shono
Advertisement

‘ইউটিউব’ দেখে জালিয়াতির শিক্ষা! কার্ড চুরি করে অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা সাফ, গ্রেপ্তার জালিয়াত

সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অভিযুক্তকে শনাক্ত করে টালিগঞ্জ পুলিশ।
Posted: 10:11 PM Oct 31, 2021Updated: 10:11 PM Oct 31, 2021

অর্ণব আইচ: ‘ইউটিউব’ দেখে জালিয়াতির শিক্ষা। তার আগে ছোটবেলা থেকেই হাতসাফাইয়ে হাত পাকিয়েছিল দক্ষিণ কলকাতার একটি নামী ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ক্লাস নাইন ড্রপআউট ওই ব্যক্তি। সম্প্রতি এটিএমে (ATM) ঢুকে এটিএম কার্ড হাতসাফাই করে এক বৃদ্ধের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে একলক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় সে। পরে অবশ্য টালিগঞ্জ থানার (Tollyganj) পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুরের বাসিন্দা সৌবীর বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

সহজে ধরা পড়বে না, এমনই ভেবেছিল বিষ্ণুপুরের ‘জালিয়াত’ সৌবীর ওরফে জয়দেব রায় ওরফে শেখ শাহিদ আলম ওরফে তনু। কিন্তু সপ্তমীতে পাড়ার পুজো দেখতে আসার পরই ‘তনুদা’র ইদানীং চেহারা ধরা পড়েছিল টালিগঞ্জ এলাকার জনক রোডের পাড়ার লোকজনের কাছে। আর সেই সূত্র ধরেই টালিগঞ্জ থানার হাতে ধরা পড়ে গেল এটিএম জালিয়াতির অভিযুক্ত সৌবীর। পুলিশের কাছে খবর ছিল, সম্প্রতি রিজেন্ট পার্ক ও কসবায় একই পদ্ধতিতে জালিয়াতি করেছে সে। এ ছাড়াও এখনও পর্যন্ত প্রায় কুড়িজনের কাছ থেকে সে জালিয়াতি করেছে বলেই খবর পুলিশের কাছে। সেই তথ্য পুলিশ যাচাই করছে। রবিবার আলিপুর আদালতে তোলা হলে তাকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।

[আরও পড়ুন: চার্জ দেওয়ার সময় ই-স্কুটারে বিস্ফোরণ, বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ল আগুন, দগ্ধ ৪]

পুলিশ জানিয়েছে, গত ২৮ অক্টোবর রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের একটি বেসরকারি ব্যাংকের এটিএমে টাকা জমা দিতে যান শরৎ বোস রোডের বাসিন্দা এক বৃদ্ধ। তিনি কার্ড ব্যবহার করেই ৬ হাজার টাকা জমা দেন। বেরিয়ে আসার সময়ই এটিএমে প্রবেশ করে সৌবীর ওরফে শাহিদ। সে বৃদ্ধকে জিজ্ঞাসা করে, তিনি যদি অ্যাকাউন্টের কেওয়াইসি  (KYC) আপডেট না করিয়ে থাকেন, তবে জমা দেওয়া টাকা থেকে এক শতাংশ ব্যাংক কেটে নেবেন। একদিন আগেই সে এটিএমে এক লাখ টাকা জমা দেওয়ার পর ব্যাংক টাকা কেটে নিয়েছে বলে দাবি করে। সম্ভ্রান্ত পরিবারের ওই ব্যক্তির কথা শুনে বিশ্বাস করেন বৃদ্ধ। তাঁকে সে বলে, এটিএমেই তিনি কেওয়াইসি আপডেট করিয়ে দিতে পারবেন। বৃদ্ধ ফের এটিএমে কার্ড সোয়াইপ করেন। তখনই পিন নম্বরটি দেখে নেয় সে। সাহায্য করার নামে সে বলে, তাঁর আপডেট হয়ে গিয়েছে। যদিও এটিএম থেকে আপডেট হওয়ার কোনও পদ্ধতি নেই।

[আরও পড়ুন: ‘আমি ওঁকে ঘৃণা করি’, কৈলাসকে বেনজির আক্রমণ বিজেপি নেতা তথাগত রায়ের]

তার টার্গেট ছিল বৃদ্ধর একটিএম কার্ড। যন্ত্র থেকে সৌবীর নিজেই কার্ডটি বের করে নেয়। নিমেষের মধ্যেই হাতসাফাই করে পাল্টে দেয় এটিএম কার্ড। ওই একই ব্যাংকের অন্য একটি এটিএম কার্ড বৃদ্ধর হাতে দিলেও তিনি কিছু বুঝতে পারেননি। বরং ধন্যবাদ দিয়ে বেরিয়ে যান। অভিযুক্ত চুরি করা বৃদ্ধর কার্ড ব্যবহার করে প্রথমেই এটিএমে মোবাইল নম্বর পাল্টে নেয়। এর পর সে এটিএম থেকে হাতিয়ে নেয় এক লাখ টাকা। কাছেই একটি চশমার দোকানে কার্ড ব্যবহার করে হাজার দু’য়েক টাকার একটি ফ্রেমও কেনে। মোবাইল নম্বর পালটানোর ফলে তাঁর মোবাইলে লেনদেনের মেসেজ আসেনি। পরে ই- মেলের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন যে, তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে উধাও হয়েছে লাখ টাকা। তিনি টালিগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।

পুলিশ তদন্ত শুরু করে এটিএম কার্ড থেকে লেনদেনগুলি খতিয়ে দেখে। ওই চশমার দোকান ও এটিএম কাউন্টারের সিসিটিভিতে (CCTV) তার মুখে মাস্ক ঢাকা ছবি উদ্ধার হয়। বিভিন্ন জায়গায় ওই ছবি দেখিয়ে চলে তদন্ত। টালিগঞ্জের জনক রোডের কয়েকজন বাসিন্দা ছবিটি দেখেই পুলিশকে জানান, এটি ‘তনুদা’র ছবি। সপ্তমীর দিনই পাড়ায় এসেছিল সে। তাতেই ধরা পড়ে যায় তার এখনকার চেহারা। পুলিশ জানতে পারে যে, অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্য সৌবীরের পরিবারের প্রত্যেকেই প্রতিষ্ঠিত। যদিও সে ক্লাস নাইন পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। ছোটবেলা থেকেই হাতসাফাইয়ে অভ্যস্ত ছিল সে।

[আরও পড়ুন: রাজীব ফিরতেই শতরূপের খোঁচা, ‘হজম করে নেব ডিঙিয়ে যাওয়ার পিঠে ব্যথাও’, পালটা দেবাংশুর]

বছর দু’য়েক আগে থেকে ‘ইউটিউব’ (Youtube) দেখে সে এটিএম কার্ড পালটানোর জালিয়াতি শেখে। বছর আটেক আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুরের বাসিন্দা এক মহিলাকে বিয়ে করে। দম্পতির একটি সন্তানও রয়েছে। স্ত্রীর কাছে নিজেকে ‘জয়দেব’ নামে পরিচয় দিয়েছিল সে। তার পুরনো একটি মোবাইল নম্বর পুলিশের হাতে এসেছিল। তার মাধ্যমে পুলিশ ওই ব্যক্তিকে শনাক্ত করে। শনিবার রাতে বিষ্ণুপুরে তল্লাশি চালিয়ে সৌবীরকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তাকে জেরা করে কোন কোন জায়গায় সে জালিয়াতি করেছে, তা জানার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement