোরে থাকছে অভিজ্ঞ ডাক্তার ও স্কিন কনসালটেন্ট। তাঁদের সাহায্যে আপনি আপনার সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবেন চটজলদি। আয়ুর্বেদিক প্রোডাক্ট কেনার সময় ব্র্যান্ড ও জিনিসের দাম পরখ করে তবেই কিনুন। যেমন ধরা যাক, খাঁটি কুমকুমাদি তৈল যুক্ত যে কোনও প্রোডাক্টের দাম খানিক চড়া হওয়াই স্বাভাবিক, দামের ভয়ে জিনিসের মানের সঙ্গে সমঝোতা না করাই ভাল। আয়ুর্বেদিক কোনও প্রোডাক্ট ব্যবহারে রাতারাতি ফল পাওয়া অসম্ভব। ওষুধ খেলে রোগ সারাতে যেমন সময় লাগে, খাঁটি আয়ুর্বেদিক ঔষধিতেও ধৈর্য রাখা বাঞ্ছনীয়।
[ শুধু সৌন্দর্য বৃদ্ধিই নয়, লিপস্টিকের কিন্তু আরও অনেক গুণাগুণ রয়েছে ]
অরগ্যানিক
চাল-ডাল থেকে বিউটি রিজিম- অরগ্যানিক প্রোডাক্টের ক্রেজ এখন চারদিকে। সবজি ও ফলের ওপর অরগ্যানিক স্টিকার সাঁটিয়েও দেদার বিকোচ্ছে হাইব্রিড ফলন। তেমনই নকল অরগ্যানিক প্রোডাক্টেও বাজার ছয়লাপ। অরগ্যানিক প্রোডাক্ট কেনার আগে প্রথম জেনে রাখুন যে কোনও অরগ্যানিক প্রোডাক্টের দাম সাধারণ কসমেটিক, হার্বাল প্রোডাক্টের তুলনায় বেশি। তার প্রধান কারণ যে কোনও অরগ্যানিক জিনিসের ফলনে ব্যবহৃত হয় না কোনওরকম রাসায়নিক সার, পোকা মারার ওষুধ, ফলন বাড়ানোর রাসায়নিক পদার্থ। সুতরাং ফল-সবজি-চাল-ডাল ও যাবতীয় খাদ্যদ্রব্য অরগ্যানিক উপায়ে তৈরিতে লাগে অনেক বেশি খাটনি ও যত্ন। যে কোনও খাদ্যদ্রবে্য ‘অরগ্যানিক’ লেবেল লাগানোর শর্ত তাতে ব্যবহৃত অন্ততপক্ষে ৯৫ শতাংশ উপাদান অরগ্যানিক থাকতে হবে। কসমেটিক লাইনে যে সমস্ত প্রোডাক্ট সিন্থেটিক উপাদান বর্জিত, সেগুলোই অরগ্যানিক নামে প্রচলিত।
প্রোডাক্ট কেনার সময় আপনার পছন্দের প্রোডাক্ট সার্টিফায়েড কি না দেখে নিন। স্কিন কেয়ার, সান কেয়ার ট্রিটমেন্ট, মেকআপ- অরগ্যানিক রেঞ্জে পেয়ে যাবেন যাবতীয়। ‘ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার’ অনুযায়ী কোনও প্রোডাক্ট যদি ১০০ শতাংশ অরগ্যানিক লেখা থাকে, তা হলে দেখে নিন তাতে ব্যবহৃত সমস্ত উপাদান ৯০ শতাংশ অরগ্যানিক কি না। যদি প্রোডাক্টের লেবেলে লেখা থাকে মেড উইথ অরগ্যানিক ইনগ্রেডিয়েন্ট তাহলে নুন ও জল বর্জিত প্রোডাক্টটিতে থাকতে হবে ৭০ শতাংশ অরগ্যানিক উপকরণ। সেনসিটিভ ত্বক হলে ফ্র্যাগ্র্যান্স অর্থাৎ গন্ধবিহীন অরগ্যানিক প্রোডাক্ট কিনুন, নাহলে র্যাশ বা অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
[ ব্লাউজে বাহার, পুজোর আগে জেনে নিন কোনটি আপনাকে মানাবে ]
The post প্রাকৃতিক উপাদানে রূপচর্চা, পুজোর আগে জেনে নিন টিপস appeared first on Sangbad Pratidin.