মৈনাক মণ্ডল: ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে মোদিই ‘ফেভারিট’৷ চলতি হাওয়া বজায় থাকলে মোদিই হবেন ফের প্রধানমন্ত্রী৷ ভারত সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ মার্কিন অধ্যাপক, গবেষকরা এই মত প্রকাশ করেছেন৷ কী চোখে দেখছেন তাঁরা মোদির এই সাফল্যকে? তাঁদের মতে, বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারত৷ সদ্য সমাপ্ত পাঁচ রাজ্যের ভোট, যাকে মিনি লোকসভা ভোট বা লোকসভা ভোটের সেমিফাইনাল বলে চিহ্নিত করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম তাতে আশাতীত সাফল্য পেয়েছে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি৷ সদস্য সংখ্যা, কার্যালয় ও নেটওয়ার্কের নিরিখে বিজেপি এখন বিশ্বের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল৷ সেই দলের অবিসংবাদিত নেতা হলেন নরেন্দ্র মোদি৷ ফ্যান ফলোয়ারের নিরিখে মোদি এখন বিশ্বের এক নম্বর নেতা৷ টুইটার, ফেসবুকে, ইনস্টাগ্রামে মোদির জনপ্রিয়তা ক্রমবর্ধমান৷ মোদির জনপ্রিয়তা অন্য রাষ্ট্রপ্রধানদের থেকে বেশি৷ ভ্লাদিমির পুতিন, ডোনাল্ড ট্রাম্প, ওবামা, শি জিনপিং, অ্যাঞ্জেলা মর্কেল, শিনজো আবে, টেরেসো মে সবাইকে পিছনে ফেলে দিয়েছেন ‘অচ্ছে দিন’ -এর রূপকার৷ কিন্তু এই ঘটনা এক দিনে ঘটেনি৷ মোদির কথা, ব্যবহার ও কাজে প্রভাবিত হয়েছেন তাঁর বিরোধীরাও৷ সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মোদি৷
Let us collectively create the India of our dreams by 2022, when we mark 75 years of independence. #IAmNewIndia pic.twitter.com/BzgGyW4NEH
— Narendra Modi (@narendramodi) March 12, 2017
সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করেছেন, নোট বাতিলের ফলে কালো টাকা অনেকটাই ধ্বংস করা গিয়েছে৷ কালো টাকার উৎস ও কালো টাকা সঞ্চয়ের প্রবণতা নষ্ট করতে মোদি সফল হয়েছেন৷ তাই এসবের লাগাতার বিরোধিতা করা সত্ত্বেও মোদি বিরোধীরা সফল হননি৷ মোদি ভুল করেছেন, এটা মানুষকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছেন মোদি বিরোধীরা৷ সবচেয়ে বড় কথা হল, প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসার উপযুক্ত মোদির বিকল্প কোনও বিরোধী নেতা-নেত্রী এই মুহূর্তে ভারতে নেই৷ বা থাকলেও তাঁর সেই সর্বভারতীয় গ্রহণযোগ্যতা নেই৷ ফলে মোদির সামনে ফাঁকা মাঠ৷ তার উপর তাঁর রয়েছে বিশ্বস্ত মন্ত্রিসভা এবং এবং রেজিমেন্টেড দলের সমর্থন৷ ফলে আর কী চাই? এমনটাই মত জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ের অধ্যাপক অ্যাডাম জিগফিল্ডের৷ তাঁর মতে, ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের ফল যে কোনও অস্বাভাবিক ঘটনা ছিল না বা কোনও ‘ফ্লুক’ ছিল না এবারের পাঁচ রাজ্যের ভোটে বিজেপির সাফল্য সেকথাই প্রমাণ করছে৷ আবার পাঞ্জাবে অপশাসন, দুর্নীতি-সহ যেসব কারণে বিজেপি হেরেছে সেই পাঞ্জাবেও বিগত লোকসভা ভোটে খুব খারাপ ফল করেছিল বিজেপি৷ অমৃতসর লোকসভা আসনে হেরেছিলেন অরুণ জেটলি৷ ফলে পাঞ্জাবে এবার বিজেপির ব্যর্থতা এবং বাকি চার রাজ্যে বিজেপির সাফল্য সেই এক সূত্রেই বাঁধা৷ তা হল, ভারতীয় জনমানসের সঠিক প্রতিফলন ঘটেছে সদ্য সমাপ্ত পাঁচ রাজ্যের ভোটে৷ পাঞ্জাবে অনেক কারণে হেরেছে বিজেপি৷ সেটা যেমন সঠিক এবং স্বাভাবিক তেমনি বাকি ভারতে বিজেপির অবিশ্ব্বাস্য সাফল্য সঠিক এবং স্বাভাবিক ঘটনা৷
Foundations of a New India have been laid. Each & every Indian is powering this remarkable transformation. #IAmNewIndia pic.twitter.com/LjRGTOCo96
— Narendra Modi (@narendramodi) March 12, 2017
ওড়িশার ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ভোট, অসমের বিধানসভা ভোট, মুম্বই ও মহারাষ্ট্রের পুরসভা ভোটে নজিরবিহীন সাফল্য পেয়েছে গেরুয়া শিবির৷ সাফল্যের কৃতিত্ব নিয়ে লড়াই বেধেছে শিবসেনা ও তার একদা জোট সঙ্গী বিজেপির মধ্যে৷ এই ভোটগুলিতে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বিরোধীদের৷ এর কৃতিত্ব যতটা মোদির, কৃতিত্ব যতখানি বিজেপি ও আরএসএসের থিংক ট্যাঙ্কের, ব্যর্থতার দায় ততটাই বিরোধী দলগুলির৷ তারা ভারতে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে৷ কারণ পারিবারিক শাসন, বংশ পরম্পরায় মুনাফার রাজনীতি দেখে ভারতের মানুষ ক্লান্ত৷ তাই মোদি অনেক কারণেই তাদের কাছে ‘উন্নততর বিকল্প ব্যক্তি’৷ আমেরিকান এন্টারপ্রাইস ইনস্টিটিউটের রেসিডেন্ট ফেলো সদানন্দ ধুমে জানিয়েছেন, ২০১৯ সালের আসন্ন্ লোকসভা ভোটে অভাবনীয় কিছু নেতিবাচক ঘটনা না ঘটলে মোদির প্রধানমন্ত্রিত্ব পাওয়া প্রায় পাকা৷ এক্ষেত্রে বিজেপি হয়তো আরও বেশি আসন নিয়ে ক্ষমতায় আসতে চলেছে৷ এছাড়া উত্তরপ্রদেশে তিনশোর বেশি বিধায়ক পাওয়ায় রাজ্যসভায় আরও বেশি সাংসদ পাবে বিজেপি৷ ফলে কোনও বিল পাস করাতে অসুবিধেই হবে না মোদির৷
सरकार बनती है बहुमत से, पर चलती है सर्वमत से। भाजपा की सारी सरकारें सबकी हैं। pic.twitter.com/hmukKvV2hY
— Narendra Modi (@narendramodi) March 12, 2017
ভারতের ঘরোয়া রাজনীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল আরেক মার্কিন বিশেষজ্ঞ জর্জ টাউন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ইরফান নুরউদ্দিন বলেছেন, প্রতিটি রাজ্যের জেলা ও বুথভিত্তিক সুন্দরভাবে প্রচার চালাচ্ছেন বিজেপি কর্মী ও সমর্থকরা৷ কে প্রার্থী তা তাঁদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়৷ সঙ্ঘ পরিবারের কর্মীদের একটাই লক্ষ্য, কমল (পদ্ম) চিহ্নে দাঁড়ানো সব প্রার্থীকে জেতাতেই হবে৷ তাই তেল খাওয়া মেশিনের মতো বিরতিহীনভাবে তাঁদের প্রচার চলছে৷ কেনও ছুটি নেই৷ মোদির কেন্দ্রীয় প্রকল্প ও কর্মসূচিগুলির সাফল্য নিয়ে জোরালো প্রচার চালাচ্ছে আরএসএস ও বিজেপি৷ এর প্রভাব পড়ছে ভোটারদের মনে৷ বিরোধীরা এখানে চূড়ান্ত ব্যর্থ৷ সবচেয়ে বড় কথা, সাম্প্রদায়িক ও মন্দির রাজনীতি থেকে বিজেপি এখন নিজেকে অনেকটা দূরে সরিয়ে নেওয়ায় উদার, শিক্ষিত মধ্যবিত্ত হিন্দু সম্প্রদায়ের এবং সংখ্যালঘু মুসলিম ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের একটা বড় অংশের ভোট কাটছে৷ এর একক কৃতিত্ব মোদির প্রাপ্য৷ তিনি এখানে অটলবিহারি বাজপেয়ীর মতাদর্শ অনুসরণ করছেন৷ বিজেপির এই কৌশল ধরতে ও তার পাল্টা ব্যবস্হা নিতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন বিরোধীরা৷ ফলে আসন্ন লোকসভা ভোটে বিজেপি ও মোদির ফের ক্ষমতায় আসা প্রায় নিশ্চিত, এমনতাই জানাচ্ছেন মার্কিন বিশেষজ্ঞরা৷
The post ২০১৯-এও অটুট থাকবে মোদি-রাজ, মত মার্কিন বিশেষজ্ঞদের appeared first on Sangbad Pratidin.