নব্যেন্দু হাজরা: কোথাও রাস্তা দখল হয়ে যাচ্ছে। কোথায় জ্বলছে না রাস্তার আলো। কোথাও আবার বর্জ্য নিকাশী ব্যবস্থা বেহাল। টাকার বিনিময়ে অবৈধ নির্মাণের অভিযোগও উঠছে। হাওড়া, রাজারহাট থেকে শিলিগুড়ি কিংবা আলিপুরদুয়ার সর্বত্র পুর পরিষেবার বেহাল দশায় ক্ষুব্ধ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। কাজ না করলে পুরসভাকে 'পেনাল্টি'র নির্দেশও দিলেন তিনি। মমতা বললেন, "আমাকে রাস্তা ঝাঁট দিতে হবে?"
সোমবার বৈঠকের শুরুতেই মমতা হাওড়া পুরনিগম নিয়ে তোপ দাগেন। পুরচেয়ারম্যান থাকাকালীন রথীন চক্রবর্তী হাওড়ার 'বারোটা বাজিয়ে গিয়েছেন' বলে ক্ষোভ উগরে দেন মমতা। সেখানে টাকার বিনিময়ে একাধিক বেআইনি নির্মাণ হয়েছে বলেই দাবি তাঁর। এছাড়া জল থেকে বর্জ্য নিকাশি একাধিক ক্ষেত্রে অভিযোগের সুর চড়িয়েছেন তিনি। এর পর তাঁর নিশানায় ছিলেন বিধাননগরের সুজিত বসু। তাঁর বিরুদ্ধে পুরসভায় যেভাবে সেভাবে কর্মী নিয়োগের অভিযোগ তুলেছেন মমতা। তাঁর কথায়, "পুরসভাগুলোর জঘন্য পারফরম্যান্স। কেন তৈরি করা হয়েছিল, জানি না। সবাই বলে, আলাদা পুরসভা করে দিন, কী লাভ, যদি জনতা পরিষেবা না পায়।" রাস্তায় আলো থেকে পানীয় জল নিয়ে নজরদারির অভাব রয়েছে বলেও অভিযোগ করেন মমতা। তিনি বলেন, "ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় লাইট জ্বলেই যাচ্ছে। ভাবছে, সরকার টাকা দেবে। টাকা আসছে কোথা থেকে? এটা জনগণের টাকা। ল পড়ে যাচ্ছে তো পড়েই যাচ্ছে। কিছু লোকের অভ্যেস আছে, ঢাকনা করলেও ঢাকলা খুলে বিক্রি করে দেয়। তাহলে অটোমেটিক সিস্টেমে যাব না কেন আমরা? হাত বা বালতি পাতলে জল পড়বে, ভরে গেলে নিজে থেকে বন্ধ হয়ে যাবে, কেন এমন সিস্টেম বের করতে পারিনি আমরা?"
[আরও পড়ুন: বাতিল জিনিস বেচে পেট চালানো বৃদ্ধকে নিয়ে তামাসা ভিডিও ভাইরাল, অপমানে আত্মহত্যা!]
টেন্ডারের মাধ্যমে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগও উঠেছে। সে কারণে এবার থেকে স্থানীয়ভাবে টেন্ডার বন্ধ করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পরিবর্তে এবার কেন্দ্রীয়ভাবে টেন্ডার হবে। টেন্ডার পর্যালোচনার কাজে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। জেলাশাসক, বিডিওদের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ উগরে দেন। প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিদের লোভ সংবরণ করার বার্তা দেন মমতা। পুলিশকে অবিলম্বে 'রং না দেখে' ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দেন মুখ্যমন্ত্রী। 'অগ্নিশর্মা' মমতা এদিন পরিষেবার নিরিখে পুরসভাকে রিপোর্ট কার্ড দেন। পানীয় জল, হাউসিং, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও বর্জ্য নিকাশীতে কোন পুরসভা সেরা এবং কোন পুরসভা খারাপ কাজ করেছে, সেই রিপোর্ট কার্ডও দেন। একনজরে দেখে নিন তালিকা।
পানীয় জল
প্রশংসা: উলুবেড়িয়া, হালিশহর, কলকাতা, বৈদ্যবাটি, বাঁকুড়া
নিন্দা: আলিপুরদুয়ার, বালি, বরানগর, শিলিগুড়ি, শান্তিপুর
হাউসিং
প্রশংসা: উলুবেড়িয়া, জঙ্গিপুর, হাবড়া, কৃষ্ণনগর, মধ্যমগ্রাম
নিন্দা: বিধাননগর, আসানসোল, রায়গঞ্জ, কাঁথি
পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও বর্জ্য নিকাশী
প্রশংসা: কলকাতা, বসিরহাট, বৈদ্যবাটি, উত্তরপাড়া, উত্তর দমদম, নবদ্বীপ
নিন্দা: কাঁথি, ডালখোলা, পানিহাটি, হাওড়া, কুপার্স ক্যাম্প, সিউড়ি
মমতার দাবি, হাওড়ার উলুবেড়িয়া মডেল পুরসভা হওয়া উচিত। তাঁর হুঁশিয়ারি, "আমি কোনও অবহেলা শুনব না। পারফর্ম্যান্স রিভিউ হবে। অনেক ভদ্রতা দেখিয়েছি। ভদ্রতা দেখানো মানে এটা নয় একতরফা গায়ের জোরে জমি দখল হবে। কাজ করবে না।" মানুষ উন্নয়ন না পেলে সব পুরসভা, পঞ্চায়েত তুলে দেওয়ারও হুঁশিয়ারি দেন মমতা।