সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সময় জানিয়ে দেয় মানুষের কাহিনি। এমন কিছু গল্প, যা সাধারণের মধ্যে থেকেও অসাধারণ। আবার বাস্তব হয়েও রূপকথাকে অনায়াসে হার মানিয়ে দেয়। প্রতিকূল পরিস্থিতিই চিনিয়ে দেয় প্রকৃত বন্ধুকে। অচেনা মানুষও হয়ে ওঠেন একান্ত আপন। এমন আপনজন শ্রাবস্তী ঘোষ, তাঁর মা-বাবা এবং বন্ধুরা। অতিমারীর এই কঠিন সময়ে করোনা (Corona Virus) রোগীদের দুয়ারে দুয়ারে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন তাঁরা। তাও আবার বিনামূল্যে।
কারও ছেলে-মেয়ে বিদেশে থাকেন, কেউ সঙ্গীকে হারিয়ে বড্ড একলা, কেউ আবার বয়সের ভারে ক্লান্ত। এর মধ্যেই আবার কোভিডের (COVID-19) কোপে কাহিল। বাজার করা তো দূর অস্ত, খুন্তি নাড়িয়ে রান্না পর্যন্ত করার শক্তি নেই। এমন মানুষদেরই পাশে দাঁড়িয়েছেন শ্রাবস্তী এবং তাঁর সঙ্গীরা। করোনা কালে অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় অক্সিজেন, বেড, ওষুধের খবর দিচ্ছেন। কেউ কেউ তা সরবরাহও করছেন। কিন্তু যে মানুষগুলি ঘরে বন্দিদশায় জীবন কাটাচ্ছেন, তাঁদের কী হবে? এই প্রশ্নই জেগেছিল শ্রাবস্তীর মনে। তাঁদের জন্য কিছু একটা করার তাগিদ অনুভব করেছিলেন বেসরকারি সংস্থার চাকুরিজীবী তথা নাট্যকর্মী। যেমনি ভাবা তেমনি কাজ। হাতের মুঠোয় সোশ্যাল মিডিয়া তো আছেই। সেখানেই ফোন নম্বর লিখে দেন, “কারও এই অসম পরিস্থিতিতে খাবার লাগলে যোগাযোগ করতে পারেন।”
[আরও পড়ুন: ১৫ জুনের মধ্যে ৫ কোটি ৮৬ লক্ষ ভ্যাকসিন বিনামূল্যে পাবে রাজ্যগুলি! বড় ঘোষণা কেন্দ্রের]
ব্যস শুরু হয়ে যায় যুদ্ধ। ২৮ এপ্রিল থেকে অসহায় মানুষের কাছে খাবার তুলে দেওয়ার দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে নেন শ্রাবন্তী। সংবাদ প্রতিদিনকে ফোনে বাগবাজারের বাসিন্দা জানান, প্রথমে তাঁর বাবা সুবীর ঘোষ বাজার করে দিতেন। আর সরকারি চাকুরে মা (অজন্তা ঘোষ) অফিস যাওয়ার আগে রান্না সেরে ফেলতেন। বাকি কাজ করতে শ্রাবস্তী এবং তাঁর বন্ধু অনির্বাণ শিকদার, শান্তদেব দত্ত, সৌম্য ভট্টাচার্য। কখনও হাতিবাগান, কখনও উলটোডাঙা, কখনও আবার দমদম- উত্তর কলকাতার নানা জায়গায় খাবার পৌঁছে দেন তাঁরা। ভাত, ডালের সঙ্গে মাছ, মাংস কিংবা ডিম। যেদিন যেমন পাওয়া যায়, তেমন হয় রান্না। এখন দিনে অন্তত ৪০ থেকে ৫০ জনের খাবারের অর্ডার পান শ্রাবস্তী। এখন অনেক দায়িত্ব বন্ধুরাই সামলে দেন। শ্রাবস্তীদের এই উদ্যোগের সঙ্গী হয়েছিলেন অভিনেত্রী সোহিনী সরকারও (Sohini Sarkar)। ছয় পরিবারকে খাবার পৌঁছে দিয়েছিলেন তিনি।
ইচ্ছে ছিল, তাই হয়েছে। অতিমারীর এই কঠিন সময় কিছু এমন মানুষকেও উপহার হিসেবে দিয়েছে যাঁরা ডান-বামে না তাকিয়ে বিনা লাভেই মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন। এঁদেরই একজন শ্রাবস্তী এবং তাঁর সঙ্গীরা। নতুন এই প্রজন্মের কাঁধে ভর দিয়েই যেন সভ্যতা আবার অতিমারীকে (Pandemic) পর্যুদস্ত করে বাঁচতে শিখবে।