সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: জীবনে অনেক আঘাত, লড়াই এসেছে। সেসব পেরিয়ে এসেছেন। এখনও শরীরে যন্ত্রণা। কিন্তু চক্রান্তের বিরুদ্ধে সেই যন্ত্রণা নিয়ে পথে বেরতেও কোনও ক্লান্তি নেই। আগাগোড়া লড়াকু নেত্রীর কাছ থেকে এই বার্তা প্রত্যাশিত ছিল। তবে রবিবারের দুপুরে হাজরা মোড়ের মিছিল শেষে হুইলচেয়ারে বসে থাকা নেত্রীর ঈষৎ ক্লান্ত কণ্ঠে এসব কথা যেন ভোটের মুখে নতুন করে লড়াইয়ে উৎসাহ জোগাল দলের তৃণমূল (TMC) কর্মী, সমর্থকদের। শহরবাসীকে সাক্ষী রেখে তৃণমূল সুপ্রিমো তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দৃপ্ত শপথ, ”হুইলচেয়ারে, ভাঙা পায়েই গোটা বাংলা ঘুরে বেড়াব, খেলা হবে।” আর তাতেই বাড়তি উদ্দীপনা তাঁর সঙ্গে থাকা প্রার্থী, দলীয় কর্মী, সমর্থকদের মধ্যে। বার্তা দিলেন ‘চক্রান্ত’কারীদেরও।
গত বুধবার নন্দীগ্রামে মনোনয়ন পেশের পর মন্দির দর্শনে গিয়ে আহত হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। বাঁ পায়ে গুরুতর চোট নিয়ে প্রায় দেড়দিন এসএসকেএমে ভরতি ছিলেন। শুক্রবার সন্ধেবেলা বাড়ি ফিরেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। শনিবার বিশ্রাম নিয়ে রবিবারই ফের রাজপথে বেরিয়েছেন। নন্দীগ্রাম দিবসে মেয়ো রোড থেকে হাজরা মোড় পর্যন্ত তৃণমূলের মিছিলে হুইলচেয়ারে বসেই নেতৃত্ব দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর আহত নেত্রী মিছিল শেষে আরও দাঁতে দাঁত চেপে লড়াইয়ের ডাক দিয়েছেন তিনি।
[আরও পডুন: ‘আমার চেয়ে মানুষের যন্ত্রণা অনেক বেশি’, হুইলচেয়ারে রাজপথে নামার আগে বার্তা মমতার]
হাজরা মোড়ে মিছিল পৌঁছনোর পর তিনি বলেন, ”সকলকে অভিনন্দন। এমনিই ৫-৬ দিন নষ্ট হয়েছে। সোমবার থেকে পুরুলিয়া সফর দিয়ে শুরু করব প্রচার। এটুকুই বলব, জীবনে অনেক আঘাত, লড়াই পেরিয়েছি। চক্রান্ত যারা করছে আমার বিরুদ্ধে তাদের বলতে চাই, বেরতেই হবে আমাকে। সেই মনের জোর আপনাদের কাছ থেকে পেয়েছি। এই ক’দিন মা-মাটি-মানুষ যেভাবে উদ্বিগ্ন, তাতে আমি কৃতজ্ঞ। আমার যন্ত্রণা আছে। তবে শারীরিক যন্ত্রণার চেয়েও বড় হৃদয়ের যন্ত্রণা। আমি হেঁটে চলার লোক। তখন আমার মাথাও হাঁটে, হৃদয়ও হাঁটে। আঘাতের কালো দাগে ভরতি আমার সারা শরীর। মনে রাখবেন, আহত বাঘ আরও ভয়ংকর।”
[আরও পডুন: মাদক পাচারে পুলিশি যোগ! STF-এর জালে কলকাতা পুলিশের দুই কনস্টেবল]
লক্ষ্য একটাই। স্বৈরাচারীদের হাত থেকে গণতন্ত্রকে বাঁচাতে হবে। তার দায়িত্ব অনেক বেশি। হাজরা মোড়ে হুইলচেয়ারে বসে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখতে গিয়ে এমনই বললেন তৃণমূল সুপ্রিমো। বললেন, ” অশুভ শক্তির বিনাশ হোক, শুভ শক্তির উদয় হোক। বাংলা ঘিরে যে চক্রান্ত, তা যেন নস্যাৎ হয়ে যায়।” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কোথাও বসে এভাবে কথা বলতে দেখা যায় না সাধারণত। কিন্তু পরিস্থিতি এবার ভিন্ন। পায়ে জখম তাঁর। চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে প্লাস্টার করে, বিশেষ চটি পরে তবেই দলীয় কর্মসূচিতে বেরিয়েছেন। শরীরে যন্ত্রণা, কণ্ঠস্বরও খানিক স্তিমিত। কিন্তু মনের জোর যে অদম্য, এদিন তাঁর বক্তব্য থেকেই তা স্পষ্ট। আর সেটাই সম্ভবত ভোটযুদ্ধে তৃণমূলকে কিছুটা এগিয়ে রাখল।