নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: ‘‘তেলেঙ্গানায় গিয়ে শিখে আসুন। আপনারা সকলে তো যাবেনই, প্রতি মাসে জেলা থেকে পাঁচজন করে নেতাকে পাঠান তেলেঙ্গানায়, তাঁরাও শিখে আসুন।” বঙ্গ বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীদের এমনটাই নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। রাজধানী দিল্লিতে দু’-দিনের বিজেপি জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে (BJP National Executive Meet) বাংলা নিয়ে একাধিকবার মুখ খুলেছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই বৈঠকেই মোদি তেলঙ্গানায় বিজেপি রাজ্য সভাপতি বান্দি সঞ্জয় কুমারের কাজের ভূয়সী প্রশংসা করে বাংলার নেতাদের সেখানে গিয়ে কীভাবে বিরোধী হিসেবে ভূমিকা পালন করতে হবে, জনসংযোগ করতে হবে তা শিখে আসতে বলেন।
শুধু বঙ্গ বিজেপির (BJP) প্রথম সারির নেতারই নন, রাজ্যের সমস্ত জেলা থেকে প্রতি মাসে পাঁচজন করে তেলেঙ্গানায় পাঠানো এবং সেখানে কিভাবে কাজ চলছে তা হাতেকলমে শিখে আসার কথাও বলেছেন মোদি (PM Narendra Modi)। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ তাৎপর্যপূর্ণ। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জর্জরিত বঙ্গ বিজেপি নেতারা যে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে জনসংযোগ করতে পারছে না, এমন কোনও কর্মসূচি পালন করতে পারছে না যাতে মানুষের মনে দাগ কাটতে পারে, সেকথা ভালই বুঝতে পারছেন মোদি-সহ কেন্দ্রীয় নেতারা। তাই কর্মসমিতির বৈঠকে ঝিমিয়ে পড়া বঙ্গ বিজেপিকে উৎসাহ দিতে একাধিকবার বাংলার কথা উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাদের পাশে রয়েছে, সেই বার্তাও দিতে শোনা গিয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে। কিন্তু তাতেও যে কাজ হবে না তা বুঝতে পেরেই বঙ্গ বিজেপির নেতাদের তেলঙ্গানায় পাঠ নিতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। প্রসঙ্গত, বাংলার নেতাদের পাশাপাশি মোদি তামিলনাডুর দলীয় নেতাদেরও তেলেঙ্গানায় গিয়ে পাঠ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
[আরও পড়ুন: খোদ দিল্লি মহিলা কমিশনের প্রধানের শ্লীলতাহানি, গাড়িতে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে গেল মদ্যপ]
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পরেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে বঙ্গ বিজেপির অন্দরে। মোদির নির্দেশ যে তাদের অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে সেকথা ভালই বুঝতে পারছেন তাঁরাও। সুকান্ত, শুভেন্দুরা কর্মসমিতির বৈঠক সেরে কলকাতা ফেরার পরে দলের অন্যান্যদের সঙ্গে এনিয়ে একপ্রস্থ আলোচনাও সেরে ফেলেছেন বলেই সূত্রের খবর। বঙ্গ বিজেপি থেকে কবে, কে কে তেলঙ্গানা (Telengana) যাবেন সেই তালিকা তৈরি নিয়ে প্রাথমিক চিন্তভাবনাও শুরু হয়ে গিয়েছে। দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার বঙ্গ সফর শেষ হলেই বঙ্গ বিজেপি নেতাদের তেলেঙ্গানা সফরের হিড়িক পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
সুকান্ত মজুমদারকে ফোনে এ বিষয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বঙ্গ বিজেপির এক প্রথম সারির নেতা স্বীকার করে নিয়েছেন যে তাঁদের তেলেঙ্গানায় যেতে বলা হয়েছে। তিনি অবশ্য একথা মানতে নারাজ যে তাঁরা কাজ পারছেন না বলে প্রধানমন্ত্রী তেলেঙ্গানায় গিয়ে শিখে আসতে বলেছেন।
[আরও পড়ুন: ‘পদ্মে ভোট দিন, চোরদের জেলে ভরব’, বাংলায় এসে শুভেন্দুর সুরে সুর মেলালেন নাড্ডা]
এ প্রসঙ্গে তাঁর দাবি, “প্রধানমন্ত্রী যখন বলেছেন তখন আমাদের তেলেঙ্গানায় যেতেই হবে। কিন্তু আমারা পারছি না বলে শিখে আসতে হবে তেমনটা বলেননি। সেটা তো বাংলায় আমাদের বিধায়কদের সংখ্যা, সাংসদের সংখ্যা কত আর তেলঙ্গানায় কত, সেই হিসেব দেখলেই বুঝতে পারবেন। তেলেঙ্গানায় দল ভাল কাজ করছে, সেটাই উল্লেখ করে তিনি সম্ভাবনাময় রাজ্যগুলির নেতাদের সেখানে যেতে বলেছেন। বাংলায় বিজেপির ভাল জায়গায় যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাই তিনি আরও ভাল করে সেই কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন।”