shono
Advertisement

কাতারে নেই সোনার ছেলেই, ‘নাহাম’ মারাদোনা না থাকায় বিবর্ণ বিশ্বকাপ

কাতারে সব আছে। শুধু তিনি নেই।
Posted: 02:42 PM Nov 19, 2022Updated: 02:42 PM Nov 19, 2022

দুলাল দে, দোহা: কাতারে সব আছে। শুধু তিনি নেই। তিনি মানে দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা। কাতারের সংগীত মূলত সামুদ্রিক লোককবিতা, গান আর নৃত্যভিত্তিক। শুক্রবার দোহায় পা দিয়ে জানতে পারলাম, এই ঐতিহ্যবাহী নৃত্যসমূহ শুধুমাত্র শুক্রবার বিকেলেই পরিবেশিত হয়। কারণ, শুক্রবার মানেই সকাল থেকে ছুটির মেজাজ। আল ওয়াকরার রাস্তার ধারে এরকম একটি নৃত্যসমূহর অনুষ্ঠানে শুনলাম, নৃত্যের তালে তালে এক ধরনের বিশেষ সুরে সংগীত। প্রতিটি গানের তাল ভিন্ন। স্থানীয় মানুষরা যা বোঝালেন, তা হল এগুলি সবই সামুদ্রিক সংগীত। মুক্তো আহরণের সময় অতীতকালে প্রতিটি জাহাজে একজন করে পেশাদার গায়ক থাকতেন। যাঁদের বলা হত, ‘নাহাম।’ আর এই নাহামদের কাজ ছিল, মুক্তো আহরণের সময় সমুদ্রের মধ্যে কঠিন পরিস্থিতিতে এই সামুদ্রিক গান গেয়ে কর্মীদের উৎসাহিত করা।

Advertisement

প্রথমদিন দোহায় পা দিয়ে মনে হল, এবারের বিশ্বকাপে মারাদোনা (Diego Maradona) নামক ‘নাহাম’-এর অনুপস্থিতিটাই বড় বেশি অনুভূত হবে। রবিবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বকাপের ঢাকে কাঠি হয়তো পড়বে, কিন্তু আগের দশটি বিশ্বকাপে যাঁর আবেগের সঙ্গে আপামর বিশ্ববাসী আবেগতাড়িত হয়েছে, সেই মারাদানোর অনুপস্থিতিতে উৎসব মুখরিত কাতার বিশ্বকাপে যেন শোকের ‘বিউগল’ বাজছে। সব থেকেও বিশ্বকাপের (FIFA World Cup 2022) রং রূপ কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছে। বদলে ঘিরে রয়েছে এক চিরন্তন দুঃখ। যা গায়ে মেখেই ভগ্ন হৃদয়ে এবার কাতার বিশ্বকাপের সঙ্গী হবে বিশ্ববাসী।

[আরও পড়ুন: কাতার বিশ্বকাপের পর রোনাল্ডোর ঠিকানা কি মেজর লিগ সকার? মহাতারকার ভবিষ্যৎ নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে]

ব্রাজিল আর রাশিয়ার বিশ্বকাপ কভার করতে গিয়ে মূল যে সমস্যাটা হয়েছিল, দেশে পা দেওয়া ইস্তক, যোগেশ মাইম অ্যাকাডেমির ছাত্র হয়ে যেতে হত! হাত-পা নেড়েই প্রকাশ করতে হত মনের ভাব। অন্তত এবার আর সেই সমস্যাটা নেই। ২৮ লক্ষ অধিবাসীর কাতারে নিজেদের অধিবাসী মাত্র চার লক্ষ। ভারতীয় আর বাংলাদেশের মানুষ গিজগিজ করছেন। কিন্তু পুরো দেশজুড়েই নারীর সংখ্যা এতটাই কম যে চমকে উঠতে হয়। সাত লক্ষেরও কম!

কাতার রক্ষণশীল দেশ হলেও, তেল আর গ্যাসের বিশাল মজুতের জন্য কাতারের মানুষের মাথাপিছু আয় পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি। মাথাপিছু আয় প্রায় এক লক্ষ তিরিশ হাজার ডলার! দ্বিতীয় স্থানে থাকা লুক্সেমবার্গের থেকে যা প্রায় ২০ হাজার ডলার বেশি। তবু বিশ্বকাপ আয়োজনকে কেন্দ্র করে যে হারে অভিবাসী শ্রমিকদের নিয়ে কর্মযজ্ঞ চলেছে, তাতেই বিক্ষোভের মাত্রাটা বেড়েছে মারাত্মক হারে। যা থামাতে ফিফা প্রেসিডেন্ট ইনফানতিনোকে পর্যন্ত বিবৃতি দিতে হচ্ছে। বিশ্বকাপ শুরুর আগেই শনিবার দেশ বিদেশের সাংবাদিকদের নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করবেন তিনি। বল গড়ানোর আগেই দ্রুত থামাতে চান, এই অভিবাসী শ্রমিকদের নিয়ে বিক্ষোভ। আর হবে নাই বা কেন? কিছুদিন আগেই ইংল্যান্ডের কোচ গ্যারেথ সাউথগেট জানিয়েছেন, ফিফা সভাপতি থামতে বললেই তাঁরা থেমে থাকতে পারেন না। যেখানে মানবাধিকারের প্রশ্ন জড়িত, সেখানে তাঁরা প্রশ্ন তুলবেনই।

দোহাতে পা দেওয়া ইস্তক দেখছিলাম, মদ্যপানে অভ্যস্ত লোকজন খোঁজ নিতে শুরু করেছেন যে, কী উপায়ে অন্তত নিজের অ্যাপার্টমেন্টের ঘরে বসে মদ্যপান করা যায়? খোঁজ নিয়ে যা জানা গেল, পারমিট থাকলে নির্দিষ্ট লাইসেন্স থাকা একটি মাত্র দোকান থেকে একমাত্র পানীয় কিনে আপনি রুমে ফিরে পান করতে পারবেন। কাতারের এই নিয়ম ভাঙলেই শাস্তি। কিন্তু বিশ্বকাপ আয়োজনের অনুমতি পাওয়ার সময় কাতারের সঙ্গে ফিফার যা চুক্তি হয়েছিল, তাতে ফিফার সঙ্গে যে সংস্থাগুলির কমার্শিয়াল চুক্তি রযেছে, তা কাতার মানতে বাধ্য। তবে এদিন কাতার রাজপরিবারের পক্ষ থেকে যে নির্দেশিকা জারি হয়েছে, তাতে চুক্তিভঙ্গ আসন্ন।

[আরও পড়ুন: দিল্লিতে মোদির আমন্ত্রণে বৈঠকে মমতা, রাজ্যের দাবিদাওয়া নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা]

এসবের মধ্যে মারাদোনা নামক বর্ণময় চরিত্রের অনুপস্থিতি। শেষ বিশ্বকাপেও নাইজেরিয়ার বিরুদ্ধে মরণপণ ম্যাচে জেতার সেন্ট পিটার্সবার্গের গ্যালারি থেকে মারাদোনার সেই শিশুর মতো উচ্ছ্বাস, কারও চোখ এড়ায়নি। বিশ্বকাপ চলবে। আর ক্যামেরার চোখ গ্যালারিতে খুঁজবে ‘এল পিবে দে ওরো’কে। যার অর্থ সোনার ছেলে। কিন্তু সোনার বিশ্বকাপের সময় সোনার ছেলেই নেই।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement