শুভময় মণ্ডল ও তনুজিৎ দাস: ‘‘যে সমস্ত বীরপুরুষদের তণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পাশে পাইনি, তাঁরাই ফেসবুকে বীরত্ব দেখাচ্ছেন৷” মণিরুল ইসলাম যোগ দেওয়ায় বিজেপির অন্দরেই যে সমালোচনার ঝড় উঠেছে, ঠিক এই ভাষাতেই সেই সমালোচকদের উত্তর দিলেন অনুপম হাজরা৷ লাভপুরের তৃণমূল বিধায়ক গেরুয়া শিবিরে নাম লেখানোয়, তাঁকে যে কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে, ফেসবুকে তার বিরুদ্ধেও সাফাই দিলেন যাদবপুরের পরাজিত বিজেপি প্রার্থী৷ যদিও পরে ভিডিওটি ফেসবুক থেকে ডিলিট করে দেন তিনি৷
[ আরও পড়ুন: ফলাফল পর্যালোচনায় কোর কমিটির বৈঠক তৃণমূলের,বাড়ছে রদবদলের সম্ভাবনা ]
ফেসবুকের ওই ভিডিওটিতে অনুপম হাজরা অভিযোগ করেন, মণিরুলের বিজেপিতে যোগদান ইস্যুতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাঁকে কাঠগড়ায় তুলছেন দলের কয়েকজন৷ লাভপুরের বিধায়কের পদ্মশিবিরে নাম লেখানোর সঙ্গে তাঁর কোনও যোগ নেই৷ স্পষ্ট ভাষায় তিনি জানান, ‘‘নানুরের প্রাক্তন বিধায়ক গদাধর হাজরা ও মানস দাসের বিজেপিতে যোগদানের বিষয়ে আমার যোগ রয়েছে৷ কিন্তু মণিরুল ইসলামের বিজেপিতে যোগদানের বিষয়ে আমার কোনও হাত নেই৷ কীভাবে উনি দলে এলেন সেটা দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে জিজ্ঞেস করলেই ভাল হয়৷ ইচ্ছাকৃত ভাবে কিছু বীরপুরুষ বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা করছে৷’’ এখানেই শেষ নয়, সমালোচকদের একহাত নিয়ে যাদবপুরের পরাজিত বিজেপি প্রার্থী প্রশ্ন করেন, ‘‘যাঁরা আজ বীরত্ব দেখাচ্ছেন, তাঁরা যাদবপুরে ভোটের দিন কোথায় ছিলেন? যেদিন তৃণমূলের সন্ত্রাস রোখার জন্য আমি কয়েকজনকে ফোন করেছিলাম, তাঁরা তখন কোথায় ছিলেন?’’ অনুপম দাবি করেন, ‘‘সেদিন বীরত্ব দেখালে কিছু বুথ এজেন্ট, মণ্ডল প্রেসিডেন্টদের রক্ষা করা যেত৷ কয়েকটি বুথে বিজেপি লিড পেত৷’’ মণিরুল, গদাধররা যেদিন বিজেপিতে যোগদান করেন, সেদিন ওই মঞ্চেও উপস্থিত ছিলেন অনুপম হাজরা৷ যাকে ঘিরেই জল্পনা তৈরি হয় যে, তাঁর মাধ্যমেই বিজেপিতে এসেছেন এই তৃণমূল নেতারা৷ সেই বিভ্রান্তি দূর করতে অনুপম জানান, ‘‘যেহেতু আমি বোলপুরের প্রাক্তন সাংসদ ছিলাম৷ এবং উনি সেখানকার বিধায়ক৷ তাই শীর্ষ নেতৃত্বই আমাকে মঞ্চে উপস্থিত থাকতে বলেছিল৷’’
[ আরও পড়ুন: ‘কাল বৃষ্টি না ভূমিকম্প, জানি না’, দলবদলের জল্পনা উসকে মন্তব্য সব্যসাচীর ]
বুধবার তৃণমূলের বিতর্কিত নেতা মণিরুল ইসলাম গেরুয়া বসন গায়ে চড়ানোর পর থেকেই ক্ষোভে ফুটছেন বীরভূমের বিজেপি সদস্য-সমর্থকরা৷ শুক্রবার সংবাদ প্রতিদিন-এর কাছে সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ করেন বীরভূমের পরাজিত বিজেপি প্রার্থী দুধকুমার মণ্ডল৷ এতদিন যাঁদের বিরুদ্ধে লড়াই করতেন বীরভূমের বিজেপি কর্মীরা, সেই ব্যক্তিরাই পদ্ম শিবিরে যোগ দেওয়ায়, মন থেকে তা মেনে নিতে পারছেন না বলে জানান দুধকুমার৷ বীরভূম বিজেপির এই নির্ভরযোগ্য সেনাপতি বলেন, ‘‘মণিরুলের মতো লোকদের বিজেপিতে যোগদান অত্যন্ত খারাপ বিষয়৷ শীর্ষ নেতৃত্বে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা উচিত৷ আশা করব যেভাবে মণিরুলকে দলে যোগদান করানো হয়েছে, কর্মীদের কথা ভেবে সেভাবেই তাঁকে দল থেকে বের করা হবে৷’’ গত বুধবার দিল্লির সদর দপ্তরে মণিরুল ইসলাম বিজেপিতে যোগদান করার পর থেকেই, তাঁকে নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে বিজেপির অন্দরে৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় বা প্রকাশ্যে শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন দলের কর্মীরা৷ গণইস্তফারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বীরভূমের বিজেপি কর্মীরা৷ তবে দলের নীচু তলার কর্মীদের ক্ষোভ প্রশমনে, আস্থা রাখার বার্তা দিয়েছে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব৷ কিন্তু সেই আস্থা কতটা কার্যকর হবে, সেই বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে রাজনৈতিক মহল৷
The post বিদ্রোহের আঁচ বঙ্গ বিজেপিতে, মণিরুল ইস্যুতে অনুপমের নিশানায় দলের নেতারা appeared first on Sangbad Pratidin.