স্টাফ রিপোর্টার: মাঝরাতে বোতলে সাপ নিয়ে সটান হাসপাতালে! ঘটনাস্থল কলকাতার এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (NRS Medical College) এমারজেন্সি বিভাগ। বুধবার রাত দেড়টা নাগাদ বোতল হাতে যুবককে দেখে হতচকিত লোকজন। চিকিৎসকরা নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না প্রথমে। এরপর টেবিলে ঠক করে বোতলটি রাখলেন যুবকটি। ডান হাতটি এগিয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘ডাক্তারবাবু, আঙুলে কামড়েছে। সাপটা মনে হয় গোখরো (Cobra)।’’
সাপ এবং রোগীকে এভাবে একসঙ্গে দেখে আরএমও ততক্ষণে সিনিয়র রেসিড্যান্টকে ডাক পাঠিয়েছেন। এমারজেন্সি ওয়ার্ডের টেবিলে বোতলবন্দি বিষধর সাপ ও রোগী হাজির – এই খবর তার মধ্যেই চাউর হয়ে গিয়েছে। সিনিয়র ডাক্তারবাবু ভাল করে নিরীক্ষণ করে বুঝলেন, বিষধর সাপ (Poisonous Snake)। গোখরোই বটে! দেরি না করে যুবককে ভরতি করার চিকিৎসা শুরু হল। প্রথমেই অ্যান্টিভেনাম ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। এরপরে রোগীর রক্তপরীক্ষা করে বুঝে নেওয়া হয়, ঠিক কী গোত্রের সাপ। হাসপাতাল সূত্রে খবর, সমীরণ জানাদের মাটির বাড়ি। রাতে সাপ ঘরে ঢোকে। তাকে ধরার চেষ্টা করতেই যুবকের ডানহাতে কামড়ে (Bite) দেয়। এরপরের ঘটনা হল, কামড় খাওয়া হাতেই সাপটি শক্ত করে পেঁচিয়ে ধরে কাচের বোতলে ঢুকয়ে দেন সমীরণ। আর তারপর ঘণ্টাখানেকের মধ্যে হাজির হন এনআরএস হাসপাতালের জরুরি বিভাগে।
[আরও পড়ুন: ৩ মাসের মধ্যে পরিযায়ী শ্রমিকদের রেশন কার্ড দিতে হবে , রাজ্যগুলিকে নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের]
এনআরএসের অধ্যক্ষ ডাঃ পীতবরণ চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘সল্টলেকের হাটগাছিয়া এলাকার বাসিন্দা ওই যুবককে ধন্যবাদ। কারণ সর্পাঘাতের পর বেশিরভাগ মানুষ আতঙ্কেই অর্ধমৃত হয়ে যায়। সেখানে সমীরণ জানা ভয় পাননি। সোজা হাসাপাতালে এসেছিলেন।’’ প্রায় ১৮ ঘণ্টা পার হয়েছে। সর্পাঘাতে অসুস্থ সমীরণ এখন অনেকটাই সুস্থ। তাঁর চিকিৎসা করছেন মেডিসিনের অধ্যাপক ডাঃ বাদলকুমার সাহু। তাঁর কথায়, ‘‘যুবকের সাহসের জন্য চিকিৎসা অনেক সহজ হয়েছে। সাপটিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রোটোকল মেনে অ্যন্টিভেনাম দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও অ্যাট্রোপিন এবং স্নায়ুর সমস্যা যাতে না হয়, তার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া হয়েছে। বিকেলে অনেকটাই সুস্থ। খাবার গিলতে পারছেন। কথাও বলতে পারছেন। রোগীর পরিবার সাপটি নিয়ে গিয়েছে জঙ্গলে ফিরিয়ে দেবে বলে।
[আরও পড়ুন: দাম্পত্য কলহের জের, ভরা আদালতে আইনজীবী সেজে স্ত্রীকে গুলি স্বামীর!]
সাপের বিষ নিয়ে গবেষণায় রাজ্যের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ফেসিলিটেটর স্নেহেন্দু কোনার জানিয়েছেন, ‘‘সাপ হাতের কাছে না পেলে তা খোঁজাখুঁজি করে সময় নষ্ট করা উচিত নয়। সর্পদষ্ট ব্যক্তি যত তাড়াতাড়ি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসবেন, তত দ্রুত সুস্থ হবেন।”