সুমিত বিশ্বাস, মানবাজার: বাড়ি থেকে একের পর এক ‘চুরি’ হয়ে যাচ্ছিল মুরগি। অবশেষে প্রান্তিক কৃষকের বাড়িতে ধরা পড়ল ‘চোর’। একের পর এক মুরগি খেয়ে নেওয়ার ক্ষোভ সামলে হাতে ধরে, কোলে তুলে ১০ ফুটের রক পাইথনকে নিয়ে হাজির বনদপ্তরে। সটান কার্যালয়ে ঢুকে ক্ষতিপূরণের দাবি!
শুক্রবার কার্যত এই নজিরবিহীন ঘটনায় স্তম্ভিত বান্দোয়ান ১ বনাঞ্চল কর্তৃপক্ষ। বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার সকাল ১০টা নাগাদ বান্দোয়ান ১ রেঞ্জ কার্যালয়ে একটি ময়াল সাপকে কোলে নিয়ে হাজির হন এক বৃদ্ধ। তাঁর কথায়, দীর্ঘদিন ধরে এক এক করে তার বাড়ি থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছিল মুরগি। মোট ১০টি মুরগি নিখোঁজের পর এদিন ধরা পড়ে ওই অজগর। দপ্তরের কাছে তিনি ওই সব মুরগির ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু প্রচণ্ড ক্ষোভেও ওই অজগরটিকে কোনওরকম আঘাত করেননি। বনদপ্তরের কথায়, এটা ধারাবাহিক সচেতনতা প্রচারের সুফল।
[আরও পড়ুন: ‘দিল্লির জল্লাদদের কাছে মাথা নত করব না’, ইডি দপ্তর থেকে বেরিয়ে তোপ অভিষেকের]
বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ শ্রেণিতে রক পাইথন এক নম্বরে রয়েছে। স্থানীয় সূত্রে খবর, বছর ৬০-র ওই বৃদ্ধের নাম চন্দন মুর্মু। বাড়ি কংসাবতী দক্ষিণ বনবিভাগের বান্দোয়ান ১ বনাঞ্চলের কেন্দাপাড়া গ্রামে। এদিন তিনি জানান, “রোজ রোজ মুরগি নিখোঁজের পর ভীষণ চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। আমি একজন প্রান্তিক কৃষক। চাষবাসের পাশাপাশি বাড়িতে কিছু হাঁস, মুরগিও রয়েছে। এদিন সকালে বাড়ি থেকে বার হওয়ার সময় দেখি একটি বিশালাকার অজগর সাপ। ফলে আর বুঝতে অসুবিধা হয়নি ‘মুরগি চোর’ কে?” সঙ্গে সঙ্গে ওই বন্যপ্রাণকে হাতে ধরে, কোলে তুলে চার কিমি পায়ে হেঁটে ক্ষতিপূরণের জন্য রেঞ্জ অফিসে যান। পরে তিনি বলেন, “বনদপ্তর থেকে আশ্বাস পেয়েছি ক্ষতিপূরণের। একটি ফর্ম দেওয়া হয়েছে। তা পূরণ করে জমা করতে বলা হয়েছে।”
বান্দোয়ান ১ রেঞ্জ কার্যালয় জানিয়েছে, উদ্ধার হওয়া ওই রক পাইথনটি লম্বায় ১০ ফুট। ওজন প্রায় ১৫ কেজি। ওই কৃষকের কাছ থেকে উদ্ধার করে সেটিকে জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বান্দোয়ান ১ রেঞ্জের আধিকারিক বিনয় মাহাতো বলেন,”ওই বৃদ্ধের প্রশংসা না করে পারছি না। কারণ ওই প্রান্তিক কৃষকের একের পর এক মুরগি খেয়ে ফেলার পরেও সাপটিকে বিন্দুমাত্র আঘাত না করে যেভাবে উদ্ধার করে কোলে তুলে চার কিমি পথ পেরিয়ে কার্যালয়ে পৌঁছে দিয়েছেন তা সত্যি প্রশংসনীয়।”
তার এই কাজে বহু মানুষ বন্যপ্রাণ বিষয়ে সচেতন হবে বলে মনে মনে করছেন কংসাবতী দক্ষিণ বিভাগের ডিএফও অসিতাভ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “সাধারণত কোন বন্যপ্রাণ ক্ষতি করলে তার ওপর ক্রোধ জন্মে যায়। কিন্তু ওই প্রান্তিক কৃষক বন্যপ্রাণকে ভালবেসে আমাদের কাছে নিয়ে এসেছেন। উনি বুঝেছেন পরিবেশের ভারসাম্যের কারণে ওই অজগরটিকে বাঁচিয়ে রাখা উচিত। ওই কৃষককে আমরা কীভাবে সম্মাননা প্রদান করতে পারি সেই বিষয়টি দপ্তর দেখছে।”