রমেন দাস: হাসপাতালেই তারস্বরে বাজছে মাইক, পুড়ছে বাজি! উৎসব আবহে একথা শুনতে একটু অবাক লাগলেও এমনই ঘটেছে খোদ কলকাতায়! রাজ্যের নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই ঘটেছে এমন ঘটনা। অভিযোগ, রোগী ভর্তি রয়েছেন এমন ওয়ার্ডের পাশেই দেদার আতসবাজি পুড়িয়ে আনন্দে মাতোয়ারা হয়েছেন বিয়েবাড়িতে আসা অতিথিরা। শুধু তাই নয়, হইহুল্লোড়ের আবহে মধ্যরাত পর্যন্ত নাকি চলেছে মহোৎসবের জলসা!
ঠিক কী ঘটেছে আসলে? দাবি, সোমবার রাতে হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের আবাসনে ছিল একটি বিয়ের অনুষ্ঠান। সেই অনুষ্ঠান উপলক্ষে সারাদিন চলছিল আনন্দ উদযাপন। কিন্তু রাত বাড়তেই এই উদযাপনের মাত্রা বাড়ে চড়চড়িয়ে। দাবি, হাসপাতালের ‘বেকার ওয়ার্ড’ এবং ‘লেডি এলিয়ট গার্লস হস্টেলে’র কাছের রাস্তাতেই পুড়তে থাকে দেদার আতশবাজি। অভিযোগ, রোগীদের স্বাস্থ্যের তোয়াক্কা না করেই ‘বেআইনি উৎসবে’ মেতে ওঠেন অভিযুক্তরা। দাবি, ‘বেকার ওয়ার্ডে’ ভর্তি থাকেন নাক-কান-গলা, ইউরোলজি, প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের রোগীরা। অন্যদিকে এলিয়ট হস্টেলে থাকেন চিকিৎসক-পড়ুয়ারা। অভিযোগ, কারও কথা মাথায় না রেখেই এই ঘটনা ঘটেছে।
ওই হাসপাতালের স্টুডেন্ট কাউন্সিলের সভাপতি তথা চতুর্থ বর্ষের চিকিৎসক-পড়ুয়া মধুরিমা রায়ের অভিযোগ, ”এই ঘটনা একদিনের নয়। বারবার কোনও অনুষ্ঠান হলেই এই কাণ্ড ঘটে হাসপাতালের মধ্যেই। যেখানে রোগীরা আসেন চিকিৎসার জন্য সেখানে এই অনৈতিক কাজ, মানা যায় না!” প্রতিবাদ করেননি? ছাত্রনেত্রীর কথায়, ”হাসপাতালের নিরাপত্তায় মোতায়েন পুলিশকর্মীদের জানানো হলে তাঁরা আসেন, সেই মুহূর্তে বন্ধ হয় সব। আবার শুরু হয় একই কাজ। সোমবারও একই ঘটনা ঘটেছে।”
[আরও পড়ুন: ‘শাহি’ সভা নাকি বিধানসভার অধিবেশন, বুধবার কোথায় থাকবেন? দ্বিধায় বিজেপি বিধায়করা]
একই সুরে অভিযোগ করেছেন এনআরএসের চিকিৎসক-পড়ুয়া অমৃত আর্যও। তাঁর কথায়, ”ভেবে দেখুন, একটি হাসপাতালে এই ধরনের কাজ করার সাহস আসে কীভাবে! অবাক হচ্ছি। এই ঘটনা জেনে আমরাও অবাক হয়েছি। আশা করব, ব্যবস্থা নেবেন কর্তৃপক্ষ।”
এই প্রসঙ্গে ‘সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল’-এ মুখ খুলেছেন নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ। চিকিৎসক পীতবরণ চক্রবর্তীর দাবি, ”এই অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে আমাদের হাসপাতালে! এই জিনিস বরদাস্ত করা যাবে না। নিজেও পুলিশকে বলেছি ব্যবস্থা নিতে। হাসপাতাল সুপারকেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছি।” যদিও হাসপাতাল সুপার ইন্দিরা দে-র দাবি, ”ঘটনাটি জেনেছি। কোনওভাবেই ঠিক কাজ নয়। এমন কিছুই হাসপাতাল চত্বরে করা যায় না। কোনও অনুমতি ছিল না। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব, এমন ঘটনার বিরুদ্ধে।” কিন্তু ঘটনা জানার পর ব্যবস্থার কথা বলছেন কর্তৃপক্ষ, টনক কেন আগে নড়েনি, এনিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।