shono
Advertisement

মরা পায়ে প্রাণ ফেরাল সূচ! ২ টাকায় বিরল রোগ সারাল কলকাতার হাসপাতাল

বর্তমানে সম্পূর্ণ সুস্থ ওই রোগী।
Posted: 01:48 PM Dec 13, 2022Updated: 01:48 PM Dec 13, 2022

অভিরূপ দাস: ছোট্ট ঘা। বাড়তে বাড়তে তা-ই মারাত্মক। পায়ের ধমনির রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ঘা পরীক্ষা করে জবাব দিয়েছিল বাইপাসের ধারের বেসরকারি এক হাসপাতাল। কোনও উপায় নেই। কেটে বাদ দিতে হবে গোড়ালি। বছর সত্তরের রাহুল ভট্টাচার্যে‌র বাড়িতে কান্নার রোল। বাকি জীবনটা হাঁটবেন কী করে? সাতপাঁচ ভেবে আকুপাংচার হাসপাতালের দ্বারস্থ হয়েছিলেন রোগী। ওষুধ কিছু নেই। ট্রিটমেন্ট মানে সূচ ফোটানো। তাতে সারবে পায়ের ঘা? একমাস চিকিৎসার পরেই যান ফিরতে শুরু করে পায়ে। এই মুহূর্তে দিব্যি চাঙ্গা রাহুল ভট্টাচার্য‌। স্বচ্ছন্দে‌ হাঁটছেন।

Advertisement

কলকাতায় রাজ‌্য সরকারের একমাত্র আকুপাংচার হাসপাতাল ডা. বি কে বসু মেমোরিয়াল রিসার্চ অ‌্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট অফ আকুপাংচারের ডিরেক্টর ডা. হীরালাল সামন্ত জানিয়েছেন, চিকিৎসায় অভাবনীয় উন্নতি হয়েছে। বার্জারস ডিজিজের একমাত্র উত্তর আকুপাংচার। কী এই অসুখ? চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সাধারণত যাঁরা অতিরিক্ত ধূমপান করেন তাঁদের মধ্যেই দেখা যায় এই অসুখ। তামাকের নিকোটিন ধমনির মধ্যে ভ‌্যাসোস্পাজম ঘটায়। ধমনির মধ্যে রক্ত চলাচলে ব‌্যাঘাত ঘটে। দেখা গিয়েছে, যে রাজ্যে ধূমপায়ী বেশি, সেখানে বার্জারস ডিজিজের রোগীর সংখ‌্যাও অত‌্যধিক।

[আরও পড়ুন: ‘মেরে ফেলা হয়নি তো?’, লালন শেখের মৃত্যুতে প্রশ্ন কুণালের, তদন্তের দাবি সুকান্তের]

অসুখের প্রাথমিক উপসর্গ পায়ের নখ কালো হয়ে যাওয়া। পায়ের ধমনিগুলো বন্ধ হয়ে যায়। সামান‌্য পা ফেটে যাওয়াও তখন মারাত্মক আকার নেয়। যেমনটা হয়েছিল সত্তরোর্ধ্ব ওই ব‌্যক্তির। ডায়াবেটিস আক্রান্ত ওই রোগীর পায়ের অবস্থা হয়েছিল সাংঘাতিক। মাত্র দু’টাকার টিকিট কেটে চিকিৎসা শুরু হয় আকুপাংচার হাসপাতালে। এ পদ্ধতিতে পায়ে ছয় থেকে আটটা সূচ ঢোকানো হয়। একেকবার সূচ ঢুকিয়ে রাখতে হয় কুড়ি থেকে ত্রিশ মিনিট। সপ্তাহে কমপক্ষে চারবার এই সূচ ঢোকানোর প্রক্রিয়া চলে। চিকিৎসকের দাবি, টানা চারমাস আকুপাংচার চললেই বার্জারস ডিজিজ নিরাময় হবে। সূচ ফোটালে যেটা হয় চিকিৎসা পরিভাষায় তার নাম নিও ভাস্কুলারাইজেশন। নতুন রক্তনালির সৃষ্টি হয়। গ‌্যাংগ্রিন বাড়তে পারে না।

রাজ্যের একমাত্র আকুপাংচারের সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। স্রেফ দু’টাকার টিকিট কাটলেই চলে। হাসপাতালের ডিরেক্টর ডা. হীরালাল সামন্ত জানিয়েছেন, সূচ কিনে দেয় রাজ‌্য সরকার। এই মুহূর্তে গড়ে চল্লিশজন করে রোগী আসেন হাসপাতালে। চিকিৎসকরা বলছেন, শুধু আর্থ্রাইটিস বা স্নায়ুর চিকিৎসা নয়, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে আকুপাংচারের মাধ‌্যমে। রাজ্যে একসময় তেত্রিশটা সেন্টার ছিল। যা এখন কমতে কমতে দাঁড়িয়েছে বাইশটিতে। এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গ আকুপাংচার কাউন্সিলের রেজিস্টার্ড প্র‌্যাকটিশনার প্রায় পাঁচশো। এঁদের প্রত্যেকের রেজিস্ট্রেশন নম্বর রয়েছে। আকুপাংচার চিকিৎসকের সংখ‌্যা পাঁচশো হলেও প্র‌্যাকটিস করছেন মাত্র জনা দেড়শো। হীরালাল সামন্তর কথায়, ‘‘অনেকেই ভাবছেন এই স্ট্রিমে গিয়ে কী হবে? অথচ যাঁরা প্র‌্যাকটিস করছেন তাঁরা যথেষ্ট ভাল আয় করছেন।’’

[আরও পড়ুন: ‘মেরে ফেলা হয়নি তো?’, লালন শেখের মৃত্যুতে প্রশ্ন কুণালের, তদন্তের দাবি সুকান্তের]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement