প্রণব সরকার, আগরতলা: সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে যেদিন আত্মীয়ের বাড়ি গিয়েছিলেন তখন তিনি ২৫ বছরের তরতাজা যুবক। কিন্তু যেদিন ফিরলেন সেদিন বয়স ৬২ পেরিয়ে গিয়েছে। মাথার চুল অর্ধেক ফাঁকা, পাক ধরেছে বাকি অংশে। চোখে-মুখে বার্ধক্যের ছাপ স্পষ্ট। জীবনের ৩৭টি বছর রাষ্ট্রযন্ত্রের যাঁতাকলে পেষাই হয়ে ত্রিপুরার যুবক ভুলে গিয়েছে নিজের জন্মভিটে। হয়ত মেনেও নিয়েছিলেন জীবনের বাকি দিনগুলি কেটে যাবে ভিনদেশের কালকুঠুরিতেই। তবে ৩ যুগ পর 'ভাগ্যদেবতা' সদয় হলেন শাহজাহান ওরফে বিলাশের উপর।
সালটা ১৯৮৮। বাংলাদেশের কুমিল্লায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন ত্রিপুরার সোনামুড়া দুর্গাপুরের বাসিন্দা শাহজাহান। ঠিক সেই দিনই তাঁর আত্মীয়ের বাড়িতে হানা দেয় বাংলাদেশ পুলিশ। অনুপ্রবেশের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় ২৫ বছর বয়সি ওই যুবককে। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী বিচারে ১১ বছরের সাজা হয় শাহজাহানের। তবে পরিস্থিতি এত সহজ ছিল না। কুমিল্লার কেন্দ্রীয় কারাগারে ১১টা বছর কালকুঠুরিতে বসে তিনি দিন গুনেছেন বাড়ি ফেরার। তবে মুক্তি এত সহজ ছিল না। সাজার মেয়াদ পার হলেও অবৈধভাবে জেলে বন্দি করে রাখা হয় তাঁকে। এভাবেই পার হচ্ছিল দিন-মাস-বছর। বাড়িতে তাঁর স্ত্রী-সন্তানও শাহজাহানের মুক্তির আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন।
[আরও পড়ুন: রাহুল গান্ধী ব্রিটেনের নাগরিক! স্বামীর দাবিতে জনস্বার্থ মামলার নির্দেশ দিল্লি হাই কোর্টের]
ঠিক সেই সময় ত্রিপুরার এই যুবকের দুর্দশার খবর পায় ত্রিপুরার এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা জারা ফাউন্ডেশন। সংস্থার চেয়ারম্যান মোশাহিদ আলির উদ্যোগে অবশেষে আন্তর্জাতিক সীমান্ত পেরিয়ে ত্রিপুরায় নিজের ভিটেয় ফিরলেন শাহজাহান। মঙ্গলবার কুমিল্লার বিবির বাজার-সোনামুড়া শ্রীমন্তপুর চেকপোস্ট দিয়ে উভয় দেশের আইনি পদ্ধতি মেনে পরিবারে হাতে হস্তান্তর করা হয় শাহজাহানকে। ৩৭ বছর পর স্ত্রী ও পুত্রের মুখ দেখতে পেয়ে খুশি বৃদ্ধ। পরিবারের দাবি, তিনি যখন বাংলাদেশে গিয়েছিলেন তখন তাঁর স্ত্রী গর্ভবতী ছিলেন। তখন ছেলে যুবক।
[আরও পড়ুন: ভক্তদের জন্য খুশির খবর, পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের মহাপ্রসাদ এবার বিনামূল্যে!]
অবশেষে ঘরে ফেলে উল্লসিত শাহজাহান বলেন, ''আমি কতখানি আনন্দিত তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। আমার মনে হচ্ছে আমার পুনর্জন্ম হয়েছে। নরক থেকে স্বর্গে ফিরেছি আমি। আমি কখনও ভাবতেও পারিনি, যে আবার জন্মভূমিতে ফিরে আসতে পারব। জারা ফাউন্ডেশন আমার জন্য যা করেছে সে ঋণ কখনও শোধ করতে পারব না আমি।" বাংলাদেশের সে ভয়াবহতা স্মরণ করে তিনি বলেন, "গ্রেপ্তার করার পর ১৪ দিন ধরে নৃশংস অত্যাচার করা হয় আমাকে। ১১ বছর জেলবন্দি থাকার পর, আমায় অন্য জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে মিথ্যে মামলায় ২৬ বছর ধরে বন্দি করে রাখা হয় আমাকে।"