সুব্রত বিশ্বাস: টাকার বিনিময়ে রেলে চাকরি দেওয়ার নামে চাকরি প্রার্থীদের পাঠানো হচ্ছে কলকাতার আশপাশের ডিভিশনগুলিতে। প্রতারিতরা ধরা পড়ার পর জানা যাচ্ছে, প্রতারণা চক্র সক্রিয় উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি ও বিহার থেকে। সম্প্রতি টিটিই পদে কাজ করতে গিয়ে বালিগঞ্জ আরপিএফের হাতে ধরা পড়ে চার জন। তাদের জেরা করে আরপিএফ জানাতে পারে, দেশজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে প্রতারকদের নেটওয়ার্ক। রয়েছে একাধিক এজেন্টও। দিল্লি,বেনারস ও বিহারে রীতিমতো অফিস খুলে এই নেটওয়ার্ক চালাচ্ছে বলে তদন্ত করতে গিয়ে দেখেছে রেল পুলিশ।
গত ১ জুন চার ভুয়ো টিটিই গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। আরপিএফের অভিযোগের ভিত্তিতে বালিগঞ্জ জিআরপি মামলা রুজু করেছিল। তদন্তে নেমে আধিকারিকরা জানতে পারেন, ধৃতরা ভিন রাজ্যের বাসিন্দা। তাঁদের থেকে কুড়ি লক্ষ টাকা করে নিয়ে জালিয়াতরা কাজে যোগ দিতে বলেছে কলকাতার শিয়ালদহ ডিভিশনে। বুধবার শিয়ালদহ বিআর সিং হাসপাতালের সামনের গেটে এমনই ছয় চাকরি প্রার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে শিবশঙ্কর মিত্র নামের একা দালালকে গ্রেপ্তার করেছে আরপিএফ। প্রতারণা চক্রের মূল পাণ্ডারা নাকি দিল্লিতে। মাঝে রয়েছে একাধিক এজেন্ট। এই চক্র মূলত বেকার যুবক-যুবতীদের টার্গেট করে। প্রতারিতদের সঙ্গে বিহারের বাসিন্দা পিঙ্কি কুমারী নামে এক এজেন্টের যোগাযোগ ছিল। বালিগঞ্জ আরপিএফ বিহারের সুজাপুরের এই মহিলাকে ট্রাক করে। যে চারজনকে টিটিই পদে যোগ দেওয়ার জাল নিয়োগপত্র দিয়েছিল বলে অভিযোগ। তাঁকেও গ্রেপ্তার করে জিআরপির তদন্তকারী আধিকারিকরা। পিঙ্কিকে জেরা করে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, চক্রটি দিল্লি থেকে চলছে।
[আরও পড়ুন: রাজ্যপালের সফরের আগেই বোমা বিস্ফোরণ মুর্শিদাবাদে, আঙুল উড়ল কংগ্রেস প্রার্থীর ভাই-সহ ২ জনের]
সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দিয়ে তারা টিটিই পদে নিয়োগের টোপ দেয়। সেখানে নেটওয়ার্ক চালায় আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক আকাশ পাণ্ডে। তারই সম্পর্কিত ভাই বিকাশ পাণ্ডে বেনারসে থাকে। সেই বেনারস মেডিক্যালে ভুয়ো পরীক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার নাটকের ব্যবস্থা করে। পুলিশ জেনেছে, প্রার্থীরা যোগাযোগ করার পর কোন রাজ্যের বাসিন্দা জেনে নিয়ে ওই রাজ্যে থাকা চক্রের সদস্যদের ফোন নম্বর দিত দিল্লির পান্ডারা। তারপর ২০ লক্ষ টাকা তাদের কাছ থেকে নেয় ওই এজেন্ট। যাঁরা টাকা দিতে রাজি হন তাঁদের একটি ফর্ম পূরণ করানো হতো। সেগুলি চলে যেত দিল্লিতে। তারপর সেখান থেকে অধিকাংশই চলে আসতো কলকাতায়। বিভিন্ন ডিভিশন, শিয়ালদহ ডিআরএম দপ্তর ও বিআর সিংয়ে নাটকীয় মেডিক্যাল টেস্টের পর ভুয়ো নিয়োগপত্র হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলতো ভুয়ো ট্রায়াল। বেশ কিছু ঘটনার পর তদন্তে পুলিশ তা জানতে পারে। পিঙ্কিকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হলেও আকাশ-বিকাশ মূলচক্রীর নাগাদ পায়নি রেল পুলিশ।