আড়াই মাস পরও সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে রোজ কিছু না কিছু খবর প্রকাশ্যে আসছে। সিবিআইয়ের পাশাপাশি নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো (NCB), এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টোরেক্ট (ED) মামলার বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখছে। পাশাপাশি চলছে মিডিয়া আর সোশ্যাল মিডিয়া ট্রায়াল। যেখানে কাঠগড়ায় সুশান্তের প্রেমিকা রিয়া চক্রবর্তী। মহিলা বলেই কোণঠাসা রিয়া? কী মনে করছেন টলিউডের তিন নারী মিমি চক্রবর্তী, সুদীপ্তা চক্রবর্তী এবং সোহিনী সরকার? শুনলেন বিদিশা চট্টোপাধ্যায়।
মিমি চক্রবর্তী (Mimi Chakraborty) –
দেশের বিচার-ব্যবস্থার ওপর আমার আস্থা আছে। যতদিন না অভিযুক্ত দোষী সাব্যস্ত হচ্ছে, সেই বিষয়ে কথা বলা উচিত নয়। আমি যে সুশান্তের (Sushant Singh Rajput) মৃত্যুর সব খবর খুব ফলো করছি, এমন নয়। কারণ ঘটনাটাই খুব ডিপ্রেসিং। এবং এই মৃত্যুকে ঘিরে রোজকার যে খবর সেটা থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকছি, কারণ পুরোটাই খুব ডিসটার্বিং এবং মানসিক শান্তি নষ্ট করছে। সুশান্তের মৃত্যুকে ঘিরে যে সাংবাদিকতা হচ্ছে, সেটা কোনও সাংবাদিকতাই নয়। এই ধরনের রিপোর্টিং পদ্ধতিতে আমি বিশ্বাস করি না। এথিক্স কোথায়? মূল্যবোধ কোথায়? আর যে সোশ্যাল মিডিয়া ট্রায়াল চলছে প্রতিদিন, ‘শুনিয়ে ইসনে ক্যায়া কহা, রিয়ানে ক্যায়া কহা…’ আমার মনে হয় রিয়া (Rhea Chakraborty) দোষী হলে শাস্তি পাবে, কিন্তু তার আগে ওঁকে প্রত্যেক দিন, প্রত্যেক মিনিটে এইভাবে কাটাছেঁড়া করে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো অনৈতিক। আর যেভাবে হোয়্যাটস অ্যাপ (Whatsapp) সামনে চলে আসছে– এসব তো তদন্তের স্বার্থে লিগাল ফাইলে থাকার কথা, বাইরে আসবে কেন? এই ডকুমেন্ট তো মিডিয়ার কাছে পৌঁছানোর কথা নয়। আবার একদিকে টুইটে ফিড আসতে দেখলাম, একজন নামকরা টিভি সাংবাদিক তাঁর শোয়ে লোক ডেকে চিৎকার করছেন, অপমান করছেন– এগুলো কী? দেখুন আমি কাউকে সাপোর্ট করছি না, এইটুকুই বলতে চাই, মানুষের মতো ব্যবহার করুন। This social media should stop। ট্রায়াল কোর্টে হোক।
[আরও পড়ুন: স্তন্যপান করানোর দৃশ্য দেখলেও যৌনতা জাগে? মা কালীর ছবি বিকৃতি নিয়ে কটাক্ষ কঙ্গনার]
সুদীপ্তা চক্রবর্তী (Sudipta Chakraborty) –
