নব্যেন্দু হাজরা: আমের বাজারে ছুটছে চেন্নাই এক্সপ্রেস। হিমসাগর, শরি, বোম্বাই আছে বটে। কিন্তু মাঝবৈশাখে বাজার ভরেছে মাদ্রাজি আমে। গোলাপখাস, বেগুনফুলি আর পারিকুল। এই তিন আমেই মজেছে বঙ্গবাসী। ঝুড়িতে থরে থরে সাজানো ফলের রাজা। পারিকুল, বেগুনফুলি পুরো হলুদ। আর গোলাপখাসের মুখটা লাল।
এখনও কাঁচা আম ঝুলছে গাছে গাছে। তবে ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাসে অনেকেই কাঁচা আমই গাছ থেকে পেড়ে কার্বাইড দিয়ে পাকিয়েছেন। সেই স্থানীয় আম বাজারে এলেও তাতে তেমন গন্ধ নেই এখনও। তাই বাঙালিকে আমের স্বাদ দিতে বাজার ভরেছে ভিনরাজ্যের পারিকুল, গোলাপখাস, বেগুনফুলিতে। তবে খুচরো বাজারে তার দামও ১০০ টাকার আশপাশে। কলকাতার মেছুয়ায় আম আসছে বটে, তবে বেশিরভাগই ভিনরাজ্যের। পারিকুল, গোলাপখাস, সবই আসছে চেন্নাই থেকে। বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, হিমসাগরও উঠতে শুরু করেছে। তবে তা গাছপাকা নয়। বেশিরভাগই কার্বাইডে পাকানো। আর ঝড়ের আশঙ্কায় গাছ যাঁরা জমা নেন, তাঁরা আম পাকার আগেই পেড়ে ফেলেন। পরে কার্বাইড দিয়ে নেন।
[আরও পড়ুন: ‘রাজ্যে সাংবিধানিক সংকট তৈরি হলে হ্যামলেটের মতো বসে থাকব না’, ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য রাজ্যপালের]
ব্যবসায়ীদের কথায়, সপ্তাহখানেকের মধ্যেই চলে আসবে মালদহ, মূর্শিদাবাদ, নদিয়া, হুগলি আর উত্তর ২৪ পরগনার আম। চাষিরা জানাচ্ছেন, এবছর আমের ফলন ভাল। গত বছর ফলন খারাপ ছিল। স্থানীয় মার্কেটের আম বাজারে ছেয়ে গেলেই দাম কমবে। এগুলো আসলে ভিনরাজ্য থেকে এসেছে। তাই দাম কমার খুব একটা সম্ভাবনা নেই। শিয়ালদহের ফল বিক্রেতা সুবল দাসের কথায়, ‘‘বছরের প্রথম মরশুমের আম খেতে সকলেরই ইচ্ছা থাকে। কিন্তু এখন বাজারে রাজ্যে সস্তা আমের দেখা নেই। বাইরের আমের চড়া দাম। লোকাল হিমসাগর আছে বটে। তবে তা-ও ভাল আম খুচরো বাজারে ৮০ টাকা ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’’
তিনি আরও জানান, মালদহের আম একটু দেরিতেই আসে। এপ্রিলের শেষ বা মে মাসের প্রথমদিকে গাছপাকা আম বাজারে আসবে। পাশাপাশি অন্য জেলার আম বাজারে ঢুকলেই দাম কমবে। এই বাজারেরই এক পাইকারি আম বিক্রেতা শেখ আলম জানালেন, ‘‘এখন আমের বাজার চড়া থাকবেই। সামনের ঘূর্ণিঝড়ে যদি আম ঝরে যায়, তখন হয়তো দাম কিছুটা কমবে। সাধারণত মে মাসের শেষের দিকে হিমসাগর, ল্যাংড়া আম গাছে পাকে। তখন দাম কিছুটা কমে।
[আরও পড়ুন: চণ্ডীপুরে ‘কনভয়ে’ যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় হাই কোর্টে মামলা শুভেন্দুর, CBI তদন্ত দাবি]
ক্রেতারা বলছেন, বাজারে গিয়ে ঝুড়ি ঝুড়ি আমের সামনে দাঁড়ালেও কোনও গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যবসায়ীদের ব্যাখ্যা, এই সময় বাজারে জোগান দিতে গিয়ে কার্বাইডেই পাকানো হয়েছে বেশিরভাগ আম। ফলে গাছপাকা না হওয়াতেই তাতে খুশবু উধাও। চাষিরা বলছেন, বেশিরভাগই গাছপাকা না হওয়ায় মিষ্টি হলেও এই আম খেয়ে এবার বাঙালির সুখানুভূতি হচ্ছে না।
মালদহ জেলায় ল্যাংড়া, ফজলি, হিমসাগর, আশ্বিনা, গোপালভোগ-সহ ৩০ টিরও বেশি প্রজাতির আম চাষ হয়। তাছাড়া নদিয়া, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, বারাসত, বসিরহাট, হুগলির, মানকুন্ডু, ব্যান্ডেল, চন্দননগরেও প্রচুর আমবাগান আছে। কিন্তু এখনও সেখানে বেশিরভাগ বাগানেই আম গাছে ঝুলছে। গাছ জমা নেওয়া এক ব্যক্তির কথায়, একটা বড় অংশের আম পেড়ে ফেলা হয়েছে ঝড়বৃষ্টির আশঙ্কায়। সগুলো কার্বাইডে পাকানো হয়েছে। আর কিছু আম রয়েছে গাছে গাছপাকার জন্য। এগুলো দামেও বেশি হবে। ওয়েস্ট বেঙ্গল ভেন্ডার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কমল দে বলেন, “এবার আমের ফলন ভাল। তবে গাছপাকা এখনও ওঠেনি।’’