সুকুমার সরকার, ঢাকা: উদ্বোধনের আগেই বিপত্তি। অধিকৃত জমির ‘মূল্য না পাওয়ায়’ ভারত ও বাংলাদেশে বহু চর্চিত আখাউড়া-আগরতলা রেলপথে গাছ ফেলে অবরোধ করলেন শাহানূর সরকার নামের এক ব্যক্তি।
রবিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার শিবনগর এলাকায় রেললাইনের ওপর গাছ ফেলে ব্যারিকেড করেন শাহানূর। শিবনগর এলাকার বাসিন্দা তিনি। প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হওয়া আখাউড়া-আগরতলা রেলপথে আগামী ২২ আগস্ট পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চলাচলের কথা রয়েছে। এরপর সেপ্টেম্বর মাসে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী বহুল কাঙ্ক্ষিত রেলপথটির উদ্বোধন করবেন।
শুধু আখাউড়া-আগরতলাই যাতায়াতই নয়, রাজধানী ঢাকা-পদ্মাসেতু-যশোর-বনগাঁ হয়ে এই রেলপথ ধরে কলকাতা পৌঁছনো যাবে। সময় লাগবে মাত্র ১০ ঘণ্টা। কলকাতা থেকে আগরতলার দূরত্ব নতুন এই রেলপথের কারণে যেমন কমছে, ঠিক সেই রকমই আবার এই রেলপথ আন্তর্জাতিক রেলপথ হিসাবে গড়ে উঠছে। কেননা, এই রেলপথ তৈরির ক্ষেত্রে ভারত এবং বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগ রয়েছে।
বর্তমানে আগরতলা থেকে কলকাতা যেতে ট্রেনগুলিকে ঘুরপথে অর্থাৎ গুয়াহাটি হয়ে যেতে হয়। এর ফলে সময় লাগে প্রায় ৩৫ ঘন্টা। এখন নতুন রেলপথে ২৫ ঘন্টা বাঁচিয়ে মাত্র ১০ ঘণ্টায় পৌঁছে যাওয়া যাবে কলকাতা থেকে আগরতলা। প্রায় ২৫ ঘন্টা সময় বাঁচায় যাঁরা কলকাতা-আগরতলা যাতায়াত করেন তাঁরা নতুন এই রেলপথের জন্য মুখিয়ে রয়েছেন। চলতি বছর শেষের দিকেই অর্থাৎ ডিসেম্বর মাস নাগাদ ট্রেন চলাচল শুরু হয়ে যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
শাহানূর সরকারের অভিযোগ, আখাউড়া-আগরতলা রেলপথের কিছু অংশ তাঁর জমিতে পড়েছে। ভারত সীমান্তবর্তী শিবনগর এলাকায় তার ২৬ শতাংশ জায়গায় অধিগ্রহণ না করেই রেললাইন বসানো হয়েছে। পুরো রেলপথের নির্মাণ কাজ শেষ হতে চললেও এখনও পর্যন্ত জমির মূল্য হাতে পাননি তিনি। ফলে বাধ্য হয়ে তিনি তার জায়গার অংশে রেললাইনে গাছের বেড়া দিয়ে ব্যারিকেড দিয়েছেন।
[আরও পড়ুন: বাংলাদেশে শুরু নির্বাচনী তোড়জোড়, ‘পাশে থাকবে ভারত’, বিশ্বাস আওয়ামি লিগের]
আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টেক্সমেকো রেল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের প্রকৌশলী রিপন শেখ বলেন, “যে অংশে ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে সেখানে আপাতত আমাদের কোনও কাজ চলছে না। মূলত আমরা ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে যখন কাজ শুরু করি তখন শাহনূর প্রবাসে ছিলেন। সেজন্য তার জমির মূল্য পাননি। তবে বিষয়টি নিয়ে প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে কথা হয়েছে। দ্রুত শাহনূরকে তার জমির মূল্য বুঝিয়ে দেওয়া হবে।”
উল্লেখ্য, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া থেকে ভারতের আগরতলার নিশ্চিন্তপুর পর্যন্ত নির্মাণাধীন ডুয়েলগেজ রেলপথটির দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে ১০ কিলোমিটার। এর মধ্যে বাংলাদেশ অংশে পড়েছে প্রায় সাড়ে ছয় কিলোমিটার। প্রকল্পের কাজ করছে ভারতীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান টেক্সমেকো রেল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। ইতিমধ্যে প্রকল্পের ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এই রেলপথটি সরাসরি উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্যতম প্রবেশদ্বার আগরতলার সঙ্গে যুক্ত করবে বাংলাদেশকে। রাজধানী আগরতলা থেকে বাংলাদেশের সীমান্ত আখাউড়ার দূরত্ব মাত্র এক কিলোমিটার।