সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বাঙালির সেরা উৎসব তো শুধু উৎসবই নয়, এ এক আবেগ, জীবনের স্পন্দন। মানবতার সঙ্গে এই উৎসবের অঙ্গাঙ্গী সম্পর্কের কথা জানে গোটা বিশ্ব। ইউনেস্কো দুর্গোৎসবকে (Durga Puja) ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজের তকমা দিয়েছে। আর সেই স্বীকৃতির আনন্দে এবার পুজোর আমেজ চলে এসেছিল একমাস আগেই। উচ্ছ্বাস যেন এবার বাঁধভাঙা। কিন্তু বাংলার আঙিনা থেকে বিশ্বের দুয়ারে দুর্গোৎসবের এই স্বীকৃতির নেপথ্যে যিনি রয়েছেন, সেই ইতিহাস গবেষক তপতী গুহঠাকুরতা (Tapati Guha Thakurata) কিন্তু এই আনন্দে গা ভাসাতে পারছেন না। অভিমান কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না। সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম 'দ্য ওয়্যার'কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তপতীদেবী আক্ষেপ করে বলছেন, ''আমাকে এবং আমার টিমকে ধন্যবাদ জানানোর মতো ন্যূনতম সৌজন্যটুকুও দেখায়নি মোদি সরকার (Modi Govt)।''
ইউনেস্কোর (UNESCO) দরবারে দুর্গাপুজোর এই স্বীকৃতি আদায়ের লড়াই কিন্তু দীর্ঘদিনের। মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে যায়। বার দুই সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। তারপর সংস্কৃতি মন্ত্রক ইতিহাসবিদ তপতী গুহঠাকুরতার দ্বারস্থ হয়। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষণা করা, কৃতী অধ্যাপক তপতী গুহঠাকুরতা কলকাতাক সেন্টার ফর সোশ্যাল স্টাডিজে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। কলকাতার ঐতিহ্য, ইতিহাস ছিল তাঁর বিষয়। ফলে খুব কাছ থেকে তিনি দেখেছেন যে কীভাবে একটা জাতির আবেগের সঙ্গে মিলেমিশে গিয়েছে উৎসব। নিজের সেই বোঝা ইউনেস্কো কর্তাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা তাঁর কাছে কম চ্যালেঞ্জের ছিল না।
[আরও পড়ুন: প্রবল ঝড়বৃষ্টিতে অষ্টমীর সকালে ভেঙে পড়ল পুজোমণ্ডপ, কেঁদে ফেললেন রাজগঞ্জের বিধায়ক]
সংস্কৃতি মন্ত্রকের (Ministry of Culture) প্রস্তাব পেয়ে নিজের টিম নিয়ে গবেষণার কাজ শুরু করে দেন তপতী গুহঠাকুরতা। সেটা ২০১৮ সাল। দীর্ঘ সাত মাস পর তাঁরা নিজেদের গবেষণা তথ্য আকারে পেশ করে ইউনেস্কোর কাছে। সেসব দেখেশুনে ২০২১ সালে ইউনেস্কো জানায়, দুর্গাপুজোর সঙ্গে বাঙালির এবং মানবতার গভীরতা অনুধাবন করে এই পুজোকে ঐতিহ্যের তকমা দেওয়া হচ্ছে। আর এবছর, ২০২২ সালে বাংলার পুজোকে বিশ্বজনীন করে তুলতে বিশেষ উদ্যোগ নিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)।
[আরও পড়ুন: টুইন টাওয়ার থেকে শিক্ষা, ভিড়ে বিপদ এড়াতে সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যারে বন্ধ লাইট অ্যান্ড সাউন্ড]
এ নিয়ে তরজা শুরু হয়ে গিয়েছিল রাজনৈতিক মহলে। কেন্দ্রের দাবি, এই কৃতিত্ব তাদেরই। সংস্কৃতি মন্ত্রকই উদ্যোগী হয়ে এ বিষয়ে তৎপর হয়েছে, তার ফল এই স্বীকৃতি। এতে রাজ্য সরকারের কোনও ভূমিকাই নেই। উলটে মুখ্যমন্ত্রী এখন কৃতিত্বের ভাগীদার হতে চাইছেন বলেও কটাক্ষ শোনা গিয়েছিল কোনও কোনও বিজেপি নেতার গলায়। কিন্তু যাঁর নিরলস পরিশ্রমের ফলে এই সাফল্য এল, সেই তপতী গুহঠাকুরতার প্রতিক্রিয়া জানতে আগ্রহী ছিল ওয়াকিবহাল মহল। পয়লা সেপ্টেম্বর কলকাতার রেড রোডে ইউনেস্কোকে ধন্যবাদজ্ঞাপন অনুষ্ঠানের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা গিয়েছিল তপতীদেবীকে। তাঁকে উত্তরীয়, ডোকরার বড় দুর্গামূর্তি দিয়ে বিশেষ সম্মানে ভূষিত করা হয়েছিল।
মোদি সরকারের তরফে এমন কিছু তো দূর অস্ত, ন্যূনতম ধন্যবাদও জানানো হয়নি তপতীদেবীকে। 'দ্য ওয়্যার'কে তিনি জানালেন, ''এসব নিয়ে রাজনৈতিক তরজা চলছে, তাতে আমি অবাক হইনি। মনে রাখবেন, সমস্ত রাজনীতিকের সাফল্যের পিছনেই ভাল গবেষণার কাজ ও মেধাবীদের ভূমিকা থাকে। কিন্তু এটাই দুর্ভাগ্যজনক যে এত বড় একটা সাফল্যের পরও সংস্কৃতি মন্ত্রকের তরফে কেউ আমাদের একটা ধন্যবাদসূচক বার্তাও পাঠাল না।'' আসলে সাফল্যের আলো এতটাই চড়া যে মাঝেমধ্যে সেই আলোর নিচে জ্বলতে থাকা টিমটিমে প্রদীপ নজরেই পড়ে না। অথচ আলোর উৎস কিন্তু জানে সকলেই। মোদি সরকারের ভূমিকাও তেমনই এক্ষেত্রে। সাফল্যের আলোয় নিজেদের মেলে ধরতে গিয়ে হয়ত আঁধারে ঠেলে দিয়েছেন মূল উৎসকে। এভাবেই বরাবর তপতীদেবীরা ব্রাত্য থেকে যান।