অর্ণব আইচ: ঘর ভরে উঠেছে মদিরার গন্ধে। জ্বলছে হালকা আলো। সুরেলা গানের সঙ্গে নেচে উঠেছে পানশালার সুন্দরীরা। আর সেই নাচের তালে সুন্দরীদের সামনে গিয়ে ক্রমাগত টাকা উড়িয়েই চলেছে এক যুবক। তারপর পট পরিবর্তন। উল্লাস চোখের নিমেষে পালটে গেল যখন সামনে এল পুলিশ। জানা গেল, শহরের একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মচারী ওই যুবক। ১৬ লাখ টাকা চুরি করে উধাও হয়ে যায়।
হুগলির ভদ্রেশ্বরে এই চুরির তদন্ত করতে গিয়ে পানশালায় টাকা ওড়ানোর তথ্য এসেছিল মধ্য কলকাতার হেয়ার স্ট্রিট থানার আধিকারিকদের কাছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে খদ্দের সেজে চন্দননগরের একটি পানশালায় হানা দেন গোয়েন্দারা। শেষ পর্যন্ত ওই পানশালা থেকেই গ্রেপ্তার হল সুমিত গোস্বামী নামে ওই যুবক।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত যুবক মধ্য কলকাতার পোলক স্ট্রিটে একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করত। সেই সূত্র ধরে প্রত্যেকদিন কত টাকা সংস্থায় আসছে, তার উপরও নজর রাখত সে। লেনদেনের টাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টেও জমা করে আসত ওই কর্মচারী। শুক্রবার ১৬ লাখ টাকা ওই সংস্থার তহবিলে আসে। সেই টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়ার ব্যবস্থা নেন সংস্থার মালিক। কর্মচারী সুমিতের উপরই দায়িত্ব পড়ে ব্যাংকে গিয়ে টাকা জমা দেওয়ার। কিন্তু ওই কর্মচারীর চোখে যে তখন নীল স্বপ্ন।
[আরও পড়ুন: ‘পথে নামার সময় আসেনি’, ভোট হিংসা নিয়ে আচমকাই অবস্থান বদল শুভাপ্রসন্নর!]
ব্যাংকের রাস্তায় না হেঁটে সোজা সেই টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায় সে। দুপুর পেরিয়ে বিকেল গড়ানোর পরও কর্মচারী অফিসে ফিরে না আসায় সন্দেহ হয় মালিকের। তিনি দেখেন, কর্মচারীর মোবাইল ফোন বন্ধ। ব্যাংকে খবর নিয়ে জানতে পারেন, ওই ১৬ লাখ টাকা আদৌ জমা পড়েনি। পোলক স্ট্রিটের ওই সংস্থার মালিক হেয়ার স্ট্রিট থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
পুলিশ টাকা চুরির তদন্ত শুরু করে সন্ধ্যার মধ্যেই সুমিতের বাড়ির ঠিকানা জানতে পারে। সেইমতো হুগলির ভদ্রেশ্বরে হানা দেন পুলিশ আধিকারিকরা। কিন্তু বাড়িতে তার দেখা মেলেনি। ভদ্রেশ্বরজুড়ে খোঁজখবর নিতে থাকে পুলিশ। রাতের দিকে তাঁদের কাছে খবর আসে যে, চন্দননগরের একটি পানশালায় সুন্দরী গায়িকাদের সামনে প্রচুর টাকা ওড়াচ্ছে এক যুবক। তার কাছ যে বেহিসাবি টাকা রয়েছে, সেই ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে যান আধিকারিকরা। সন্দেহের বশেই তাঁরা ভদ্রেশ্বর থেকে চন্দননগরের দিকে রওনা দেন।
গভীর রাতেও পানশালার ভিতর থেকে ভেসে আসছিল গান। পুলিশ আধিকারিকরা খদ্দের সেজে ভিতরে ঢুকে দেখেন, তখনও গায়িকাদের গানের তালে নেচে চলেছে ওই যুবক। তার সঙ্গে উড়িয়ে চলেছে টাকা। মুহূর্তের মধ্যেই তাকে শনাক্ত করেন পুলিশের সঙ্গে থাকা পোলক স্ট্রিটের সংস্থার মালিকের সঙ্গীরা। হাতেনাতে ধরা হয় সুমিতকে। শনিবার ধৃতকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে তাকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। ধৃতকে জেরা করে পুরো ১৬ লাখ টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।