সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: “পরিবার নিয়ে আলু সিদ্ধ-ভাত খেয়ে থাকব। তবুও বেশি রোজগারের আশায় ভিটে বাড়ি ছেড়ে আর ভিনরাজ্যে কাজে যাব না।” শ্রমিক স্পেশ্যালে নিজের জেলায় পা রেখেই এমন প্রতিজ্ঞা করলেন গুজরাট ফেরত পুরুলিয়ার পরিযায়ীরা। তাঁরা ঘরে ফেরায় স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন পরিবারের সদস্যরাও। এখনও পর্যন্ত পুরুলিয়ায় পৌঁছেছে মোট ৩ টি শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেন।
গুজরাটের জামনগরের শ্রমিকরা পুরুলিয়ায় পৌঁছেই লকডাউনে আটকে থাকাকালীন খাবারের যন্ত্রনার কথা জানিয়ে কার্যত ভেঙে পড়েন। বরাবাজারের চিরুডি গ্রামের লক্ষ্মীকান্ত মাহাতো বললেন, “লকডাউনে আটকে পড়ে খাবারের ভীষণই সমস্যা হচ্ছিল। যে কোম্পানির অধীনে রঙের কাজ করতাম তাঁরা লকডাউনের প্রথমদিকে খাবার দিলেও পরে সেভাবে মিলছিল না। হাতে টাকা–পয়সাও ছিল না। ফলে কতদিন যে থালা ভরা ভাত জোটেনি তার হিসাব নেই।” তাই ট্রেন থেকে নামা পুরুলিয়ার সব পরিযায়ীদের এক সুর, “আলু সিদ্ধ–ভাত খেয়ে থাকব। কিন্তু বেশি আয়ের আশায় ভিটে বাড়ি ছেড়ে ঘর-সংসার নিয়ে যাব না।” আসলে এই দীর্ঘ লকডাউনে পরিযায়ী শ্রমিকরা ভিন রাজ্যে আটকে যে সমস্যায় পড়েছিলেন তাতে যেন শরীর–মনে ক্ষত হয়ে গিয়েছে। তাঁরা জানান, যেভাবে পরিযায়ীরা ঘরে ফিরতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল তাতে একাধিক রাজ্যের ঠিকাদার সংস্থা শ্রমিক না পাওয়ার আশঙ্কায় তাঁদেরকে কর্মস্থল থেকে ছাড়ছেও না।
[আরও পড়ুন: আমফানের পর দীর্ঘদিন পেরলেও স্বাভাবিক হয়নি বিদ্যুৎ পরিষেবা, ক্ষোভে ফুঁসছে দেগঙ্গাবাসী]
এই নিয়ে তিনটি শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেন এল পুরুলিয়ায়। শুক্রবার সন্ধেয় রাজস্থানের কোটা থেকে একটি ট্রেন পৌঁছয় আদ্রায়। সেখানে বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার মোট ৩০০ শ্রমিককে নামিয়ে পরবর্তী গন্তব্যে রওনা হবে ট্রেনটি। শ্রমিকরা ঘরে ফিরে স্বস্তি পেলেও সংক্রমণের আতঙ্কে কাঁটা এলাকাবাসী। যদিও বিধি মোতাবেক পুরুলিয়া স্টেশনে প্রত্যেকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে সরকারি বাসে নিজ নিজ থানা এলাকায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। সেখানে আরও এক দফা স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর তাঁদেরকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন করা হয়।
ছবি: সুনীতা সিং
[আরও পড়ুন: ট্রাক্টর চালক থেকে জেএমবি জঙ্গি! শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেনেই মুর্শিদাবাদ ফিরেছিল ধৃত আবদুল করিম]
The post ‘সিদ্ধ ভাত খেতে হলেও ভিটে ছাড়ব না’, ঘরে ফিরে প্রতিজ্ঞা পুরুলিয়ার পরিযায়ী শ্রমিকদের appeared first on Sangbad Pratidin.