সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিপুল জনাদেশ নিয়ে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে তাঁর প্রধান লক্ষ্য ছিল, রাজ্যে শিল্প আসার পথ প্রশস্ত করা৷ উন্নয়নের যে মুখ তিনি বিগত পাঁচ বছরে দেখিয়েছেন, তাতে নতুন মাত্রা যোগ করতে শিল্পের যে কোনও বিকল্প নেই তা তাঁর থেকে ভাল আর কেউ জানে না৷ আর তাই রাজ্যের শিল্পবান্ধব পরিবেশকে তুলে ধরতে বণিকমহলের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাতের দিনটিকেই বেছে নিলেন৷ বণিকসভার সংবর্ধনা অনুষ্ঠান থেকেই রাজ্যে বিনিয়োগ তথা শিল্প গড়ার ডাক দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷
রাজনীতির প্যাঁচে পড়ে বাংলার শিল্প পরিবেশ নষ্টের কথা স্বীকার করেন অনেকেই৷ বাংলার বিনিয়োগ গোড়াতেই মার খায় এই জায়গাতেই৷ আর তাই এদিন সেই জায়গা থেকেই শিল্পবান্ধব পরিবেশের কথা তুলে ধরতে শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ বছরভর রাজনীতি সরিয়ে রেখে যে শুধু রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নই মুখ্য হবে তা জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী৷ চেম্বার অফ কমার্সের উদ্যোগে এদিন মুখ্যমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেওয়ার আয়োজন করা হয়৷ অ্যাসোচেম, ফিকির মতো জাতীয় বণিকসভাও যোগ দেয়৷ এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অগ্রণী শিল্পপতিরাই৷ তাঁদের সামনেই পরিসংখ্যান দিয়ে বিগত ৫ বছরে রাজ্যে সার্বিক উন্নয়নের ছবিটা তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী৷ রাজ্যে শিল্প-বাণিজ্য সম্মেলন চালু করার কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, “বাংলার GVA গ্রোথ যখন ১০.৪৮%, তখন ভারতের GVA গ্রোথ ৭.৫%৷ বাংলার Per capita income বৃদ্ধির হার যখন ১২.৪৮% তখন ভারতের ৬.১%৷ বাংলায় শিল্প বৃদ্ধির হার যখন ৮.৩৪% তখন ভারতের হার ৫.৬%৷” রাজ্যের পরিকল্পনা খাতে ব্যয় তিন গুনের চেয়ে বেশি হয়ে গেছে বলেও জানান তিনি৷ শিল্পপতিদের উদ্দেশ্যে বার্তা দিয়ে তাই তিনি বলেন, “আপনারা বিনিয়োগ করুন৷ সরকার আপনাদের সমস্তরকম সাহায্য করবে৷ কোথাও কোনও অসুবিধা হলে সঙ্গে সঙ্গে আমায় জানান৷ আমি এবং আমার সরকার সবসময় আপনাদের পাশে আছি৷” সাধারণত তিনি কোনও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যান না৷ কিন্তু রাজ্যের বণিকমহল তাঁর উপর যে আস্থা রেখেছিল তাতে সন্তুষ্ট মুখ্যমন্ত্রী৷ আর তাই এই অনুষ্ঠানকেই বেছে নিয়েছিলেন রাজ্যের উন্নয়নের মুখ তুলে ধরার জন্য৷
শিল্পের নিরিখে অন্য রাজ্যের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বারবারই গুজরাত বা মহারাষ্ট্রের তুলনা চলে আসে৷ বেশ কিছু রাজ্যের তুলনায় বাংলা কতটা পিছিয়ে- এ প্রশ্নে বারবার বিদ্ধ করা হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে৷ এদিনের অনুষ্ঠানকেই সে প্রশ্নের জবাব দেওয়ার মঞ্চ হিসেবে বেছে নেন মুখ্যমন্ত্রী৷ জানান, মহারাষ্ট্র, দিল্লি বা গুজরাতের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের তুলনা করলে ভুল হবে৷ দিল্লি একটি রাজধানী শহর তাই সেখানের পরিবেশ যে আলাদা হবে তা বলাই বাহুল্য৷ অন্যদিকে উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুজরাত বা বাণিজ্য-নগরী মুম্বই যে সুযোগ সুবিধা পেয়েছে তা যে বাংলার কপালে জোটেনি সে কথাও জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী৷ আর তাই তাঁর বক্তব্য, অপরিকল্পিত জায়গা থেকে কোনও রাজ্য বা শহরকে সাজিয়ে তোলা সহজ কাজ নয় পশ্চিমবঙ্গে তা সম্ভব হয়েছে৷ সেইসঙ্গে রাজ্যের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের কথাও তুলে ধরেন তিনি৷
সামগ্রিক ভাবেই এদিন রাজ্যের শিল্পবান্ধব পরিবেশটা শিল্পপতিদের সামনে তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী৷ সেই সঙ্গে তাঁর আশ্বাস, বাংলায় বিনিয়োগ করতে কেউ যেন ভয় না পান৷ দ্বিতীয় দফায় সরকার গঠন করেই শিল্পস্থাপনের উপর জোর দিয়েছিলেন তিনি৷ এদিন বণিকসভার সংবর্ধনা অনুষ্ঠান থেকেই যেন বিনিয়োগ টানার প্রস্তুতি শুরু করে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷
The post ‘শিল্পের পরিবেশ আছে, ভয় পাবেন না’- বণিকসভায় বার্তা মমতার appeared first on Sangbad Pratidin.