অর্ণব আইচ: তাঁর ছিল বাইক চালানোর নেশা। তাই পছন্দমতো একটি বাইক কিনতে নিজের বাড়ির আলমারি খুলে টাকা-গয়না লুঠ করতেও পিছপা হননি যুবক। এহেন 'গুণধর' ছেলের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছেও অভিযোগ দায়ের করেছিলেন বাবা। কিন্তু সেই নতুন বাইক কেনাই যে কাল হবে ভাবতে পারেনি কেউই। নিজের বাড়ি থেকেই 'চুরি'র টাকায় কেনা বাইক গভীর রাতে প্রচণ্ড গতিতে চালিয়ে আসার সময়ই দুর্ঘটনার কবলে পড়েন ওই যুবক। তাতেই মৃত্যু হল তাঁর। দুর্ঘটনার সময় যুবকের বাইকের পিছনে ছিলেন তাঁর এক বন্ধু। তিনি আহত হয়েছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার গভীর রাতে হেস্টিংস (Hastings) এলাকায় ঘটেছে এই দুর্ঘটনাটি(Bike Accident)। মৃত যুবকের নাম রাজ দাস (২৮)। তিনি দক্ষিণ কলকাতার বালিগঞ্জ (Ballygunge) এলাকার বেলতলা রোডে পেয়ারাবাগান অঞ্চলের বাসিন্দা। তাঁর মা পরিচারিকার কাজ করেন। বাবা দিনমজুর। রাজ বিশেষ কোনও কাজ করতেন না। বহুদিন ধরেই সে অভিভাবকদের উপর বাইক কেনার জন্য চাপ দিতে থাকে। কিন্তু তাঁকে বাইক কিনে দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না মা-বাবার। বুধবার সকাল থেকে ঘরে রাজ একাই ছিল। দুপুরে বাড়িতে ফিরে মা-বাবা দেখেন, ঘরের আলমারি খোলা। ভিতর থেকে উধাও যাবতীয় সোনার গয়না ও জমানো টাকা।
[আরও পড়ুন: ‘আর কথা বলব না’, হঠাৎ মুখে কুলুপ ‘বিদ্রোহী’ দিলীপের, তুঙ্গে রাজ্য সভাপতি পদের জল্পনা]
ছেলের এই কীর্তি মেনে নিয়ে পারেননি মা-বাবা। প্রচণ্ড রেগে গিয়ে বাবা রবি দাস বালিগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। মোবাইলের সূত্র ধরে তদন্ত শুরু হলে একবার তাকে ফোনে পাওয়া যায়। বাবাকে ছেলে জানায়, সে একটি 'সেকেন্ড হ্যান্ড' বাইক কিনেছে। আর ওই বাইক যে মায়ের গয়না ও বাবার টাকায়ই কেনা, তা কারও বুঝতে বাকি ছিল না। এর পর বেশ কিছুক্ষণ তার মোবাইল বন্ধই থাকে। রাতে মোবাইল অন করে রাজ তার বাবাকে জানায়, প্রতিবেশী ও বন্ধু গৌতম তাঁর সঙ্গে রয়েছে। তাঁরা বাড়ি ফিরছে।
পুলিশ (Police) রবিবাবুকে বলে, ছেলে বাড়ি ফেরার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। কিন্তু ভোররাত পর্যন্ত বাড়ি ফেরেনি ছেলে। তার মোবাইলও বন্ধ। এর মধ্যেই পুলিশের কাছে খবর আসে হেস্টিংস থানা এলাকার সেন্ট জর্জ গেট রোড ও ক্লাইড রো-এর সংযোগস্থলে একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। চালক ও আরোহী দুজনেরই হেলমেট ছিল। তাই আরোহী বেঁচে যান। কিন্তু চালকের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত লাগায় তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরে সেখানে মৃত্যু হয়।
সন্দেহের বশে বালিগঞ্জ থানার পুলিশ রবি দাসকে হেস্টিংস থানার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলে। পুলিশের সঙ্গে এসএসকেএম (SSKM) হাসপাতালে গিয়ে বাবা ছেলের দেহ শনাক্ত করেন। পুলিশের কাছে খবর, নতুন বাইক কেনার পর ছেলে তাঁর বন্ধুকে নিয়ে 'সেলিব্রেশন' করতে বের হয়। দুজনে মদ্যপানও করে। ওই অবস্থায় বাড়ি ফেরার সময় বেপরোয়া গতিতে থাকা বাইকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডিভাইডারে ধাক্কা দেয়। চালক ও আরোহী ছিটকে পড়ে বাইক থেকে। রক্তাক্ত অবস্থায় দুজনকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে চালক রাজের মৃত্যু হয়। আহত যুবককে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে।