সামনেই 'আলাপ' রিলিজ। ফের মিমি-আবির জুটিকে পাবেন দর্শকরা। ছবি রিলিজের প্রাক্কালে সংবাদ প্রতিদিন-এর মুখোমুখি দুই টলিউড তারকা। শুনলেন শম্পালী মৌলিক।
‘আলাপ’-এর ট্রেলারের ফিডব্যাক কেমন? ২৬ এপ্রিল ছবি মুক্তি।
মিমি: আমি কোনওদিনই সেভাবে ট্রেলারের ফিডব্যাক নিই না। কারণ, আমার মনে হয় যদি কারও ভালো লাগে সে সরাসরি আমাকে মেসেজ করবে। আর এখন তো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম আছে, সবাই নিজে থেকে বলবে। আমার মা সবসময় বলেন, নিজে যাকে বড় বলে, বড় সেই নয়। মানুষের ভালো লাগলে, মানুষই তোমাকে বলবে।
আবির : আমাদের ইন্ডাস্ট্রির দু-তিনজন পরিচালক আমাকে ফোন করেছেন। আমি কিন্তু তাঁদের ট্রেলার পাঠাইনি, নিজেরাই কল করেছেন। আর দর্শকের কথা যদি বলি, সোশ্যাল মিডিয়ার কমেন্ট সেকশন যতটা পারি এড়িয়ে চলি। কারণ, মাথার সুস্থতা খুব প্রয়োজন। যেদিন ট্রেলার লঞ্চ হল, ইন জেনারেল অনেকে বলেছেন, যে খুব মিষ্টি লাগছে। এই সুদিং ব্যাপারটা কমিউনিকেটেড হয়েছে মনে হয়।
ট্রেলার দেখেই বোঝা যায় ছবিটা রোমান্টিক, কিছুটা ফান এলিমেন্টও রয়েছে। আপনাদের কেমিস্ট্রি তো জমে ক্ষীর। কী বলবেন?
মিমি : টাচ উড! তোমরা যখন বলছ, তোমরা দর্শক তেমনই হবে। আমরা চেষ্টা করব অভিনেতা হিসাবে মানুষের হৃদয়ে পৌঁছতে।
আবির : অফস্ক্রিন আমরা একে অপরকে বহুদিন ধরে চিনি। কাজও করেছি কিন্তু নায়ক-নায়িকা হতে প্রায় ১২ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। ‘রক্তবীজ’-এ এসে হল। মানে আমরা গ্র্যাজুয়ালি এগোচ্ছি। মানুষের মনে হল যে সংযুক্তা এবং পঙ্কজ সিনহার বোঝাবুঝিটা হল। সেখান থেকে ‘আলাপ’-এ আরেকটু বাড়ছে আলাপটা। এখানে আমরা অদিতি আর পাবলো।
যা মনে হচ্ছে দেখা না হয়েও অদিতি আর পাবলোর জীবনে এত কিছু ঘটছে, সেই এক্সাইটমেন্ট ছবিতে কতটা পাব?
আবির : এটাই আমাদের ছবির মূল জায়গা। সমস্ত সম্পর্ক তো একরকম হয় না। তাও আমরা চেষ্টা করি সম্পর্কগুলোর একটা সংজ্ঞা পেতে। এই ছবির গল্পটা তেমন, যখন দুজনের মধ্যে দেখা প্রায় হচ্ছে না, বা কম হচ্ছে, অথচ ওদের একসঙ্গে যাপন হচ্ছে। ট্রেলার দেখলে বুঝবে। সেটাই ছবির মূল জায়গা।ভাবতে পারেন, আজকের যুগের দুটো ছেলেমেয়ে রুম শেয়ার করে, কিন্তু তাদের দেখা হচ্ছে না কাজের সময় আলাদা বলে!
