ধীমান রায়, কাটোয়া: একসময় ভিনরাজ্যে কাজ করতেন। ১৩ বছর আগে জ্বর নিয়ে ফিরে এসেছিলেন বাড়িতে। তারপর ধীরে ধীরে হারান মানসিক ভারসাম্য। এখন মারমুখী মেজাজ। এদিকে আর চিকিৎসার করানোর সামর্থ্য নেই পরিবারের, ফলে বন্দি কেতুগ্রামের যুবক। মায়ের আবেদন, পাশে দাঁড়াক সরকার।
পূর্ব বর্ধমানের (Purba Bardhaman) কেতুগ্রাম থানার চাকটা গ্রামের বাসিন্দা আফতার হোসেন। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, কৃষক পরিবারের সন্তান আফতাররা পাঁচ ভাই, দুই বোন। আফতার বাবা-মায়ের চতুর্থ সন্তান। দুই বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ৮ বছর আগে বাবা এবাদত হোসেন মারা যান।বাড়িতে রয়েছেন বিধবা মা আহম্মদা বিবি ও আফতারের এক দাদা। বাকি দাদারা আলাদা থাকেন। আহম্মদা বিবি ও তার আর এক ছেলে মূল বাড়িতে থাকেন। ওই মাটির বাড়ি থেকে কিছুটা দুরে রয়েছে তাদের এক আত্মীয়ের বাড়ি। আত্মীয়রা অবশ্য বাইরে থাকেন। আর নিজেদের বাড়িতে জায়গা কম থাকায় ওই আত্মীয়ের বাড়ির একটি ঘরে তালাবন্ধ অবস্থায় রেখে দেওয়া হয়েছে আফতার হোসেনকে। দিনে চারবার করে বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে গিয়ে ছেলেকে পৌঁছে দেন আহম্মদা বিবি। জানালা দিয়ে খাবার বাড়িয়ে দেন তিনি। এভাবেই দুবছর ধরে কাটছে।
[আরও পড়ুন: রাজ্যে ফের বাড়ছে কোভিড সংক্রমণ, জেলায় জেলায় নতুন করে কনটেনমেন্ট জোন ঘোষণা]
আহম্মদা বিবি জানান, তাঁর বড় ছেলে আহম্মদ হোসেন ভিনরাজ্যে কাজ করেন। ১৩ বছর আগে মাধ্যমিক পাশ করার পর আফতার তাঁর দাদার কাছে গিয়েছিলেন কাজের জন্য। সেখানে বেশ কয়েকমাস কাজকর্ম করেন। তারপর জ্বরে ভুগতে থাকলে আফতার বাড়ি ফিরে আসেন। আহম্মদা বিবি বলেন, “বাড়ি ফিরে আসার কয়েকমাস কাটার পর থেকেই অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে। গত ৮ বছর ধরে অসুস্থতা বেড়ে যায়। গত দু’বছর ধরে এতটাই বাড়াবাড়ি হয় যে ছেলে সামনে কাউকে দেখলে মারধর করতে আসে। তাই ঘরের মধ্যে ভরে রাখা হয়েছে।”
আফতার হোসেনের দিদি দিলওয়ারা ইয়াসমিন বলেন, “আমার দাদার চিকিৎসার জন্য অনেক খরচ করা হয়েছে। জমিও বিক্রি করতে হয়েছে। বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতা সর্বত্র বিভিন্ন চিকিৎসককে দেখানো হয়েছিল। কিন্তু স্বাভাবিক অবস্থায় আসেনি। যদি কখনও গ্রামের কাউকে মারধর করে বিপদ ঘটিয়ে ফেলে এই আশঙ্কায় ঘরে ভরে রাখতে আমরা বাধ্য হয়েছি।” তবে অসহায় বৃদ্ধা আহম্মদা বিবি চান, সরকারিভাবে যাতে তার ছেলের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। ছেলে যেন ফিরে পায় সুস্থ জীবন।