রমণী বিশ্বাস, তেহট্ট: শীত না পড়তেই বঙ্গে পা রাখল একঝাঁক পরিযায়ী পাখি। শীতপ্রধান দেশের একঝাঁক কালো বক দেখা দিল তেহট্টের বেতাই-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের চাঁপাগাড়া মাঠের জলাশয়ে। এই পরিযায়ী পাখির আগমনে খুশি পরিবেশকর্মী থেকে পক্ষীপ্রেমীরা। তবে তাঁদের, আশঙ্কা এই পরিযায়ী কালো বকগুলিকে চোরা পাখি শিকারীরা জাল বা ফাঁদ পেতে ধরে মাংস হিসাবে বিক্রি করে দেবে না তো? এই পাখি শিকারীদের সতর্ক করতে বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই বনদপ্তরের আধিকারিকরা মাইকিং করে প্রচার চালাচ্ছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রত্যেক বছরই এই সময়ে বিভিন্ন ধরনের পরিযায়ী পাখি এই মাঠে আসতে দেখা যায়। কিন্তু এই কালো কুচকুচে রঙের বক গুলিকে আগে কখনো দেখা যায়নি, এমনকি আগে কখনও এদের তাঁরা দেখেননি বলে জানান। গ্রামবাসীদের বক্তব্য, এই ভিনদেশী পরিযায়ী কলো বকগুলিকে যেন কেউ বিরক্ত না করে, সেই দিকে তারা লক্ষ্য রাখবেন। গ্রামের ছেলে বর্তমানে কলকাতার বাসিন্দা প্রসেনজিৎ সরকার কালী পূজা উপলক্ষে গ্রামের বাড়িতে এসে মাঠে প্রাত:ভ্রমণ করতে গিয়ে কালো বকগুলিকে দেখেন। তিনি জানান, ''বিভিন্ন ধরনের পরিযায়ী পাখি দেখতে পেয়েছি। কিন্তু এই ধরনের একদম কাকের গায়ের রঙের কালো কুচকুচে বক কখনও দেখিনি। ইন্টারনেট সার্চ করে জানতে পারি, এই পরিযায়ী বকগুলি শীতপ্রধান দেশে বসবাস করে।''
তেহট্টের চাঁপাগাড়া মাঠের জলাশয়ে দেখা গেল বিরল কালো বকগুলিকে। নিজস্ব ছবি।
পক্ষীপ্রেমী প্রদীপ্ত দাস জানান, ''এটি একটি পরিযায়ী পাখি। নাম গ্লসি আইবিস, বাংলায় একে খয়রা কাস্তেচরা বলা হয়। মূলত এরা আফ্রিকা এবং অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের রেসিডেন্ট পাখি। গায়ের রং কালো, ডানাগুলো একটু বাদামি হয়। সারা ভারতবর্ষে এরা শীতকালের পরিযায়ী পাখি বলে পরিচিত। সবচেয়ে বেশি দেখা যায় ওড়িশার মংলাজড়িতে। এই বছর আমরা তেহট্ট মহকুমা এলাকার বিভিন্ন জলাভূমিতে দেখতে পাচ্ছি, এটা আমাদের খুব সৌভাগ্যের। বনদপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করে একটা কথাই বলব, চোরা শিকারীদের হাত থেকে এদের রক্ষা করতে হবে, তাহলে ভবিষ্যতে আমরা আরও অনেক বেশি করে এদের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারব।''
তেহট্ট মহকুমা বন বিভাগের আধিকারিক সুদিন দাস জানান, ''কালো রঙের এই বক গুলি মূলত শীতপ্রধান দেশে বসবাস করে। বিভিন্ন পরিযায়ী পাখিদের পাশাপাশি কালো রঙের এই বক পাখিগুলিও চলে এসেছে। কিন্তু এর আগে এদিকে খুব একটা দেখা যায় নি, শীতের শুরুতে বিভিন্ন জলাশয় ভিড় জমায় বিভিন্ন ধরনের পরিযায়ী পাখি। এই বক গুলি অল্প জলে বিচরণ করে মাছ অথবা বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় খেয়ে জীবনধারণ করে। নির্দিষ্ট সময়ে ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা হওয়ার পর উড়তে শিখলে বাচ্চাগুলি নিয়ে এরা যথাস্থানে ফিরে যায়। এই সমস্ত পাখিগুলি যাতে পাখি শিকারীরা মেরে না ফেলে তার জন্য বেশ কিছুদিন ধরে রাত পাহারার পাশাপাশি মাইকিং করে প্রচার চালানো হচ্ছে।''