অভিষেক চৌধুরী, কালনা: বাড়ির সামনে সাইকেল রাখা নিয়ে অশান্তি। আর সেই বচসার জেরে মানসিক ভারসাম্যহীন প্রতিবেশী যুবককে উইকেট দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলার অভিযোগ উঠল তৃণমূল কর্মাধ্যক্ষ ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় তৃণমূল নেতার পরিবারের সদস্যদের গ্রেপ্তার করে বুধবার আদালতে তোলা হয়েছে। তবে অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা রুজু হতেই পলাতক মন্তেশ্বর এলাকার ওই কর্মাধ্যক্ষ। তাঁর দাবি, উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবেই ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে।
মৃতের নাম জীবনকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায় (৩৯)। মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন। তাঁর বাড়ি হোসেনপুর গ্রামে। মঙ্গলবার সন্ধেয় তাঁকে মন্তেশ্বর হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত বলে জানায় চিকিৎসকরা। মৃতের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা রুজু করে। গ্রেপ্তার করা হয় তৃণমূল নেতার ভাই সুকান্ত মুখোপাধ্যায়, ভাইয়ের বউ পম্পা মুখোপাধ্যায় এবং নাবালক ভাইপোকে।
[আরও পড়ুন: কয়লা সংকটে জেরবার রেলও, জ্বালানির অভাবে বাতিল ১৯০০ ট্রেন]
অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর থেকেই পলাতক পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ সুব্রত। তাঁর খোঁজ শুরু করেছে পুলিশ। এদিন সুকান্ত ও তাঁর স্ত্রী পম্পাকে কালনা আদালতে তোলা হয়। ভাইপোকে জুভেনাইল আদালতে পেশ করা হয়। এ প্রসঙ্গে কালনার এসডিপিও সপ্তর্ষি ভট্টাচার্য বলেন, “এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় অভিযোগের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।”
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার বিকেলে বাড়ির সামনে সাইকেল ও বাইক রাখাকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয় অশান্তি। তার জেরে জোর করে বাড়িতে ঢুকে জীবনকৃষ্ণ-সহ তাঁর পরিবারের অন্যান্যদের মারধরের অভিযোগ ওঠে মন্তেশ্বর পঞ্চায়েত সমিতির মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও তাঁর ভাইয়ের পরিবারের বিরুদ্ধে।
মৃত যুবকের দাদা অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “বাড়ির দরজার সামনের জায়গা বাঁধানো হয়েছে। সেই বাঁধানো জায়গা ভাঙতে বলে। জোর করে সাইকেল-বাইক রাখছিল। সেটা আমরা সরাতে বললেও সরায়নি। এই কারণে মাকে গালিগালাজ করতে থাকে সুব্রত মুখোপাধ্যায় -সহ তার ভাই ও পরিবারের লোকেরা। সেই ঘটনার প্রতিবাদ করায় ভাইকে উইকেট ও বাঁশের লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করে।”
[আরও পড়ুন: সংবাদপত্রে পড়েছিলেন মাধ্যমিকের অভাবী কৃতীর কথা, অর্থ সাহায্যের জন্য স্কুলে হাজির বৃদ্ধ]
মন্তেশ্বর হাসপাতালে চিকিৎসার পর তাঁকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। মঙ্গলবার ওই যুবক রক্তবমি করার পাশাপাশি শারীরিকভাবে আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে ওইদিন সন্ধেয় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে জানায়। এরপরেই থানায় অভিযোগ দায়ের হতেই পুলিশ অভিযুক্ত চারজনের মধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে ও আদালতে তোলা হয়। এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে আমাকে ও পরিবারের লোকজনকে জড়ানো হচ্ছে। কারণ সেইসময় ঘটনাস্থলে আমি ছিলাম না। মৃতের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এলেই তা আরও পরিষ্কার হয়ে যাবে।”