দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: এ যেন সিনেমার চিত্রনাট্যকেও হার মানানো ঘটনা। করোনা ভাইরাসের (Coronavirus) থাবা প্রায় কেড়েই নিচ্ছিল প্রাণ। কিন্তু তার মারণ ক্ষমতার সঙ্গে যুঝে ফের জীবনের মুখ দেখেছেন স্ত্রী। এই আনন্দ চিরস্থায়ী করে রাখতে নার্সিংহোমেই স্ত্রীকে দ্বিতীয়বার বিয়ে করে ফেললেন নবদ্বীপের পঞ্চাশোর্ধ্ব এক ব্যক্তি। বাড়ি ফেরারও অপেক্ষা করলেন না। তার আগেই নার্সিংহোমের ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মীদের সাক্ষী রেখে হুইল চেয়ারে বসে থাকা স্ত্রীর গলায় পরিয়ে দিলেন মালা। নতুন করে তাঁরা আবদ্ধ হলেন বিবাহ বন্ধনে। বৃহস্পতিবার আনন্দঘন এই মুহুর্তের সাক্ষী রইল চুঁচুড়ার একটি বেসরকারি নার্সিংহোম।
নবদ্বীপের দম্পতি বছর একান্নর শ্যামল রায় এবং বিয়াল্লিশ বছরের রুমা রায়। গত ২৮ নভেম্বর কোভিড আক্রান্ত হন দু’জনই। স্থানীয় হাসপাতালে ভরতি হন তাঁরা। শ্যামলবাবু উপসর্গহীন হওয়ায় দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন। কিন্তু স্ত্রীর অবস্থা ক্রমশ আশঙ্কাজনক হয়ে পড়ে। দিশেহারা শ্যামল রায় স্ত্রীকে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় স্ত্রীকে নিয়ে ছুটে যান হুগলির (Hooghly) চুঁচুড়ার এক বেসরকারি নার্সিংহোমে। সেখানে রুমাদেবী ভরতি হওয়ার পর চিকিৎসকরা প্রাথমিক পরীক্ষার পর জানিয়ে দেন, তাঁর শরীরে সংক্রমণের মাত্রা ৯৫ শতাংশ, রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা ৫৪ শতাংশ। চিকিৎসকরা তেমন কোনও আশ্বাস দিতে পারেননি। শুধু শ্যামলবাবুকে মন শক্ত করে ভগবানের উপর ভরসা রাখার কথা বলেন। সেই ভরসাতেই শুরু হয় অপেক্ষার প্রহর গোনা।
[আরও পড়ুন: শুভেন্দুর সঙ্গে বৈঠকের পরই ইস্তফা কর্নেল দীপ্তাংশু চৌধুরির, পদ ছাড়লেন আরও একাধিক নেতা]
ঈশ্বরের কৃপা হোক কিংবা রুমাদেবীর অদম্য লড়াই – যে কোনও কারণেই হোক, কয়েকদিন চিকিৎসার পরই তাঁকে নিয়ে আশার আলো দেখা দেয়। চিকিৎসায় সাড়া দিয়ে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠতে থাকেন রুমাদেবী। চিকিৎসক ও সিস্টারদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও চেষ্টায় সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি। বৃহস্পতিবার ঘরে ফেরার পালা। আর এই মূহুর্তকে স্মরণীয় করে রাখতে নার্সিং হোমের ভিতরই ছোটোখাটো বিয়ের অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নতুন করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন শ্যামলবাবু-রুমাদেবী। বিয়ে উপলক্ষে সামান্য খাওয়াদাওয়ারও আয়োজন করা হয়।
[আরও পড়ুন: গণধর্ষণের পরেও দায়ের শ্লীলতাহানির অভিযোগ! ভাতার থানার সামনে বিক্ষোভ আদিবাসীদের]
এই আনন্দে শামিল হয়ে শ্যামলবাবুর প্রতিক্রিয়া, একসময় তিনি স্ত্রীকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু ডাক্তারবাবু ও সিস্টারদের চেষ্টায় স্ত্রীর নতুন করে জন্ম হয়েছে বলে মনে করছেন তিনি। তাই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের কাছে চিরকৃতজ্ঞ। বলছেন, ”ওঁরা না থাকলে স্ত্রীকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারতাম না।” চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, সবসময়েই তাঁদের চেষ্টা থাকে, রোগী যাতে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন। এক্ষেত্রে রুমাদেবীকে বাঁচিয়ে তুলতে পেরে তাঁরাও খুব খুশি। এই দিনটা অন্যরকমভাবে স্মৃতিমেদুর হয়ে রইল চুঁচুড়ার নার্সিংহোমে।