shono
Advertisement

অন্তর্দ্বন্দ্বে নাজেহাল রাজ্য বিজেপি, সায়ন্তনের পাশে আদি নেতাকর্মীরাও

সায়ন্তনের বিস্ফোরক চিঠি নিয়ে বঙ্গ বিজেপির অন্দরে ডামাডোল তুঙ্গে।
Posted: 10:20 AM Oct 30, 2022Updated: 10:20 AM Oct 30, 2022

স্টাফ রিপোর্টার: রাজ‌্য নেতৃত্বকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো দলের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসুর (Sayantan Basu) বিস্ফোরক চিঠি নিয়ে বঙ্গ বিজেপির অন্দরে ডামাডোল তুঙ্গে। দলের আদি শিবিরে নেতা-কর্মীরা সায়ন্তনের পাশেই দাঁড়িয়েছেন। তাঁর বক্তব‌্য, দলবদলুরা বিজেপি চালাচ্ছে, পুরনোদের গুরুত্ব দেওয়া উচিত। শুধু তাই নয়, দলে ২০১৯—এর মডেল ফিরিয়ে আনা হোক। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডাকে চিঠিতে লেখা সায়ন্তনের ওই বক্তব্যে বঙ্গ বিজেপির (BJP) নেতা-কর্মীদের একটা বড় অংশই সমর্থন জানিয়েছেন। সায়ন্তনের চিঠিকে সমর্থন করে শনিবার নাড্ডার কাছে মেল করেছে ‘বিজেপি বাঁচাও মঞ্চ’। ফলে সায়ন্তনের পত্রবোমায় এখন নাজেহাল বঙ্গের গেরুয়া শিবির। তৎকাল ও আদি বিজেপির দ্বন্দ্ব আরও একবার বেআব্রু হয়ে প্রকাশ্যে। একই সঙ্গে রাজ‌্য বিজেপির ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর দল পরিচালনায় ব‌্যর্থতা নিয়েও ফের প্রশ্ন উঠেছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে যা চিন্তায় ফেলেছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকেও।

Advertisement

নাড্ডাকে লেখা চিঠিতে সায়ন্তন বসু যে বিষয়গুলি তুলে ধরেছেন, তার সঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদক অনুপম হাজরা অনেকটাই একমত। অনুপমের বক্তব‌্য, “আমি যে পর্যবেক্ষণ পেশ করেছিলাম, সেটা অন‌্য কেউ বলছে দেখে আমার ভালই লাগছে।” উল্লেখ‌্য, একুশের নির্বাচনের পর বাংলায় একের পর এক ভোটে বিজেপির ফল ক্রমশ খারাপ হয়েছে। পাশাপাশি সুকান্ত—অমিতাভর জমানায় বিভিন্ন কমিটি থেকে পুরনো পদাধিকারীরা বাদ পড়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। এই বিষয় নিয়েই মুখ খুলেছিলেন অনুপম। দিলীপ ঘোষের জমানায় দুই সাধারণ সম্পাদক রাজু—সায়ন্তন জুটি ছিল কর্মীদের কাছে জনপ্রিয়। এখন সুকান্ত জমানায় পদে থাকলেও রাজু ব্রাত‌্য। বিজেপির রাজ‌্য সহ—সভাপতি রাজু বন্দ্যোপাধ‌্যায়ও তাঁর পুরনো সতীর্থ সায়ন্তনেরই পাশে দাঁড়িয়েছেন। রাজুর কথায়, “সায়ন্তনদা অভিজ্ঞ নেতা। সারা বাংলায় পার্টির কাজ করেছেন। পার্টির ভালর জন‌্যই নিশ্চয় পরামর্শ দিয়েছেন।”

[আরও পড়ুন: গোটা শরীর রক্তমাখা, বাঁ হাতে কাটা ডান হাত, মগরায় ছিনতাইবাজের দৌরাত্ম্যে অঙ্গহানি প্রৌঢ়ের]

