সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: প্রত্যাশামতোই কংগ্রেসের (Congress) নতুন সভাপতি নির্বাচিত হলেন মল্লিকার্জুন খাড়গে। প্রতিপক্ষ শশী থারুরকে বিপুল ভোটে হারিয়ে দিলেন তিনি। ফলে দু’দশক পর অ-গান্ধী সভাপতি পেল কংগ্রেস।
কংগ্রেস সূত্রের খবর, সভাপতি নির্বাচনে ‘হাই কম্যান্ডের প্রার্থী’ হিসাবে পরিচিত খাড়গে পেয়েছেন ৭৮৯৭টি ভোট। প্রতিপক্ষ শশী থারুর পেয়েছেন ১০৭২টি ভোট। অর্থাৎ ৬ হাজার ৮২৫ ভোটের ব্যবধানে জিতলেন খাড়গে। শেষবার কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচন হয়েছিল ২০০০ সালে। সেবার সোনিয়া গান্ধীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছিলেন উত্তরপ্রদেশের নেতা জিতেন্দ্র প্রসাদ (Jitendra Prasad)। সোনিয়ার বিরুদ্ধে জিতেন্দ্রর প্রাপ্ত ভোট তিন সংখ্যাতেও পৌঁছায়নি। সে তুলনায় খাড়গের বিরুদ্ধে কিছুটা সম্মানজনক জায়গায় পৌঁছলেন থারুর।
[আরও পড়ুন: দেশকে দিওয়ালির উপহার! গুজরাট সীমান্তে নয়া বায়ুসেনা ঘাঁটি, ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন মোদির]
কেরলের সাংসদ শুরু থেকেই এই নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসছেন। বারবার অভিযোগ করেছেন, রাজ্য স্তরের নেতাদের কাছ থেকে বা শীর্ষ নেতাদের কাছ থেকে তিনি খাড়গের (Mallikarjun Kharge) মতো সহযোগিতা পাচ্ছেন না। প্রচারে সাহায্য করা তো দূরের কথা কোনও কোনও রাজ্যে থারুরকে প্রচারে বাঁধা দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। এমনকী ভোটের ফলপ্রকাশের দিনও উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব এবং তেলেঙ্গানায় ভোটে বেনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন থারুর। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, যে নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে এত অভিযোগ থারুরের, সেই নির্বাচনের ফলাফল তিনি মুখ বুঝে মেনে নেবেন কিনা। ফল ঘোষণার পর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় অবশ্য থারুর খাড়গেকে শুভেচ্ছাই জানিয়েছেন। কংগ্রেস নেতা টুইটে লিখেছেন,”কংগ্রেসের সভাপতি হওয়াটা বিরাট সম্মানের এবং দায়িত্বের। আমার আশা খাড়গেজি এই কাজে সফল হবেন। হাজারের বেশি সহকর্মীদের সমর্থন পাওয়াটা আমার জন্যও গর্বের। ”
[আরও পড়ুন: একুশের ভোটের পর RSS-এর শাখা বেড়েছে বাংলায়, রিপোর্টে সন্তুষ্ট সংঘ পরিবার]
আসলে থারুর নির্বাচন প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই পিছিয়ে ছিলেন। কারণ খাড়গের নামের পাশে বসে গিয়েছিল ‘গান্ধী পরিবারের প্রার্থী’র তকমা। সোনিয়া গান্ধী (Sonia Gandhi) অবশ্য শুরু থেকেই বলে আসছিলেন, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় তাঁরা নিরপেক্ষ থাকবেন। সেই মতো প্রকাশ্যে গান্ধী পরিবারের সদস্যরা কোনও প্রার্থীর সমর্থনে মুখও খোলেননি। কিন্তু ফলপ্রকাশের দিন ‘ফাউল’ করে ফেললেন রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi)। ফলাফল ঘোষণার আগেই তিনি একপ্রকার বলে দেন, খাড়গেই সভাপতি নির্বাচিত হতে চলেছেন। ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রা চলাকালীন অন্ধ্রপ্রদেশে রাহুলকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, নতুন সভাপতি আসার পর আপনার ভূমিকা কী হবে? প্রশ্নের জবাবে রাহুল বলে দেন,”সেটা খাড়গে জি ঠিক করবেন।” যদিও পরক্ষণে সামলে নিয়ে কংগ্রেস সাংসদ বলেন,”খাড়গেজি এবং থারুরজি দু’জনেই অভিজ্ঞ, আমি সামান্য কর্মী। তাঁদের কথামতোই কাজ করব।” রাহুল যতই ভুল শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করুন, তাঁর এই মন্তব্য শেষ মুহূর্তে গোটা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় গান্ধীদের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিল।