সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: তরুণ প্রজন্মকে কাছে টানতে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে প্রচার শুরু করল মাওবাদীরা (Maoist)। সবুজ পোশাক পরে মাও প্ল্যাটুনের সদস্যরা হাতে লাল ফেট্টি নিয়ে সাদ্রি ভাষায় (তামিল, ওড়িয়া ও হিন্দি ভাষার মিশ্রণ) লোকগান ও নাচে যুবক, যুবতীদেরকে দলে টানার আহ্বান জানাচ্ছে। প্রথম জঙ্গলমহলে ডিজিটাল প্রচার ‘সামরিক বার্তা’য় সেইসঙ্গে তাদের বার্তা, গণমুক্তি গেরিলা ফৌজ সপ্তাহ (২-৮ডিসেম্বর) ভালভাবে পালনের। ওই বার্তায় ‘শ্রেণিশত্রু নিকেশে’ওই লাল ফেট্টি প্রতীকীভাবে হয়ে উঠেছে বন্দুক। আর এই ভিডিওই এখন ভাইরাল (viral), জঙ্গলমহলের বাসিন্দাদের মোবাইলে তা ঘুরে বেড়াচ্ছে।
গত সোমবার পুরুলিয়ার (Purulia) বরাবাজার ও বান্দোয়ান থেকে উদ্ধার হওয়া মাও নথিপত্রে হামলার ইঙ্গিত পাওয়ার পরই জঙ্গলমহলের এই জেলায় ডিজিটাল প্রচারের ওই ভিডিও একেবারেই হালকাভাবে নিচ্ছে না যৌথ বাহিনী। উপদ্রুত এলাকায় মাওবাদী দমনে ২০১৮-২২ পর্যন্ত কেন্দ্রের ‘মিশন সমাধান’-এর বিরোধিতা করা হয়েছে উদ্ধার হওয়া পোস্টারে। গোয়েন্দাদের কথায়, বতর্মান প্রজন্মের তরুণ-তরুণীরা ভীষণভাবে ডিজিটাল মাধ্যমের সঙ্গে জড়িত। তাই জঙ্গলমহলে নতুন করে সংগঠন গুছিয়ে ‘ইয়ং ব্রিগেড’ গড়তে এই কৌশল নিয়েছে মাওবাদীরা। পুলিশ-সহ কেন্দ্রীয় বাহিনী জঙ্গলমহলে এই কৌশল কীভাবে মোকাবিলা করবে, তা এখনও বুঝে উঠতে পারছে না। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার এস. সেলভামুরুগণের কথায়, “ভিডিওর অংশ বাংলার নয়। পোস্টারিং ছাড়া এখানে সব ঠিক আছে। পুরুলিয়া জেলা পুলিশ ভীষণ সতর্ক।”
[আরও পড়ুন: সংঘাত বাড়ল আরও, তৃণমূল কর্মী সংগঠনের মেন্টর পদ থেকে অপসারিত শুভেন্দু]
আসলে, জঙ্গলমহলে জনভিত্তি না পেয়ে প্রায় এক দশক ধরে তারা বারবার ধাক্কা খাচ্ছে। বহুদিন পর তারা সম্প্রতি এই অঞ্চলে ব্যাপক হারে একদিনে একাধিক জায়গায় নিজেদের কর্মসূচি নিয়ে পোস্টারিং, ব্যানার লাগানো-সহ প্রচারপত্র ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। তবে অতীতের মত তারা সংগঠনকে কিছুতেই মজবুত করতে পারছে না। ফলে জঙ্গলমহলে প্রবেশের চেষ্টা করলেও আগের মত স্থায়ীভাবে শিবির করতে ব্যর্থ হচ্ছে। সেই কারণেই তাদের কার্যকলাপ প্রচারে এখন ডিজিটাল মাধ্যমকেই বড় হাতিয়ার করছে। একথা মানছে যৌথ বাহিনীই। অতীতে মাওবাদীরা ওয়েসবসাইট খুলে তাদের কাজকর্ম চালালেও ভিডিও করে ডিজিটাল মাধ্যমে প্রচার এর আগে দেখা যায়নি জঙ্গলমহলে। ন’মিনিটের ওই ভিডিও তৈরি করেছে মাওবাদীদের সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী ‘দণ্ডকারণ্য চেতনা নাট্য মঞ্চ।’ ভিডিও শেষে নির্মাতা হিসাবে ওই গোষ্ঠীর নামই ডিজিটাল প্রচারে ভেসে আসছে।
[আরও পড়ুন: যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য ও পরিচ্ছন্নতায় নজর, স্টেশনে লিফট ও চলমান সিঁড়ি বসাচ্ছে পূর্ব রেল]
সেই ভিডিও দেখিয়ে যুবক, যুবতীদের ‘বিপ্লবী মন’ তৈরি করারও চেষ্টা করছে তারা। ভিডিও শুরু হচ্ছে ‘লং লিভ টুয়েন্টি পিএলজিএ অ্যানিভারসারি’ শিরোনামে। মাও কমরেডদের লোকগানের সঙ্গে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে চলছে নাচ। তুলে ধরা হয়েছে ছত্তিসগড়ের বুরকাপাল ব্যাটেল গ্রাউন্ড। সেই সঙ্গে ভিডিওয় রয়েছে তাদের কুচকাওয়াজের ছবি থেকে নাশকতার নমুনা। এছাড়া তাদের সুসজ্জিত অস্ত্রসম্ভার-সহ গেরিলা আক্রমণের জন্য প্রশিক্ষণ পর্বও বিস্তারিত দেখানো হয়েছে ভিডিওতে।