নিরুফা খাতুন: স্রেফ চোর সন্দেহে বেধড়ক মারধর, পরিণামে মৃত্যু। শুক্রবার খাস কলকাতার হস্টেলে এক ব্যক্তির মৃত্যুর নেপথ্যে গণপিটুনির কারণই উঠে আসছে। আর সেই ঘটনার তদন্তে নেমে একাধিক তথ্য হাতে পেলেন তদন্তকারীরা। মৃত মহম্মদ ইরশাদ যে ইলেকট্রনিক্সের দোকানে কাজ করতেন, সেই মালিক পুলিশের জেরায় জানাচ্ছেন, মুচিপাড়ার ওই হস্টেলে মারধরের পর তিনি ফোন করে কাতর আর্জি জানিয়েছিলেন। তা শুনে মালিক ছুটে যেতেই যেতেই সব শেষ। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে তাঁর মৃত্যু হয়েছে শুক্রবার বিকেলে। প্রসঙ্গত, বছর দশেক আগে এনআরএসের ছাত্রাবাসে মোবাইল চোর সন্দেহে এক মানসিক প্রতিবন্ধী যুবককে পিটিয়ে মারা হয়েছিল। মুচিপাড়ার ঘটনায় সেই কোরপান শাহ হত্যাকাণ্ডের ছায়া দেখছে পুলিশ।
শুক্রবারের ঘটনা নিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, গত কয়েকদিন ধরে হস্টেল চত্বর থেকে মোবাইল (Mobile) ফোন চুরি হচ্ছিল। বৃহস্পতিবারও মোবাইল চুরির নালিশ থানায় জমা পড়েছে। স্থানীয় সূত্রের খবর, এদিন সকালে ইরশাদকে হস্টেলের (Hostel) নীচে ঘুরতে দেখেন এলাকার এক মিষ্টি বিক্রেতা। তিনি ছাত্রদের খবর দেন। এর পর কয়েকটি ছেলে এসে ইরশাদকে টেনে হস্টেলে নিয়ে যায়। জানা গিয়েছে, ওঁকে ফুটপাত থেকেই তাঁকে মারতে মারতে হস্টেলে দোতলায় তোলা হয়। সেখানেও বেদম প্রহার (Lynching) চলে। ইরশাদের আর্তনাদ বাইরে থেকেও শোনা যাচ্ছিল বলে দাবি প্রত্যক্ষদর্শীদের। ভারী ব্যাট বা লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়েছিল বলে তদন্তকারীদের প্রাথমিক অনুমান। পরে হস্টেল থেকে ৬টি ব্যাট উদ্ধার করেছে পুলিশ।
[আরও পড়ুন: শপথ ইস্যু: মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়েরের পথে রাজ্যপাল]
ইরশাদকে অচৈতন্য অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ওই ব্যক্তিকে মারধর করা হয়েছিল। তাঁর কোমর থেকে পা পর্যন্ত ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বুকেও আঘাত লেগেছিল। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. অঞ্জন অধিকারী জানিয়েছেন, ‘‘প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে বেধড়ক মারধর করা হয়েছিল। ময়না তদন্তের পরেই সবটা বোঝা যাবে।’’ রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান ডা. সুদীপ্ত রায় বলেছেন, ‘‘এই ঘটনায় মেডিক্যাল কলেজের কোনও ছাত্র জড়িত নয়।’’
[আরও পড়ুন: ‘বিচারব্যবস্থায় রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব অনুচিত’, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে আর্জি মমতার]
আজ, শনিবার দুপুরের মধ্যেই ময়নাতদন্ত (Postmortem) হবে। এদিন মৃতের স্ত্রী থানায় একটি মামলা রুজু করেছেন। কর্মী মৃত্যুর খবর পেয়ে থানায় যান দোকান মালিক ইমরান আলম। তিনি বলেন, ‘‘আমাকে ইরশাদ ফোন করে জানায় বউবাজারে কয়েকজন যুবক তাঁকে মারধর করছে। তাড়াতাড়ি ১০ হাজার টাকা নিয়ে এসো, নাহলে এরা মেরে ফেলবে। কিন্তু সেই সুযোগটা পেল না ইরশাদ। তার আগেই তাকে পিটিয়ে মেরেই দিল ওরা।’’ সূত্রের খবর, আটক যুবকদের জিজ্ঞাসাবাদ করে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করেছেন বলে দাবি তদন্তকারী আধিকারিকদের। শনিবার দুপুরের মধ্যে ইরশাদের ময়নাতদন্ত হবে। মৃত্যু নিয়ে তাঁর স্ত্রী থানায় মামলা রুজু করেছেন।