গোবিন্দ রায়: বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রশ্নের মুখে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য। প্রায় ২৯ মিনিট ধরে চলে জিজ্ঞাসাবাদ। “সত্য সামনে আসুক। সত্য সুন্দর”, বিচারপতির কাছে আরজি তাঁর।
দুপুর ৩টে ১৬ নাগাদ হাই কোর্টে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে হাজির করা হয় মানিককে। বিচারপতি প্রথমেই প্রশ্ন করেন, “২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পর্কে কী জানেন?” মানিক বলেন, “আদালত ডেকেছে তাই এসেছি। আমি জেলে রয়েছি। আমার কাছে কোনও তথ্য বা নথি নেই। তাই স্মরণে যা আছে তাই বলতে পারি।” বিচারপতির দ্বিতীয় প্রশ্ন, “২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সিলেকশন কমিটি তৈরি করা হয়েছিল?” মানিক বলেন, “হ্যাঁ, করা হয়েছিল। যা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল তা পর্ষদ নিয়েছিল।” বিচারপতির পরের প্রশ্ন, “২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ার কে ফলপ্রকাশ করেছিল?” মানিক উত্তর দেন। বলেন, “এই প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ধাপ রয়েছে। যেমন টেট পরীক্ষার ফলপ্রকাশ, ইন্টারভিউ, অ্যাপ্টিটিউট টেস্ট ইত্যাদি। ফলে এগুলি বিভিন্ন পর্যায়ে হয়েছিল।” বিচারপতি আরও বলেন, “বাইরের কোনও সংস্থাকে রেজাল্ট প্রস্তুত করার জন্য নিয়োগ করা হয়েছিল?” মানিকের উত্তর, “এই পুরো প্রক্রিয়া পর্ষদ পরিচালনা করছে। তবে হ্যাঁ, একটি সংস্থাকে নিয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু এখন তার নাম স্মরণে নেই।”
[আরও পড়ুন: শুভেচ্ছা বা অভিনন্দন নয়, বলুন শুভনন্দন! নতুন শব্দ শেখালেন মুখ্যমন্ত্রী]
বিচারপতি এরপরই এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানির প্রসঙ্গ তোলেন। জিজ্ঞাসা করেন মানিক ওই সংস্থার নাম শুনেছেন কিনা? মানিক বলেন, “হ্যাঁ, ওই ধরনের নাম শুনেছি। কিন্তু নিশ্চিত নই।” বিচারপতির প্রশ্ন, “সভাপতি হিসাবে আপনার সময় নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা ঠিক?” মানিক বলেন, “অ্যাপ্টিটিউট টেস্ট নেওয়া হয়েছিল। তখন কেউ কোনও অভিযোগ করেনি। এমন কোনও রিপোর্ট আমার কাছে আসেনি।” বিচারপতির প্রশ্ন, “ওই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ নীতি মানা হয়েছিল এটা আপনি নিশ্চিত করে বলতে পারবেন?” মানিক বলেন, “যতদূর মনে পড়ছে আইন অনুযায়ী হয়েছিল।”
এজলাস ছাড়ার আগে মানিক ভট্টাচার্য বিচারপতির উদ্দেশ্যে বলেন, “যাওয়ার পথে একটা অনুরোধ করব। এই সংক্রান্ত যেকোনও মামলায় আমাকে ডেকে পাঠাবেন। ১৫ মিনিট আগে বললেই আমি চলে আসব। পরে আমার বিরুদ্ধে যাই পদক্ষেপ করবেন, মেনে নেব।” বিচারপতি বলেন, “সত্য সামনে আসা দরকার।” মানিক বলেন, “আমি সত্যিটাই বলতে চাই। সত্য সহজ। সত্য সুন্দর।” প্রশ্নোত্তর পর্বের শেষে মানিক ভট্টাচার্যকে ডেপুটি শেরিফের ঘরে নিয়ে গিয়ে বসানোর কথা বলেন বিচারপতি। তাঁকে চা, কফি, ঠান্ডা পানীয় দেওয়ার নির্দেশ দেন। এরপর বিচারপতি খানিকটা আক্ষেপের সুরে বলেন, “দশচক্রে ভগবান ভূত। মানিক ভট্টাচার্য আমাদের ডেপুটি শেরিফের শিক্ষক ছিলেন।” এজলাসের ভিতরে মানিক ভট্টাচার্যর সঙ্গে একান্তে প্রায় ১০ মিনিট কথা বলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।