সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ডহারবার: সরকারি উদ্যোগে সদ্য মহারাষ্ট্র থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগণার ডায়মন্ডহারবারের বসন্তপুরের বাড়িতে ফিরেছেন পরিযায়ী শ্রমিক জুলফিকার জমাদার। চিকিৎসকরা নির্দেশ দিয়েছিলেন ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে। কিন্তু ঘর একটাই। তাই নিজের গোয়ালঘরকেই বানিয়ে নিয়েছেন কোয়ারেন্টাইন সেন্টার। প্রবল ঘূর্ণিঝড় আমফানের মোকাবিলা করেছেন সেখানে থেকেই। সোমবার ইদের নমাজও পড়লেন তিনি সেই গোয়ালঘরের মধ্যেই।
লকডাউনে কাজ হারিয়ে তিনি আটকে পড়েছিলেন মহারাষ্ট্রের মুম্বইয়ে। ডায়মন্ডহারবারের পারুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বসন্তপুরের বাসিন্দা পরিযায়ী শ্রমিক জুলফিকার জমাদারের তাই মহারাষ্ট্রে দিন কাটছিল কখনও অনাহারে, কখনও অর্ধাহারে। কী খাবেন, কীভাবে বাড়ি ফিরবেন কিছুই মাথায় আসছিল না। শেষ পর্যন্ত রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের তৎপরতায় দিনদশেক আগে নিজের গ্রামে আসতে পেরেছেন তিনি। কিন্তু ঢুকতে পারেননি বাড়িতে। চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়েছেন ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে। কিন্তু থাকবেন কোথায়? বাড়িতে ঘর বলতে তো একটাই। তাই পাশেই নিজের গোয়ালঘরে বন্দিদশা কাটাচ্ছেন তিনি। আমফানের তাণ্ডব দুরুদুরু বুকে দেখেছেন গোয়াল ঘরে বসেই। সোমবার ইদের নমাজও পড়লেন ওই গোয়ালঘরের মধ্যে থেকে। স্ত্রী নুরুন্নেসা বিবি দিয়ে গেলেন ইদের খাবার দাবার। খেলেন গোয়ালে বসেই।
[ আরও পড়ুন: করোনা সংক্রমণের হারে কলকাতাকে টেক্কা মালদহের, গত ২৪ ঘণ্টার পরিসংখ্যান বাড়াল উদ্বেগ ]
জুলফিকারের স্ত্রী নুরুন্নেসা জানান, ‘কী আর করব। উনি ফিরছেন শুনেই কোনওরকমে গোয়ালঘরকে বাঁশের বেড়া দিয়ে দু’ভাগ করেছি। একদিকে থাকে গরু আর তার পাশেই ওনার জন্য ব্যবস্থা করেছি। খুব খারাপ লাগছে। কিন্তু ঘর তো একটাই। এদিকে ডাক্তারবাবুরা বলেছেন ১৪ দিন আলাদা থাকতে। তাই তো এই ব্যবস্থা। দূর থেকে খাবার-দাবার দিচ্ছি।’ পরিযায়ী শ্রমিক জুলফিকার জানালেন, ‘১০টা দিন তো কাটিয়েই দিলাম। ভয়ংকর ঝড়ের ধাক্কাও সামলালাম এই গোয়ালঘরে থেকেই। মাঝেমাঝে মনে হচ্ছিল আমফান যেন গোয়ালঘরটা সমেত উড়িয়ে নিয়ে যাবে আমাকে। খুব ভয় করছিল। কিন্তু করার কিছুই ছিল না। ডাক্তারবাবুরা যে বলে দিয়েছেন ১৪ দিন পরিবারের থেকে আলাদা থাকতে। সেটাই মেনে চলেছি এখনও। ইদের নমাজও পড়লাম গোয়ালঘরের মধ্যে থেকেই। ছোট্ট ছেলেটা ঘর থেকে বেরিয়ে যখন দূর থেকে দেখে আমাকে, এতদিন পর বাড়ি ফিরে ওকে ছুঁতে মন চায়। কিন্তু করোনার ভয় আটকায় আমার সেই ইচ্ছাকে। কষ্ট তো একটু হচ্ছেই। কিন্তু ডাক্তারবাবুদের কথা মেনে চলাটা খুব প্রয়োজন বলে মনে হয়েছে আমার। তাই এভাবেই কাটিয়ে দেব আরও চারটে দিন। তারপর নয় নিজের ঘরে ঢুকবো। আবার ফিরে যাবো আগের সেই স্বাভাবিক জীবনে, স্ত্রী-পুত্রের কাছে।’
[ আরও পড়ুন: আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত হুগলির একাধিক এলাকা পরিদর্শন কল্যাণের, একহাত নিলেন বিজেপিকে ]
The post মুম্বই থেকে ফিরে কোয়ারেন্টাইন, গোয়ালঘরেই ইদের নমাজ পাঠ পরিযায়ী শ্রমিকের appeared first on Sangbad Pratidin.