নির্মল ধর: কয়েকদিন আগেই Amazon prime- এ মুক্তি পেয়েছে দক্ষিণী ছবি “মালিক” (Malik)। বিষয়ের দিক থেকে প্রথমেই চট করে মনে আসবে “দলপতি” (Dalpati) বা “নায়কন” (Nayakan) ছবির কথা। চরিত্র ও কাহিনীর বিন্যাসে প্রায় একই ভঙ্গি। সমুদ্রের সাধারণ গরীব জেলে থেকে সুলেমানের নিজের অঞ্চলের (রামাদাপল্লি) মাস্তান কাম রবিনহুড হয়ে ওঠার কাহিনীতে কোনও নতুনত্ব নেই। পরিচালক মহেশ নারায়ণন তাঁর এই উত্থানের সঙ্গে সুন্দর মসৃণ ভঙ্গিতে চিত্রনাট্যে মিশিয়ে দিয়েছেন কেরল উপকূলের ভিন্ন ভিন্ন ধর্মীয় মানুষদের মধ্যে সম্প্রীতির পরিবেশ এবং রাজ্যের স্বার্থপর রাজনীতিকদের কূট কার্যকলাপ ও প্রশাসনকে কাজে লাগানোর অভিসন্ধি। এখানেই ছবিটি হয়ে ওঠে আজকের সময়ের এক প্রতিবেদন।
সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা কেরলে ঘটেনি, এমন নয়। ২০০৯ সালেই ভিমাপল্লিতে ভয়ংকর দাঙ্গা হয়েছিল। মহেশ হয়তো সেই ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই এমন চিত্রনাট্য লিখেছেন। হিন্দি সিনেমায় সচরাচর মস্তান চরিত্রকে নায়ক করে যে গল্প বানানো হয়, সেখানে জনপ্রিয়তার দিকেই নজর থাকে বেশি। এখানে তেমনটি ঘটেনি। রামদাপল্লির মধ্যেই মুসলমান এবং খ্রিষ্টান পরিবার স্বাভাবিক ছন্দেই বাস করত, এখনও করে। সেখানে বিভেদের বেড়া তোলে রাজনৈতিক নেতার দল। সর্বত্রই। এখানেও তা দেখা গেল। স্মাগলিংয়ের ব্যবসা করে সুলেমানের দল নিজেদের এলাকার উন্নতি করলো, একটা স্কুল বানালো, পুরনো মসজিদের নতুন সাজ হলো। কিন্তু প্রতিপক্ষ চন্দ্রনের কারসাজিতে ঘটলো অঘটন! সুলেমানের হাতে মৃত্যু হল চন্দ্রনের। এবার শুরু চোর পুলিশ খেলা। সেখানে জয় হল সুলেমনের পেশির শক্তির। এরপর একশো পঞ্চাশ মিনিট ধরে সুলেমানের বন্ধু ডেভিডের সঙ্গে শত্রুতা তৈরি, পুলিশ ও নেতার যোগসাজসে দাঙ্গার পরিবেশ তৈরি, রোজলিনের সঙ্গে সুলেমানের প্রেম, ভিন্ন ধর্মের বিয়ে ইত্যাদি নিয়ে বেশ সুস্থ চিন্তার কাহিনী বিন্যাস বাস্তবের অনুসারী।
[আরও পড়ুন: Web Series Review: শ্রাবন্তী-সোহমের ম্যাজিক তো রইল, কিন্তু ‘দুজনে’ সিরিজ কি জমল? ]
কিন্তু পুলিশ-নেতার টার্গেট তো সুলেমান! সে যদিও স্মাগলিংয়ের ব্যবসা ছেড়ে বড় ব্যবসায়ী, কিন্তু অপরাধীকে ছাড়া যায় না। হজ করতে যাওয়ার অন্তিম মুহূর্তে তাঁকে বিমানের গেট থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ছবির শুরু এখানেই। এরপর বাকি গল্প বিভিন্ন চরিত্রের ফ্ল্যাশব্যাকে দেখানো ও শোনানো। পরিচালকের এই বিন্যাস পর্বগুলো সুন্দর ভাবে সাজানো বলেই এত দীর্ঘ ছবিও দেখতে বসে ক্লান্তি লাগে না। তার আরও একটি বড় কারণ মুখ্য চরিত্রে ফাহাদ ফাজিলের অসাধারণ অভিনয়! দাঙ্গার মাঝে পড়ে কিশোর সন্তানের মৃত্যুতে ফাহাদের অভিব্যক্তি দেখার মতো।
রোজলিনের ভূমিকায় নিমিশাও সঠিক তাল দিয়ে গিয়েছেন। সানু ভার্গিসের ক্যামেরা প্রথম শটটি থেকেই জানিয়ে দেয় – এই ছবি অবশ্যই তাঁরও ছবি! না, ডনকে নিয়ে ছবি হলেও, তেমনভাবে কোনও আইটেম গান নেই, নেই অন্য কোনও গানও, সুশিন-শ্যামের আবহ এক্কেবারে পরিবেশ ও পরিস্থিতির সঙ্গে হাড় মাসের মতো মিলে রয়েছে। ফর্মুলা মার্কা ছবির মতো অ্যাকশন ও সেক্সের বিরিয়ানি না হয়ে, মালায়ালি ছবি যে ব্যবসায়িক হয় এবং একই সঙ্গে কতটা সমাজের চালচিত্র হয়ে ওঠে এই “মালিক” তার উদাহরণ!