চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: শিবের মতো স্বামী পেতে কুমারী মহিলারা পালন করেন ষোলো সোমবার। মহাশিবরাত্রিতে শিবলিঙ্গের মাথায় ফুল, জল, দুধ ঢালেন মহিলারা৷ দিনভর উপোস, কৃচ্ছসাধন করে তবে হয় মহাশিবরাত্রি পালন। মহাশিবরাত্রি শুধুই মহিলাদের জন্য? পার্বতীর মতো সুন্দরী ও পতিপরায়ণ স্ত্রী পেতেও তো ইচ্ছে করে স্বামীদের। পাত্র পক্ষেরও একই মনস্কামনা থাকতে পারে। অবিবাহিত পুরুষরা শরণাপন্ন হন বাবা বৈদ্যনাথের। বিশেষ উপায়ে মহাশিবরাত্রিতে পুরুষদের জন্য রয়েছে বিশেষ পুজো লোকাচার যা একমাত্র দেওঘরেই দেখা যায়। শিবরাত্রিতে পুজোর ডালিতে বিশেষ টোপর দিয়ে বা মৌর চড়িয়ে এখানে পুজো দেন অবিবাহিতরা৷
[তিনদিন গলায় আটকে মাংসের হাড়, মহিলাকে বাঁচাল সিউড়ির হাসপাতাল]
আসানসোল রেল ডিভিশনের আওতায় বৈদ্যনাথ ধাম বা দেওঘর। আসানসোল থেকে মাত্র পঞ্চাশ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বৈদ্যনাথ ধাম। যা ছিল একসময় বাংলার মানভূম জেলার অর্ন্তভুক্ত। পরে তা বিহারে (বর্তমানে ঝাড়খণ্ড) চলে যায়। তবে মন্দিরের মূল পুরোহিত ও পান্ডারা বংশ পরম্পরায় সব বাঙালি। কথিত আছে শিব ও শক্তি এখানে একসঙ্গে বিরাজমান। একদিকে দ্বাদশ জোর্তিলিঙ্গের অন্যতম মনস্কামনা লিঙ্গ আর অন্যদিকে শক্তিপীঠ, এখানে মুখোমুখি। পুরাণ মতে সতীর হৃদয় পড়েছিল এখানে। এই মন্দিরটি তাই জয়-দূর্গা নামে খ্যাত। কৈলাস থেকে জোর্তিলিঙ্গ লঙ্কায় নিয়ে যাওয়ার পথে লঙ্কেশ্বর রাবণ এখানেই নামিয়ে ফেলেছিলেন সেই শিবলিঙ্গ বৈদ্যনাথকে যা আর পরে তোলা যায়নি। তাই মহাশিবরাত্রিতে উৎসবের চেহারা নেয় বৈদ্যনাথ ধাম৷
[সিগন্যালে দাঁড়িয়ে ট্রেন, অসংরক্ষিত কামরায় প্রসব যাত্রীর]
রোহিনী গ্রামের বাসিন্দা সুনীল মালাকার বলেন, ‘‘তাঁদের গ্রামে তৈরি হয় হাজার হাজার টোপর। লাল নীল সবুজ নানা রঙের, নানা আকারের। মালাকাররা বলেন শুধু উপবাস করে শিবের মাথায় দুধ ঢাললেই হবে না। মনস্কামনা নিয়ে যে পুরুষরা বাবা বৈদ্যনাথের কাছে আসেন তাঁদের এই টোপরটি চড়াতে হবে বাবার মাথায়।’’ ভক্তদের বিশ্বাস মাত্র এই দশ টাকার টোপরটি পালটে দিতে পারে ভাগ্যচক্র। তাঁদের আশা অবিবাহিত পাত্ররা এখানে পুজো দিয়ে পেতে পারেন পাত্রী। মন্দিরের পাণ্ডা পরেশ চক্রবর্তী এবং সোমনাথ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পাত্র নিজে ছাড়াও অভিভাবকরাও এই বিশেষ লোকাচারে পুজো দিতে পারেন। শুধু বিয়ে নয় সুন্দরী বউয়ের মনস্কামনা থাকলেও দিতে হবে চার প্রহরের পুজো। উপাচার হিসাবে দুধ, ঘি, আবির এবং চন্দন প্রয়োজনীয়৷
[হাতির দাঁত পাচারের চেষ্টা বানচাল, হাসিমারায় গ্রেপ্তার অসমের ২ নাগরিক]
দেওঘরের বিখ্যাত প্যাঁড়া প্রসাদ। প্যাঁড়া বিক্রেতা শিউ সাউ, ভগত সাউ বলেন, ‘‘শিবরাত্রির সময় উপবাস যদি সহ্য না হয় তবে দিনভর প্যাঁড়া খেয়ে কাটিয়ে দেওয়া যায়। কারণ দেওঘরের প্যাঁড়া তৈরি হয় চিনি ছাড়া বিশুদ্ধ খোওয়া ক্ষীর দিয়ে। বাবা বৈদ্যনাথের কৃপায় এটুকু ছাড় রয়েছে ভক্তদের জন্য।’’
The post পার্বতীর মতো বউ পেতে শিবরাত্রিতে বিশেষ পুজো পুরুষদের appeared first on Sangbad Pratidin.