যখনই কোনও ঘটনা ঘটে মিডিয়া তার নিজের ট্রায়াল শুরু করে। সত্যিটা খুঁজে বের করার তাগিদের সঙ্গে কাগজ বা চ্যানেল চালানোরও তো একটা তাগিদ থাকে, তখনই ইন্টারেস্টটা পালটে-পালটে যায়। এবং সাধারণ মানুষ, সবসময় মিডিয়ার এই ইন্টারেস্ট পয়েন্টগুলো ধরতে পারে না। যারা দর্শক তারা খানিকটা ভিক্টিম হয়, কিন্তু যারা কেসের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত, তাদের উপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে। যখন কোনও ক্রাইম রিপোর্ট করা হয়, যেটুকু ইনফরমেশন ডায়রিতে লেখা হল, সেইটুকুই হল– এরপর যা-যা বক্তব্য সমস্তটা কোর্টে বলতে হবে, ট্রায়াল শুরু হলে। তার আগে বলে কোনও লাভ হয় না, আমি যতদূর জানি। মানুষের ধৈর্য এত কম এবং মিডিয়া তাদের কাগজ এবং চ্যানেল চালানোর এত তাগিদ তারা ওই অপেক্ষাটা করতে রাজি নয়। তাই ক্রমাগত উসকানিটা চলে। এবং মানুষও সকাল-বিকেল নিজেদের নিদান দিয়েই যেতে থাকে। এটা শুধু রিয়ার ব্যাপার নয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটা ঘটে, আমাদের দেশে। এবং আমরা এই ট্রোল, রিটুইট করে গোটা বিষয়টা আরও ঘেঁটে ফেলছি, We should just stop, ignore and wait। কোথায় থামতে হয়, ‘পজ’ নিতে হয় আমরা ভুলে গিয়েছি।
[আরও পড়ুন: রক্ত জোগাড় না হলে বাঁচানো অসম্ভব! থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুর চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন দেব]
সোহিনী সরকার (Sohini Sarkar)-
সোশ্যাল মিডিয়া ফলো করে আমি বুঝেছি, এই ধরনের হাই প্রোফাইল ক্রিমিনাল কেসের ক্ষেত্রে মানুষের মনে একটা প্রচণ্ড কৌতূহল থাকে। এবং আমাদের প্রত্যেকের মধ্যেই একজন সুপ্ত গোয়েন্দা জেগে ওঠে। আমার চারপাশেই দেখলাম, লোকজন সারাক্ষণ নিজেরাই বাড়িতে বসে কেসটা সল্ভ করে ফেলবে এমন হাবভাব। প্রথমে আত্মহত্যা শুনে খুব শক্ড হয়েছিলাম। তারপর আস্তে আস্তে অনেক তথ্য বের হল। এবং এটা সম্ভব হল সোশ্যাল মিডিয়ার জন্যই। জাস্টিস নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় চাপ বাড়াতে, কেসটা CBI-এর হাতে গিয়েছে। এটা ভাল ব্যাপার। এখন তো মনে হচ্ছে, অনেকে ইনভলভ্ড, যেভাবে তথ্য সামনে আসছে। সেখানে শুধুমাত্র একজনকে, সুশান্তের বান্ধবী বলে ভিক্টিমাইজ করে লাভ নেই। এর মধ্যে অনেক স্তর আছে। আর আমরা এটাও জানি, মিডিয়া কীভাবে কোনও গসিপ পেলে বাড়িয়ে বলে। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকেই বলতে পারি। আর এই কেসের ক্ষেত্রে এটা মাত্রাছাড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। রিয়ার চরিত্র, তাঁর পরিবার সব কিছুকে স্ক্রুটিনি করা হচ্ছে। তাহলে সিবিআই কী করবে? ওই ডিপার্টমেন্ট তুলে দিক না কি! সোশ্যাল মিডিয়াই থাকুক, সেখানেই বিচার হোক! মানুষ জাস্টিস চাইতেই পারে, কিন্তু জাস্টিসের নামে ক্রমাগত ব্যক্তিগত জীবনের কাটাছেঁড়া– এটা করার আগে ভাবা উচিত।
The post মহিলা বলেই কি সুশান্ত মামলায় কোণঠাসা রিয়া? মতামত জানালেন মিমি-সুদীপ্তা-সোহিনী appeared first on Sangbad Pratidin.