সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: কলকাতা হাই কোর্টের দুই বিচারপতির বেনজির সংঘাতের জের। মেডিক্যালে ভর্তি দুর্নীতি মামলা সরল সুপ্রিম কোর্টে। আগামী ৩ সপ্তাহ পর শীর্ষ আদালতে মামলার পরবর্তী শুনানি। ইতিমধ্যে মামলার সব পার্টিকে আদালতে হলফনামা জমা দিতে হবে।
রাজ্যের তরফে জানানো হয়, মেডিক্যালে ভর্তির ১৪টি ভুয়ো শংসাপত্র পাওয়া গিয়েছে। দায়ের করা হয়েছে মোট চারটি এফআইআর। কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গল বেঞ্চে শুনানির বিরুদ্ধে সওয়াল করা হয়। রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বল সিঙ্গল বেঞ্চ থেকে মামলা না সরালে আবার একই ঘটনা ঘটার আশঙ্কা প্রকাশ করেন। নাম না করে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দাবি করেন সিব্বল। তাঁর বক্তব্য, ‘‘কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি পদযাত্রায় হেঁটেছেন।’’
এদিকে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি বলেন, “অতীতে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছ থেকে একটি মামলা সরিয়ে দিয়েছে শীর্ষ আদালত। তা সত্ত্বেও অবাঞ্ছিত মন্তব্য করেই চলেছেন তিনি।” তবে সবপক্ষের মন্তব্য শোনার পর প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, “হাই কোর্টের সিঙ্গল এবং ডিভিশন বেঞ্চ নিয়ে যা হচ্ছে তা ঠিক নয়। আমরা সব দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। এমন কিছু করা হবে না যাতে কলকাতা হাই কোর্টের মর্যাদা ক্ষুন্ন হয়। কোন বেঞ্চে কোন মামলা যাবে, তা ঠিক করবেন হাই কোর্টের প্রধান বিচাপতি।”
[আরও পড়ুন: ‘খুনে’র শাস্তি! ১০০ বছরের জন্য শিকলবন্দি গাছ! বাংলার কোথায় ঘটল এমন ঘটনা?]
উল্লেখ্য, সংরক্ষিত আসনে অসংরক্ষিত পড়ুয়া ভর্তির অভিযোগে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন এক ছাত্রী। এই মামলার তদন্তভার সিআইডিকে দেওয়া হয়। ২৪ জানুয়ারি এই মামলার শুনানিতে সিআইডির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয় রাজ্য। ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যের মৌখিক আবেদনের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেয়। সে কথা বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে জানান রাজ্যের আইনজীবী। বিচারপতি মামলার লাইভ স্ট্রিমিং অথবা স্থগিতাদেশের কপি দেখাতে বলেন। লিখিত স্থগিতাদেশের কপি দেখাতে পারেননি রাজ্যের আইনজীবী। কোনও মামলার কপি দেখাতে না পারলে কি তা গ্রহণযোগ্য, পালটা প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। এর পরই সিবিআইকে বিচারপতি সমস্ত নথি নিয়ে তৎক্ষণাৎ এফআইআর করার নির্দেশ দেন।
পরদিন অর্থাৎ ২৫ জানুয়ারি, বিচারপতি সৌমেন সেনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, “বিচারপতি সৌমেন সেন স্পষ্টতই একটি রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করছেন। মামলায় রাজনৈতিক স্বার্থ জড়িত থাকা ব্যক্তির মতো আচরণ করছেন। তাই সুপ্রিম কোর্টের উচিত তাঁর সমস্ত নির্দেশ খারিজ করা।” এমনকি বিচারপতি সেনের ডিভিশন বেঞ্চ যে নির্দেশ দিয়েছিল, তাও তিনি কার্যকর হবে না বলে জানিয়ে দেন। অর্থাৎ এই মামলায় সিবিআইকে তিনি তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে বলেন। দুই বিচারপতির এহেন বেনজির সংঘাতে ২৬ জানুয়ারি হস্তক্ষেপ করে সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের বিশেষ বেঞ্চ গঠন করা হয়। ওই বিশেষ বেঞ্চে রয়েছেন বিচারপতি সঞ্জীব খান্না, বিচারপতি বি আর গাভাই, বিচারপতি সূর্যকান্ত, বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু। শনিবার ছুটির দিনে বিশেষ বেঞ্চের শুনানিতে গোটা বিচারপ্রক্রিয়ায় স্থগিতাদেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। সোমবারের শুনানিতে মেডিক্যাল দুর্নীতি মামলা হাই কোর্ট থেকে সরল শীর্ষ আদালতে।