কৃষ্ণকুমার দাস: নাম না করে যাদবপুরের বিজেপি প্রার্থী অনুপম হাজারাকে ‘এক্সপায়ারি মেডিসিন’ এবং ‘খেলে শরীর খারাপ হবে’ বলে কটাক্ষ করলেন তৃণমূল প্রার্থী মিমি চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, “সবার বাড়িতে ওষুধ থাকে। জ্বর সর্দি কাশির জন্য ওষুধ কিনি। যতক্ষণ ওষুধগুলো ‘এক্সপায়ারি ডেট’ পেরিয়ে না যায় ততক্ষণ ওই ওষুধে উপকার হয়। কিন্তু যেই না মেয়াদ পেরিয়ে যায়, সেই ওই ‘এক্সপায়ারি ডেট’ ওষুধ খেলে শরীর খারাপ হয়।” বুধবার সোনারপুরের কামরাবাদে দলের কর্মীসভায় উপস্থিত হাজার দশেক মানুষকে এরপরই মিমি নিজস্ব স্টাইলে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন, ‘মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ খেলে কী হতে পারে? জনতা সমস্বরে উত্তর দেয়, ‘মৃত্যু হবে, মৃত্যু’। রাজনৈতিক বিতর্ক উসকে দিয়ে এরপরই তৃণমূল পরিবারের সিদ্ধান্তের উল্লেখ করে যাদবপুরের অভিনেত্রী-প্রার্থী বলেন, “আমাদের দলের ‘এক্সপায়ারি ডেট’ পেরনো ফেলে দেওয়া ওষুধগুলো অন্য দলের লোকেরা যদি খায় তবে কী হবে? শরীর খারাপ হবে।” আসলে মেয়াদ পেরনো ওষুধ ‘অনুপম-সৌমিত্র’রা যে বিজেপিকে খারাপ ফল দেবে, গোহারা হবে তা স্পষ্ট করে দিয়েছে তৃণমূল।
[আরও পড়ুন: ত্রিনয়নী চিহ্নে সুশান্ত পালকে ভোট দিন! শহরে আজব দেওয়াল লিখন]
নাম না করে বিজেপিকে মিমির এই ‘মেয়াদ উত্তীর্ণ ফেলে দেওয়া ওষুধ’ বলে আক্রমণ যে শুধু তাঁর বিপরীতে প্রার্থী হওয়া অনুপম হাজরা নয়, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। কারণ, এবছর তৃণমূল যাদের টিকিট দেবে না (মেয়াদ উত্তীর্ণ ফেলে দেওয়া) বলে কার্যত আগেই সিদ্ধান্ত নেয় সেই সৌমিত্র খাঁ, অনুপম হাজরাদের এবছর সংসদীয় ভোটে প্রার্থী করেছে বিজেপি। অনুপম অবশ্য নিজের কেন্দ্র বোলপুরে প্রার্থী হতে চাননি। চার জেলা টপকে এসে যাদবপুরে পদ্মফুলের প্রার্থী হয়ে প্রচারে নেমেছেন। নাম না করে মিমির এই কটাক্ষ নিয়ে মোবাইল বন্ধ থাকায় অনুপমের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। এদিন সিপিএমকে আক্রমণ করলেও বামপ্রার্থী বিকাশ ভট্টাচার্য নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি তিনি।
ঘড়ির কাটা ধরে বিকেল চারটেয় কামরাবাদে সোনারপুর উত্তর কেন্দ্রের ভিড় উপচে পড়া কর্মীসভায় পৌঁছান অভিনেত্রী-প্রার্থী। কমবয়সি ও মহিলাদের হাজিরা ছিল চোখে পড়ার মতো। ছিলেন সাংসদ শুভাশিস চক্রবর্তী, বিধায়ক ফিরদৌসি বেগম। মাত্র দশদিন আগে রাজনীতির ক্রিজে নামলেও এদিন বিরোধীদের ফুলটস বলে একের পর এক ছক্কা হাকিয়েছেন অভিনেত্রী প্রার্থী। অভিনেত্রী প্রার্থী নিয়ে বিরোধীদের কুৎসার জবাব দিয়েছেন পরিশ্রমের তথ্য তুলে কড়া ভাষায় মিমি। বলেছেন, “অভিনেত্রী হয়ে জন্মায়নি। উত্তরবঙ্গের পঞ্চায়েত এলাকায় জন্মেছি। টানা ৪০-৫০ ঘণ্টা শুটিং করে, রোদে পুড়ে, জলে ভিজে কাজ করার পর সিনেমা হিট হওয়ায় মানুষ ভালবেসেছে। যতটুকু যা হয়েছি তার পুরোটাই মানুষরূপী ভগবানের আর্শিবাদ পেয়ে।”
এরপরই তাঁর সালোয়ার-কামিজ পরে প্রচারে আসা নিয়ে বিরোধীদের কটাক্ষ নিয়ে পালটা তোপ দাগেন যাদবপুরের অভিনেত্রী-প্রার্থী। বলেন, “সালোয়ার পরলে ভাল কাজ করব না, শাড়ি পরলে কি বেশি ভাল কাজ হবে? না কি জিনস পরলে সব পণ্ড হবে? শাড়ি পরে এসে ভিড়ের চাপে যদি পড়ে যাই, তখন কে কাকে সামলাবে? আসলে বিরোধীরা ভোটের আগেই হেরে গিয়েছেন, ভয় পেয়েছেন বলে শাড়ি-সালোয়ার নিয়ে কুৎসা করছেন। কিন্তু আমি নিশ্চিত, মানুষের আর্শিবাদ-ভালবাসা আমাকে জোড়া ফুল প্রতীকে সংসদে পৌঁছে দেবেই দেবে।”
[আরও পড়ুন: ভগ্ন সংগঠনেও চমক কংগ্রেসের, দক্ষিণ কলকাতায় প্রার্থী লন্ডন ফেরত ব্যবসায়ী]
সভায় গাড়ি থেকে নামতেই মিমিকে স্বচক্ষে এক ঝলক দেখার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েন উৎসুক জনতা। মিমিও জনতার কাছে চলে যান। শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় শিশুদের গাল টিপে আদরও করেন। কচিকাঁচাদের আবদার মেটাতে মঞ্চে ডেকে ক্ষুদেদের দেদার অটোগ্রাফ বিলিয়ে দেন।
The post ‘মেয়াদ উত্তীর্ণ ফেলে দেওয়া ওষুধ’, অনুপমকে তীব্র কটাক্ষ মিমির appeared first on Sangbad Pratidin.