মিমি : এটা যদি এমনি বসে ভাবো, অসম্ভব মনে হবে। কিন্তু যদি চিত্রনাট্য অনুযায়ী দেখো, বুঝবে এটা হতে বাধ্য। আমি অনেকদিন আগে স্ক্রিপ্টটা শুনেছিলাম, তখন চাকীদাকে বলেছিলাম, এটা হতে পারে না। পরে গল্পটা যেখানে দাঁড়াল, পাবলো যখন ঘরে ফিরে আসে, অদিতির তখন অফিস টাইম। আবার অদিতি যখন ফেরে, পাবলোর অফিস টাইম। কিন্তু পুরো বাড়িটার মধ্যে একটা টাচ রয়ে যায় দুজনেরই। (হাসি) ইট ইজ রোমান্টিক।
প্রথম আলাপে প্রেম কখনও হয়েছে?
মিমি : ইয়েস। ঠিক প্রেম ছিল না কিন্তু ক্রাশ ছিল (জোরে হাসি)।
মনে রেখে দেওয়ার মতো আলাপ?
মিমি : হ্যাপি এন্ডিং নয় তো, তাই এটা মনেই রয়ে গেছে।
আর আবিরের?
আবির : আমি যদি একটু অন্যভাবে ভাবি, আজকের ব্যস্ত জীবনে স্বামী-স্ত্রী বা যারা লিভ ইন করছে, তারাও একসঙ্গে কতটুকু সময় কাটাতে পারে। কাজের ব্যস্ততা কেরিয়ার, দায়িত্বের জন্যই বলব। সেটার মধ্যে দোষ কিছু নেই। এটা কিন্তু হতে পারে, একই বাড়িতে থেকেও কোয়ালিটি টাইম দিতে পারছে না তারা। যেমন ধরো, আমার যেমন শিডিউল, সকালে ঘুম থেকে উঠেই শুটে বেরিয়ে গেলাম হয়তো। বাড়ির কারও সঙ্গেই দেখা হয় না তখন। আমার আর নন্দিনীর যোগাযোগ তখন হোয়াটসঅ্যাপে।
মিমি : আর আজকাল ফোন হয়েছে ‘কাল’। পাঁচটা লোক একসঙ্গে বসে থাকলেও দেখি, পাঁজনেই ফোন দেখছে।
আবির : গল্পের মূল জায়গাটা নতুন কিছু, তা বলছি না। কিন্তু সেটা আমাদের মতো করে বলা হয়েছে। একজন যেমন- কমেন্ট বক্সে লিখেছে, ‘রোববারে কী হয়?’ সে উত্তর ট্রেলারে আছে।
এই ছবিটা কি মানুষের সামনাসামনি বসার আগ্রহ বাড়াতে পারে?
মিমি : হ্যাঁ (হাসি)!
আবির : পাবলো আর অদিতির মধ্যে কিন্তু এমন কথোপকথন আছে। এর বেশি বলব না (হাসি)।
ভোটের মরশুম এবং আইপিএল চলছে। সেখানে কি একটু চিন্তিত দর্শক আসা নিয়ে?
মিমি : আমার মনে হয়, মানুষের যদি সিনেমা দেখার থাকে দেখবে, না দেখার থাকলে দেখবে না। সে আইপিএল, ভোট যাই হোক। ভোট তো প্রার্থী, ক্যাম্পেনার, দলের লোকজন মিলে করছে আর বাকিরা? মানুষ অফিস যাচ্ছে, খাচ্ছে, মল-এ কাতারে কাতারে লোক। তাই বলব, মনে হলে দেখবে।
আবির : সহমত। আমরা প্রোমোশন করে মানুষের ছবি দেখার আগ্রহ বাড়াতে পারি, জোর করতে পারি না। নিশ্চয়ই আইপিএল-এর মারাত্মক জনপ্রিয়তা, তা বলে অন্য জীবন থেমে নেই। ভোটের ক্ষেত্রেও তাই। এসব ভাবলে কোনওদিন ছবি রিলিজ করা যাবে না। মানুষের মনে হলে, সব উপেক্ষা করেও যাবে।
গোয়েন্দা ছবি, থ্রিলারের রমরমার যুগে, প্রেমের ছবি দেখতে মানুষ আগ্রহী হবে?