দলের আরেক প্রাক্তন রাজ‌্য সহ—সভাপতি তথা এখনকার রাজ‌্য কমিটির সদস‌্য প্রবীণ নেতা রাজকমল পাঠকের বক্তব‌্য, “ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তাঁর বক্তব‌্য জানানোর পূর্ণ স্বাধীনতা আছে সায়ন্তনের। পুরনোদের বাদ দিয়ে বিজেপি হতে পারে না। ২০১৯—এ দলের সাফল্যের মূল কাণ্ডারি ছিলেন পুরনো নেতা-কর্মীরাই। দলের মধ্যে অনেক পরিছন্ন ও আস্থাভাজন নেতৃত্ব আছেন, তাঁদের সামনের সারিতে নিয়ে আসা প্রয়োজন।” বীরভূম বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দলের আরেক প্রবীণ নেতা দুধকুমার মণ্ডল বলেছেন, “সায়ন্তনবাবু নিশ্চয় দলের ভালর জন‌্যই পরামর্শ দিচ্ছেন। দল নিশ্চয়ই ভাববে। এর বেশি আমার কিছু বলার নেই।” বিজেপির বনগঁা সাংগঠনিক জেলার প্রাক্তন সভাপতি মনস্পতি দেবেরও বক্তব‌্য, “তৃণমূলের থেকে বিভিন্ন নেতা এসে বিজেপিতে পদে বসে আছেন, এটা নিয়ে কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ—বিক্ষোভ আছে। যাদের হাতে একসময় মার খেতে হয়েছিল, তারাই আজ আমাদের দলে এসে ছড়ি ঘোরাচ্ছে, নির্দেশ দিচ্ছে। এটা বুথস্তরের কর্মীদের থেকে আমাদের শুনতে হয়।” সায়ন্তন এদিন ফের জোর গলায় জানিয়ে দেন, “আমি একাধিক চিঠি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে আগেও দিয়েছি। ভবিষ‌্যতেও আবার দেব।”

এদিকে, দলীয় সূত্রে খবর, সায়ন্তনের পত্রবোমার পরই বিজেপিতে মান ভাঙানোর উদ্যোগ নেওয়া হতে চলেছে। বিক্ষুব্ধদের তালিকা তৈরি করে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন‌্য রাজ‌্য নেতাদের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কিন্তু সেখানেও প্রশ্ন, রাজ্যে দলের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর নেতৃত্ব, যাঁদের বিরুদ্ধেও মূলত ক্ষোভ বিক্ষুব্ধ ও আদি নেতাদের। ফলে সেই রাজ‌্য নেতারা কীভাবে সমস‌্যা মেটাবেন? কারণ, বারবার তো এই রাজ‌্য নেতাদের বিরুদ্ধেই অনাস্থা প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছে বিক্ষুব্ধদের। শনিবার সন্ধ‌্যা পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে দলের তরফে কেউ যোগাযোগ করেনি বলে দাবি সায়ন্তনের। তবে একসময় তৃণমূল থেকে বিজেপিতে আসা সাংসদ সৌমিত্র খাঁ আবার বলেছেন, “অসমের হিমন্ত বিশ্বশর্মার মতো পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে প্রতিষ্ঠিত করতে একমাত্র শুভেন্দুদাই পারবেন। এখন শুভেন্দুদা—দিলীপদার নেতৃত্বে আমিও রয়েছি। তৃণমূল বিরোধী টিম তৈরি করে ১৯—এর মতো রেজাল্ট করব।” সৌমিত্র অবশ‌্য টিমে একবারও সুকান্তর নাম উচ্চারণ করেননি। দলের শাসকগোষ্ঠীর কেউ কেউ বলছে, চিঠি দিয়ে দলবিরোধী কাজ করেছেন সায়ন্তন। অন‌্য গোষ্ঠী বলছে, দলের কর্মী হিসাবে তিনি দলের নেতাকে চিঠি দিতেই পারেন। এটা অপ্রিয় সত্যি কথা। দলে বিরোধিতার কোনও ব‌্যাপার নয়।

[আরও পড়ুন: ‘বিদেশ থেকে গরু আমদানির মতো চাহিদা নেই বাংলাদেশে’, বিস্ফোরক তথ্যমন্ত্রী হাছন মাহমুদ]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement