সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিশ্ব উষ্ণায়ণ এখন আর খাতায় লেখা গল্প কথা নয়, হাড়ে হাড়ে তা টের পাচ্ছে মানব সমাজ। চলতি বছরেই তাপমাত্রার হাফসেঞ্চুরি দেখেছে দেশ। প্রবল গরমে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এরইমাঝে প্রকাশ্যে এল এক চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট। যেখানে দাবি করা হচ্ছে, ভয়াবহ গরম ও লু-এর প্রভাবে ব্যাপকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে হরমোনের ভারসাম্য। যার বিশেষভাবে পড়ছে মহিলাদের শরীরে। পরিণতি, অনিয়মিত ঋতুস্রাব। শুধু তাই নয়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে স্বাভাবিক নিয়ম ভেঙে মাত্র ৭ বছর বয়সি বালিকারও হচ্ছে ঋতুস্রাব। বিজ্ঞানীদের দাবি, এহেন শারীরিক পরিবর্তনের মূল কারণ জলবায়ু পরিবর্তন।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম 'ডন'-এর প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাকিস্তানের 'ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ হেলথ' এক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। যেখানে দাবি করা হচ্ছে প্রবল গরমের কারণে বেশকিছু ভৌগলিক এলাকায় মহিলাদের অনিয়মিত ঋতুস্রাব দেখা গিয়েছে। পাকিস্তানের বহু অল্পবয়সি বালিকার ঋতুস্রাব হতে দেখা গিয়েছে। যে বয়সে তারা ঋতুস্রাব শব্দটির সঙ্গেই পরিচিত হয়নি, সেই বয়সে অস্বাভাবিক যন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে তাদের। দিনে দিনে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে বলে দাবি করছে গবেষণা। জানা যাচ্ছে, মাত্র ৭ বছর বয়সে ঋতুস্রাব হওয়ার এক বছর পর হঠাৎ করেই তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এর পর ১২ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও তার শরীরে আর ঋতুস্রাবের কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। উল্লেখ্য, প্রাকৃতিক নিয়ম অনুযায়ী সর্বনিম্ন ১০ থেকে সর্বোচ্চ ১৬ বছর বয়সই সাধারণত ঋতুস্রাব শুরুর বয়স। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ১২ বছর ৪ মাস বয়সে কিশোরীদের শরীরে ঋতুস্রাবের লক্ষণ দেখা যায়। তবে প্রবল গরম ও লু-এর জেরে মহিলাদের শরীরে হরমোনের ভারসাম্যের উপর প্রভাব ফেলছে।
[আরও পড়ুন: সিবিআইয়ের পর ইডি, জোড়া আবেদনের জেরে ১২ জুলাই পর্যন্ত জেলেই কেজরি]
গবেষণায় দাবি করা হচ্ছে, পাকিস্তানের আবহাওয়া গত কয়েক দশকে ব্যাপকভাবে পরিবর্তন হয়েছে। গত ৫০ বছরে বার্ষিক তাপমাত্রা ০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। শুধু তাই নয়, আগের চেয়ে তাপপ্রবাহের পরিমাণ বেড়েছে ৫ গুন। ২০২২ সালের তাপমাত্রা পাকিস্তানের ৬০ বছরের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। বিজ্ঞানীদের দাবি, তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে কর্টিসেলের স্তর বেড়ে যায়। যার জেরে ডিসমেনেরিয়ার সমস্যা শুরু হয়। চিকিৎসকদের দাবি, বেশিরভাগ মহিলাদের ঋতুস্রাব যন্ত্রণামুক্ত হয়। তবে কর্টিসেলের স্তর বেড়ে গেলে ঋতুস্রাবের যন্ত্রণা অসহনীয় হয়ে ওঠে।
[আরও পড়ুন: জেলবন্দি অবস্থায় জয়ী ‘খলিস্তানি’ অমৃতপাল, শপথ নিতে প্যারোলে মুক্তি]
চিকিৎসকদের দাবি, কর্টিসেল হরমোন অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত একটি হরমোন যাকে স্ট্রেস হরমোন বা মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তার হরমোনও বলা হয়। মানসিক চাপ বাড়লে এই হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। কিন্তু বর্তমান সময়ে প্রবল তাপপ্রবাহের জেরেও প্রভাবিত হচ্ছে এই হরমোন। মহিলাদের শরীরে এর কাজ মূলত মেটাবোলিজম ঠিক রাখা, ব্লাড সুগার ও প্রেসারকে নিয়ন্ত্রণ করে মহিলাদের গর্ভধারনের জন্য প্রস্তুত করা। তবে এই হরমোনের অতিরিক্ত ক্ষরণের ফলে প্রভাবিত হয় ঋতুস্রাব। সেটাই এখন গুরুতর আকার নিচ্ছে।