আবির : এই যে থ্রিলার এবং গোয়েন্দা প্রীতি আছে মানুষের, সেটা কেন সেই আলোচনায় যাচ্ছি না। কিন্তু সেটা আছে। এটা নিয়ে আমার সমস্যা হওয়ার কথা নয়, কারণ আমি সবচেয়ে বেনিফিটেড। তাই বলে কি আমরা অন্য ধরনের কাজ করব না? আমাদের কিন্তু বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে হবে। এত আলোচনা হচ্ছে, ‘চোনা’ পড়ে থাকছে। কোনও আলোকপাত হচ্ছে না। আলোচনা শুধু ভারচুয়াল মিডিয়ায় হচ্ছে। আত্মসমীক্ষার প্রয়োজন। মেকার্স এবং অডিয়েন্স দু-পক্ষকেই ইভলভ করতে হবে। নয়তো সারাজীবন আলোচনা চলবে যে, বাংলা ছবির পাশে কেউ দাঁড়াল না, বসল না। কথা কম, কাজ বেশি চাই।
পুলিশ-গোয়েন্দা আবির, না প্রেমিক আবির কাকে বেশি নম্বর দেবেন?
মিমি : আমার কাছে এই মানুষটা বেশি নম্বর পাবে। আমি আবিরদার প্রায় সব কাজ দেখি। মানুষটাই খুব প্রিয়।
[আরও পড়ুন: বৃদ্ধি অনুষ্ঠানের মাঝেই আড্ডায় রূপাঞ্জনা-রাতুল, সন্ধ্যায় ছাদনাতলায় জুটি]
ইন্ডাস্ট্রিতে ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ বলে সুনাম আবিরের। দাদা হিসাবে আগলে রাখলেন নাকি বকুনিও দিয়েছেন?
আবির : আমি বেশি বকুনি খাই মিমির কাছে। আমিও দিই মাঝে মাঝে। এবং এটাই যেন থাকে, অভিযোগ নেই (হাসি)।
এই বছর আবিরের দারুণ পাইপলাইন। প্রেমেন্দু বিকাশ চাকির ‘আলাপ’-এর পরেই রাজ চক্রবর্তীর ‘বাবলি’...
আবির : না, ‘বাবলি’ আসতে দেরি আছে, হয়তো আগস্টে রিলিজ প্ল্যান হবে। ২০২৩ নিয়েও আমি হ্যাপি। ‘ফাটাফাটি’, ‘কাবুলিওয়ালা’, ‘বিয়ে বিভ্রাট’ করেছি। আর এ বছর ‘বাদামী হায়না’ অনেকের পছন্দ হয়েছে। কিন্তু কম মানুষ হল-এ গেলেন। অনীকদার একটা ছবি কিছুটা হয়ে রয়েছে। ‘বহুরূপী’ শুটিং আপাতত থেমে, পুজো রিলিজ প্ল্যান আর ‘ডিপ ফ্রিজ’, ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’ রেডি, ফেস্টিভ্যালে যাবে।
মিমি সিরিজে (‘যাহা বলিব সত্য বলিব’) সাফল্য পেলেন।
‘তুফান’ করছেন শাকিব খানের সঙ্গে। আর?
মিমি : আরও দুটো জিনিস আছে, কিন্তু এখন বলতে পারব না, সাইন না হওয়া পর্যন্ত (হাসি)।
রাজনীতি থেকে সরে গিয়ে কি ভারমুক্ত লাগছে?
মিমি : একটু তো হয়ই। একটা চাপ তো নিশ্চয়ই ছিল। এবার আর একটু বেশি ছবি করতে চাই, ঘোরার সময় পাব আশা করি।
সহকর্মী সায়নী ঘোষ সম্পর্কে কিছু বলতে চান?
মিমি : আমি জানি শি ইজ ভেরি এফিশিয়েন্ট। সায়নী এটাই করতে চায়। বেশ কিছু দিন ধরেই ও এটা করছে। ও জিতবে আমি বিশ্বাস করি। শি উইল ওয়ার্ক ফর দ্য পিপল। (হাসি)