স্টাফ রিপোর্টার: কুকি ও মেতেই জনগোষ্ঠীর সংঘর্ষে অগ্নিগর্ভ মণিপুরে শান্তি ফেরাতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) হস্তক্ষেপ চাইলেন শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া ক্ষতিগ্রস্তরা। এমনকী, স্বয়ং রাজ্যপাল অনুসুইয়া উইকেও তৃণমূল সাংসদদের টিমের কাছে মমতাকে নিয়ে তাঁর সন্তোষের কথা ব্যক্ত করেছেন। বুধবার তৃণমূলনেত্রীর নির্দেশে পাঁচ সাংসদের প্রতিনিধি দল ইম্ফলে পৌঁছয়।
প্রতিনিধি দলে ছিলেন সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন, ডা. কাকলি ঘোষদস্তিদার, দোলা সেন, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুস্মিতা দেব। বিশেষ অনুমতি নিয়ে হেলিকপ্টারে করে পাহাড়ি এলাকা চুড়াচাঁদপুরের শরণার্থী শিবিরে যাণ তৃণমূল সাংসদরা। উল্লেখ্য, দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষের পর অগ্নিগর্ভ মণিপুরে(Manipur Violence) তৃণমূলই প্রথম বাস্তব পরিস্থিতি জানতে টিম পাঠাল। শরণার্থী শিবির ঘুরে বিকেলে রাজ্যপালের সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলেন তৃণমূল সাংসদরা। তবে, শরণার্থী শিবির থেকে শুরু করে রাজভবনের কর্তারা আশাবাদী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন বিষয়টিতে নজর দিয়েছেন, তখন নিশ্চয়ই মণিপুরে শান্তি ফিরবে। ইম্ফল থেকে শুরু করে সীমান্তের রাজ্যের বাসিন্দারাও সকলেই আশাবাদী, এবার নিশ্চয়ই চাপে পড়ে কেন্দ্রীয় সরকারও ব্যবস্থা নেবে। বিজেপি শাসিত এই রাজ্যে তিন মাসের বেশি গোষ্ঠী সংঘর্ষে ৫৮ হাজার মানুষ শরণার্থী শিবিরে। ৩০০-র বেশি মানুষ মারা গিয়েছেন। কিন্তু, কেন্দ্র উদাসীন বলে অভিযোগ।
[আরও পড়ুন: গুজরাটে ভয়াবহ পথ দুর্ঘটনা, মৃত কমপক্ষে ৯]
দুটি অস্থায়ী শিবিরে কুকি জনজাতির শরণার্থীরা রয়েছেন। একটিতে ১ হাজার ৬০০ জন। অন্যটিতে ২০০ জন থাকছেন। তৃণমূল সাংসদরা পৌঁছেই দোভাষী সঙ্গে নিয়ে কথা শুরু করেন শরণার্থীদের সঙ্গে। প্রায় তিন মাসের বেশি সংঘর্ষের জেরে ঘরের বাইরে যাওয়া বন্ধ মণিপুরবাসীর। দমবন্ধ করা পরিবেশে কীভাবে দিন কাটাচ্ছেন সেই অবর্ণনীয় কষ্টের কথা শরণার্থীরা সাংসদদের কাছে তুলে ধরেন। টেলিফোনে ইম্ফল থেকে রাতে দোলা সেন জানান, ‘‘দমবন্ধ করা গুমোট পরিবেশ। পাখা নেই। দু’বেলা ফ্যানভাত খেয়ে দিন কাটছে। এরই মধ্যে শরণার্থী শিবিরেই গত দু’মাসে দুটি শিশু জন্ম নিয়েছে। তাদের জন্য কোনও বেবিফুডের ব্যবস্থা নেই।’’ ভয়ংকর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকা মানুষগুলোর বক্তব্য ভিডিও করেছেন তৃণমূল সাংসদরা।
চুড়াচাঁদপুর থেকে ফিরে ইম্ফলে এসে শহরের উপকণ্ঠে আকামপাট এলাকায় মেইতেই গোষ্ঠীর শিবিরে যান। সেখানে ১ হাজার ৭২০ জন শরণার্থী রয়েছেন। তাদের সঙ্গেও দোভাষীর মাধ্যমে কথা বলেন তৃণমূলের পাঁচ সাংসদ। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তাঁদের বক্তব্য শুনে নেন। সংঘর্ষের নেপথ্যের কাহিনিও জেনে নেন। সকলেই দুর্বিষহ জীবনের ইতি টানতে চান। টেলিফোনে সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার জানিয়েছেন, “জনশূন্য রাস্তা, ইন্টারনেট বন্ধ। দোকান-বাজার, স্কুল-কলেজ দীর্ঘদিন ধরেই বন্ধ। ঘর থেকে বাইরে বেরোলেই বন্দুক হাতে সেনা দাঁড়িয়ে। প্রতিদিনই মানুষের মৃত্যু হলেও মণিপুরের ‘ডবল ইঞ্জিন’ সরকার নিশ্চুপ।” এরপরই অবশ্য কাকলি বলেন, “শরণার্থী শিবিরের অসহায় শিশু-মায়েদের মুখের দিকে তাকানো যায় না। যে শরণার্থী শিবিরেই আমরা গিয়েছি, সেখানেই সবাই বলেছেন, ‘যুদ্ধ চলছে’। এমনকী, রাজ্যপালও রাজভবনে বসে আলোচনার সময় স্বীকার করলেন ‘যুদ্ধ চলছে’। অথচ কেন্দ্রীয় সরকার নীরব।”
[আরও পড়ুন: গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়! BRICS সম্মেলনে যাচ্ছেন না পুতিন]
রাজ্যপাল অনুসুইয়া উইকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি তাঁর সন্তোষের কথা তৃণমূলের প্রতিনিধি দলের কাছে তুলে ধরেন। তিনিও রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন। সাংসদ কাকলি দাবি করেন, “রাজ্যপাল একসময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মস্কোতে যুব উৎসবে একই প্রতিনিধি দলে ছিলেন। সংসদেও দেখা-কথা হত। বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি তাঁর যথেষ্ট আস্থা রয়েছে।” সাংসদ সুস্মিতা দেব ইম্ফল রওনা হওয়ার আগে বিমানবন্দরে বলেন, “বাংলার মুখ্যমন্ত্রী গত জুন মাসে প্রথমবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে মণিপুর সফরের জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু, মুখ্যমন্ত্রীকে মণিপুর যেতে দেওয়া হয়নি। আজ সবাই বলছে, মণিপুর ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।’’ আজ, বৃহস্পতিবার কলকাতা ফিরে এসে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট জমা দেবেন তৃণমূল সাংসদরা।